রাজশাহী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


দেশী ছাগল মোটাতাজাকরণ খামার তৈরির কৌশল


প্রকাশিত:
৩১ আগস্ট ২০২২ ০৪:৩৭

আপডেট:
৩১ আগস্ট ২০২২ ০৪:৪১

সংগৃহিত

লাভজনক দেশী বা ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের খামার স্থাপনের চেষ্টা করেন অনেকেই। কিন্তু উৎপাদন বৈশিষ্ট্য উন্নত গুনাগুনসম্পন্ন ছাগী ও পাঁঠা সংগ্রহসহ বিভিন্ন কৌশল জানা না থাকায় তা আর হয়ে উঠে না। তাই দেশী ছাগল বা ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল মোটাতাজাকরণ খামার তৈরির কৌশল নিয়ে আজকের আলোচনা।

প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য/সংক্ষিপ্ত বিবরণ
বাংলাদেশে বর্তমানে বাণিজ্যিক ছাগল প্রজনন খামার না থাকায় মাঠ পর্যায় হতে ছাগল সংগ্রহ করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে ব্যাক বেঙ্গল ছাগল, বাচ্চা ও দুধ উৎপাদন ক্ষমতার ভিনড়বতা বিদ্যমান। উক্ত ভিনড়বতা বংশ অথবা/এবং পরিবেশগত কারণ বা স্বতন্ত্র উৎপাদন দক্ষতার জন্য হতে পারে। সে প্রেক্ষাপটে ব্যাক বেঙ্গল ছাগল খামার প্রতিষ্ঠার জন্য বংশ বিবরণের ভিত্তিতে বাছাই ও নিজস্ব উৎপাদন/পূনরুৎপাদন বৈশিষ্ট্যাবলীর ভিত্তিতে বাছাই বিবেচনায় রেখে ছাগল নির্বাচন করা যেতে পারে।

বংশ বিবরণের ভিত্তিতে বাছাই
মাঠ পর্যায়ে বংশ বিবরণ পাওয়া দুরূহ। কারণ খামারীরা ছাগলের বংশ বিবরণ লিখিত আকারে সংরক্ষণ করেন না। তবে তাঁদেও সাথে আলোচনা করে একটি ছাগী বা পাঁঠার বংশের উৎপাদন ও পূনরুৎপাদন দক্ষতা সম্বন্ধে ধারনা নেয়া যেতে পারে। ছাগীর মা/দাদী/নানীর প্রতিবারে বাচ্চার সংখ্যা, দৈনিক দুধ উৎপাদন, বয়োপ্রাপ্তির বয়স, বাচ্চার জন্মের ওজন ইত্যাদি সংগ্রহ করা সম্ভব। পাঁঠা নির্বাচনের ক্ষেত্রে পাঁঠার মা/দাদী/নানীর তথ্যাবলীর উপর নির্ভর করা যেতে পারে। একটি উনড়বত বৱ্যাক বেঙ্গল ছাগী/পাঁঠার বংশীয় গুনাগুন নিমড়বরূপ হওয়া প্রয়োজন

নিজস্ব উৎপাদন/পূনরুৎপাদন বৈশিষ্ট্যাবলীর ভিত্তিতে বাছাই
এ ক্ষেত্রে দু’টি বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন। ছাগী ও পাঁঠার উৎপাদন এবং পূনরুৎপাদন বৈশিষ্ট্যাবলী এবং এদের দৈহিক
বৈশিষ্ট্যাবলী । পাঁঠা নির্বাচনের ক্ষেত্রে উৎপাদন এবং পূনরুৎপাদন বৈশিষ্ট্যাবলী তার
মা/দাদী/নানীর গুনাগুনের উপর নির্ভর করবে। তবে পাঁঠার দৈহিক বৈশিষ্ট্যাবলীর বিবেচনায় নির্বাচন করা যেতে পারে। ছাগী নির্বাচনে উৎপাদন ও পূনরুৎপাদন বৈশিষ্ট্যাবলী নিমড়বরূপ হবে।


