রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০


রাজশাহীতে অনলাইনে ১৬২ কোটি টাকার পশু বিক্রি


প্রকাশিত:
১৬ জুলাই ২০২১ ১৮:১৪

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ০৮:০৪

ছবি- সংগৃহীত

আসন্ন কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে রাজশাহীতে অনলাইনে ১৬২ কোটি ২১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯৯ টাকার পশু বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক উত্তম কুমার দাস।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানায়, করোনা সংক্রমণ রোধে জনসমাগম এড়িয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয় ভার্চুয়াল মাধ্যমকে। চালু হয় অনলাইন পশুর হাট। গত বছর তেমন সাড়া না মিললেও এবার জমে উঠেছে অনলাইন পশুর হাট। পাল্লা দিয়ে চলছে প্রচলিত ও অনলাইন পশুর হাট।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত অনলাইনে ২৯ হাজার ৩০০টি গবাদিপশু বিক্রি হয়েছে। এসব পশুর দাম ১৬২ কোটি ২১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯৯ টাকা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ১৪২টি অনলাইন পশুর হাট চালু করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর চেয়েও বেশি পশুর হাট চালু হয়েছে। এর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ১০৯টিরও বেশি। সরকারিভাবে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে আরো ৫টি হাট। এসব হাটে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৬৭৬টি গবাদিপশুর ছবিসহ বিবরণ আপলোড করা হয়েছে বলে জানায় দপ্তর।

এদিকে রাজশাহী অঞ্চলের সবচেয়ে বড় হাট সিটি পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, জমে উঠেছে প্রচলিত পশুর হাট। লকডাউনে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর প্রাণিসম্পদের নির্দেশ বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বসেছে হাট। সিটিহাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু জানান, রোববার ও গত বুধবার মিলিয়ে ৪ হাজার গরু মহিষ বিক্রি হয়েছে।

কথা হয়, মহিষের ছাড়ঘরের দায়িত্বে থাকা ইজারদার আজাদের সাথে। তিনি জানান, অনলাইনে মহিষ কম বিক্রি হচ্ছে। হাটের প্রচুর মহিষের আমদানি। এসময় দুই আড়াই হাজার মহিষ বিক্রি হতো সপ্তাহে। এখন সে পরিমাণ ছয়-সাত’শ তে নেমে এসেছে। আমদানি হলেও ক্রেতা নাই। বাইরের বড়বড় পাইকাররা আসতে পারেননি।

এদিকে গতকাল বুধবার অনলাইন পশুর হাটে বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ১৫০টি কোরবানির পশু। আর প্রচলিত গরুর হাটে রোববার ও বুধবার মিলিয়ে ৪ হাজার পশু বিক্রি হয়েছে। অনলাইনে বিক্রি পশুর দাম ৩১ কোটি ৫৫ লাখ ৫৬ হাজার ৭৬১ টাকা। হাটে পশুর ছবিও তথ্য আপলোড দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল একদিনে আপলোড হয়েছে ৫৭ হাজার ৯৮৯টি পশুর তথ্য। অপরদিকে রাজশাহীর সিটিহাটে গত রোববার বিক্রি হয়েছে ২ হাজার পশু।

জানতে চাইলে অধিদপ্তরের পরিচালক উত্তম কুমার দাস বলেন, অনলাইন হাট বেশ সাড়া ফেলেছে। তবুও ৮০ ভাগ পশু প্রচলিত হাটেই বিক্রি হবে। বাঁকি ২০ ভাগ অনলাইনে। অনলাইন হাটে আমাদের কাছে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গরু-মহিষের তথ্য আপলোড হয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ২৭৩টি পশুর। ছাগল-ভেড়া আপলোড হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৪০৩। মোট আপলোডকৃত পশুর মধ্যে বিক্রি হয়েছে ১৬ হাজার ৯৭৮। গত বুধবার বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৪২৮টি পশু।

তিনি আরো জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহীকে ছাড়িয়ে সবচেয়ে বেশি অনলাইনে পশু বিক্রি হচ্ছে নাটোরে। নাটোরে ভার্চুয়াল পশুর হাট রয়েছে ৬৫১টি। সেসব হাটে এ পর্যন্ত আপলোড হয়েছে ৩৪ হাজার ৩৬০ গরু-মহিষ এবং ৪১ হাজার ২৯২ ছাগল-ভেড়া। এর মধ্যে ৬ হাজার ২১২ গরু-মহিষ এবং ৭ হাজার ৯১৯ ছাগল-ভেড়া বিক্রি হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিক্রি সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাটোরের অনলাইন পশু বিক্রি হয়েছে ৬০ কোটি ৮২ লাখ ২৩ হাজার ২২ টাকার পশু। সাড়া পড়েছে বেশ। গতকাল বুধবার ১ হাজার ৪৭৫টি গরু এবং ১ হাজার ৮৪০টি ছাগল-ভেড়া বিক্রি হয়েছে। যার দাম ১৪ কোটি ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা।