সারণী ১ঃ ছাগীর উৎপাদন/ পূনরুৎপাদন বৈশিষ্ট্যাবলী
উৎপাদন ও পূনরুৎপাদন গুনাগুন
ঘন ঘন বাচ্চা দেওয়ার ক্ষমতা : বছরে কমপক্ষে ২ বার এবং প্রতিবার কমপক্ষে ২টি বাচ্চা
ন্যূনতম দৈনিক দুধ উৎপাদন : ৬০০ মি.লি
প্রতিটি বাচ্চার জন্ম ওজন :১ কেজি
বয়োঃপ্রাপ্তির বয়স : ৪.৫ – ৫ মাস
বয়োঃপ্রাপ্তির ওজন: ১০ কেজি
দুগ্ধ প্রদানকাল: ৩ মাস

ছাগী নির্বাচন
লাভজনক বৱ্যাক বেঙ্গল ছাগল খামার প্রতিষ্ঠার জন্য সারণী-১ এ উলেখিত জাতের ছাগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দৈহিক যে সমস-
গুনাবলী বিবেচনা প্রয়োজন তা নিন্মরূপ। বিভিন্ন বয়সে দৈহিক বৈশিষ্ট্যের তারতম্য হয়। সে কারণে একটি ছাগীর ৬-১২ মাস, ১২-২৪ মাস এবং ২৪ মাসের উর্দ্ধে বয়সের দৈহিক বৈশিষ্ট্যাবলী ভিনড়বভাবে তুলে ধরা হল।

মাথা চওড়া ও ছোট হবে
দৈহিক গঠন: শরীর কৌনিক এবং অপ্রয়োজনীয় পেশীমুক্ত হবে
বুক ও পেট : বুকের ও পেটের বেড় গভীর হবে
পাজরের হাড় : পাজরের হাড় চওড়া এবং দুইটি হাড়ের মাঝখানে কমপক্ষে এক আঙ্গুল ফাঁকা জায়গা থাকবে
ওলান : ওলানের দৈর্ঘ্য এবং প্রস’ সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকবে। বাঁটগুলো হবে আঙ্গুলের মত একই আকারের এবং
সমান-রালভাবে সাজানো। দুধের শিরা উলেৱখযোগ্যভাবে দেখা যাবে
বাহ্যিক অবয়ব : আকর্ষণীয় চেহারা, ছাগী সুলভ আকৃতি, সামঞ্জস্যপূর্ণ ও নিখুঁত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ

পাঁঠা নির্বাচন
লাভজনক বৱ্যাক বেঙ্গল ছাগল খামার প্রতিষ্ঠার জন্য উলেৱখিত জাতের পাঁঠা নির্বাচনের ক্ষেত্রে দৈহিক যে সমস- গুনাবলী বিবেচনাপ্রয়োজন তা নিমড়বরূপ। বিভিনড়ব বয়সে দৈহিক বৈশিষ্ট্যের তারতম্য হয়।

চোখ : পরিষ্কার, বড় ও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সম্পনড়ব হবে
ঘাড় : খাটো ও মোটা থাকবে
বুক : গভীর ও প্রশস- হবে
পিঠ : প্রশস- হবে
লয়েন : প্রশস- ও পুরু এবং রাম্প এর উপরিভাগ সমতল ও লম্বা থাকবে
পা : সোজা, খাটো এবং মোটা হবে। বিশেষ করে পিছনের পাদ্বয় সুঠাম ও শক্তিশালী হবে এবং একটি হতে অন্যটি বেশ পৃথক থাকবে
অন্ডকোষ : শরীরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ঝুলানো থাকবে
বয়স : অধিক বয়স্ক (২ বছর বয়সের বেশী) পাঁঠা নির্বাচন করা যাবে না

ব্যবহারের সম্ভাবনা
সব ঋতুতে এবং সমগ্র বাংলাদেশে ব্যবহার উপযোগী।
প্রযুক্তি ব্যবহারের সতকর্তা/বিশেষ পরামর্শ
শুধুমাত্র উপরোলেখিত বৈশিষ্ট্যাবলীর উপর ভিত্তি করে ছাগী এবং পাঁঠা নির্বাচন করলে একটি খামার লাভবান হবে না। বরং
উনড়বত ছাগল নির্বাচনসহ খাদ্য ব্যবস্থাপনা এবং সর্বোপরি সুষ্ঠু খামার ব্যবস্থাপনা করা হলে লাভজনক খামার প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

দেশী ছাগল মোটাতাজাকরণ খামার তৈরির কৌশল লেখাটি কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে নেওয়া হয়েছে।

সূত্র: এগ্রিকেয়ার২৪.কম

আরপি/ এসএইচ ০৮

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top