দ্বিতীয় স্থান ধরে রেখেছে জয়পুরহাট জেলা। এ পর্যন্ত জয়পুরহাটে ৩৭ হাজার ৩৫২টি পশু আপলোড হয়েছে। এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ২৬৯টি। লেনদেন হয়েছে ৫৬ কোটি ৬৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা মোট ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৭২ হাজার টাকার ১ হাজার ২২৮ গবাদিপশু বিক্রি হয়েছে জেলায়।

রাজশাহী জেলার মেট্রো ও ৯টি উপজেলায় গত ১ জুন থেকে চালু হয়েছে অনলাইন হাট। রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা মো: ইসমাইল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, ৬৫ হাজার ৯১৬টি পশুর তথ্য আপলোড করা হয়েছে। বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪৮৪টি। লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ৬৮ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা। গত এক দিনে জেলায় ২ কোটি ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ৪৯৯টি পশু বেচাকেনা হয়েছে।

নওগাঁ জেলায় গতকাল বুধবার ১৯৬টি পশু বিক্রি হয়েছে। যার মূল্য ৯৬ লাখ ৯ হাজার টাকা। এই জেলায় আপলোড হওয়া মোট ৩৭ হাজার ৯৫৯ পশুর মধ্যে এ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৯৪৫টি। এতে লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৪০ হাজার ৪০০ টাকা।

একইদিনে পাবনায় ২ কোটি ৮৬ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকায় ৪১৬টি পশু বিক্রি হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় আপলোড হয়েছে ৭৫ হাজার ৬৪৭টি পশু। এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১৫২টি। লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৭৩ লাখ ১১ হাজার ৫০০ টাকা।

গত এক দিনে সিরাজগঞ্জে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকায় ২৫৭টি পশু বিক্রি হয়েছে। এ পর্যন্ত সিরাজগঞ্জে আপলোড হয়েছে ১৮ হাজার ২২৩টি পশু। এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে ২৫৭টি। এতে লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ৯০ লাখ ৮৬ হাজার ৮২৭ টাকা।

মোট ৬৭ হাজার ৮৩৪ টি পশু আপলোড হয়েছে বগুড়ায়। এর মধ্যে ৫ কোটি ৪৭ লাখ ১৭ হাজার ৭৫০ এক হাজার ১৬৪টি পশু। এর মধ্যে গত এক দিনে ৮৬ লাখ ৬১ হাজার ২৫০ টাকায় পশু বিক্রি হয়েছে ২৩১টি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত এক দিনে ৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকায় ৯টি গবাদিপশু বিক্রি হয়েছে। এই জেলায় মোট ১৪ হাজার ৯৩টি পশু আপলোড হয়েছে। এর মধ্যে ১ কোটি ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে ১৭৮টি।

রাজশাহীর খামারি ও কৃষি উদ্যোক্তা আরাফাত রুবেল জানান, অনলাইন মাধ্যম “সওদাগর এগ্রো”তে গরু বিক্রি করছেন তিনি। গত এক সপ্তাহে কোরবানিযোগ্য ৬টি গরু বিক্রি ও চারটি গরুর দরদাম হয়েছে। তবে তিনি ৪ টি গরু ঈদের পরে বিক্রি করবেন। অনলাইনে সবকিছু ঠিক থাকলেও খামার ফাঁকা করবেনা বলে সেগুলো দিতে চান না। নতুন গরু কেনার পরপরই সেগুলো ক্রেতার হাতে তুলে দিতে চান এই উদ্যোক্তা।

রাজশাহী নগরীর আরেক খামারি সুমন জানান, সপুরা এগ্রো নামের অনলাইন মাধ্যম রয়েছে তার। অনলাইনে দেখে ফোনে যোগাযোগ করে অর্ধ শতাধিক গরু-মহিষ বিক্রি করেছেন তিনি। তবে, অনলাইনে প্রতারণার কোন জায়গা রাখেননি তিনি। ঢাকার পাইকারদের সরেজমিনে গরু দেখিয়ে তারপর করেন দরদাম। হাতে তুলে দেন গরু।

উল্লেখ্য, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় এবারের ঈদে মোট কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ১৪ লাখ ৮৮ হাজার ১৬০।ষাঁড় রয়েছে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৯০০ টি, বলদ রয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ১৯০টি। এছাড়া ৮৬ হাজার ৩৫২ গাভি, ২৫ হাজার ২৬১ মহিষ, ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩২ ছাগল এবং ১৪ লাখ ৪০ ভেড়া। ৪৭৮টির মতো রয়েছে অন্যান্য পশু।

আরপি/ এসআই



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top