রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


চারঘাটের গাছে গাছে ঝুলছে পোশাক পরা আম


প্রকাশিত:
২৪ মে ২০২১ ১৫:৫৮

আপডেট:
২৪ মে ২০২১ ১৯:১৭

ফ্রুট ব্যাগিং

গাছে গাছে ঝুলছে ব্যাগ; আর তার মধ্যেই সুরক্ষিত পুষ্ট আকর্ষণীয় রুপালি জাতের আম। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ফ্রুট ব্যাগিং। বাহিরের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড়, বিরুপ আবহাওয়া কিংবা কোন ক্ষতিকারক প্রভাবই এই ব্যাগের মধ্যে প্রবেশ করে আমের কোন প্রকার ক্ষতি করতে পারে না।

তবে যারা প্রথমবার রাজশাহীর চারঘাট আমকুঞ্জে এসেছেন তাদের কাছে আমগাছে বাবুই পাখির বাসা ভেবে ভ্রম হতেই পারে। গাছে গাছে দু’চারটা নয় হাজার হাজার ব্যাগ ঝুলছে। এগুলো হলো ফ্রুট ব্যাগিং।

জানা গেছে, সারাদেশেই আম উৎপাদনকারী উপজেলা হিসেবে পরিচিতি রয়েছে রাজশাহীর চারঘাট। এক সময় কীটনাশক ছাড়া গ্রীষ্মকালীন ফল উৎপাদনের চিন্তা করতে পারতেন না মৌসুমী চাষীরা।

সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রথাগত পরিবর্তন এসেছে ফল উৎপাদনে। উৎপাদিত ফল রপ্তানির চিন্তা মাথায় রেখে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিষমুক্ত ও নিরাপদ ফল উৎপাদনের লক্ষ্যে চিরাচরিত কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে চাষীরা বেছে নিচ্ছেন ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি। এই ফ্রুট ব্যাগিং আম বিদেশেও রপ্তানি হয়।

গত কয়েক বছর ধরে উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক পরামর্শ ও তত্ত্বাবধায়নে উপজেলা জুড়ে শুরু হয় ফলের ব্যাগিং প্রযুক্তির ব্যবহার। এরপর থেকে এ পদ্ধতিতে আম চাষ করা হয়। কীটনাশকের বিরুদ্ধে মানবদেহ ও পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় জনপ্রিয় হচ্ছে দিন দিন।

রাজশাহী চারঘাট উপজেলার ডাকরা গ্রামের বাসিন্দা ছদর উদ্দীন বান্না। এবার তাঁর ১৫ বিঘা জমির বাগানে রয়েছে ফজলি এবং আশ্বিনা জাতের আম। চাষী ছদর উদ্দীনের বাগান ঘুরে সরেজমিন দেখা যায়, বাবুই পাখির বাসার মতো গাছে গাছে বাদামী রং এর কাগজের ব্যাগ ঝুলছে। প্রতিটি গাছের আম কাগজের ব্যাগ দিয়ে মোড়ানো রয়েছে।

তিনি নিরাপদ আম সংরক্ষণের ফ্রুট ব্যাগ প্রযুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে মজা করে বলেন, পোশাক পরেছে তাঁর বাগানের আম। এক-একটা ব্যাগ খুলে দেখান। সতেজ সবুজ ও পরিষ্কার আম। আমের গায়ে দাগ নেই। ধুলা ও পোকামাকড় নেই। নেই রোগবালাই।

ছদর উদ্দীন আরো বলেন, ‘গত বছরে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে বিভিন্ন জাতের আম ফ্রুট ব্যাগিং করে বেশ সফলতা পেয়েছি। সেই অভিজ্ঞতায় এবছর ১৫ বিঘা জমিতে ফজলি ও আশ্বিনা জাতের আম ফ্রুট ব্যাগিং করছি। এই পদ্ধতি ব্যবহার করায় আম বাগানে বর্তমানে আমাকে কোনো বাড়তি কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়নি। ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত আম চাহিদা বেশি থাকায় দেশ ও দেশের বাহিরে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানির লক্ষ্য রয়েছে। এ বছর করোনার কারনে তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সামনে এ প্রক্রিয়ায় অব্যহত রাখা হবে।

তাঁর দাবী, আমগুলি ব্যাগের ভিতরে থাকায় কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে। এই পদ্ধতিতে আম নষ্টও কম হয় এবং উৎপাদিত আম ফলনও বৃদ্ধি পায়। স্বল্প খরচে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির মাধ্যমে মানসম্পন্ন আম উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রত্যাশা করেন তিনি। তার মতো এখন উপজেলার বেশ কিছু আমচাষী ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম সংরক্ষণ করছেন। তবে চাহিদা বাড়ায় ফ্রুট ব্যাগের দাম বেড়ে গেছে।

চারঘাটের বিশিষ্ট আম ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, করোনার কারনে আম বাজারজাত করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। তবে দেশের বাজারের চেয়ে দুশ্চিন্তাটা বেশি বিদেশি বাজার হারানোর। ফ্রুটব্যাগ লাগিয়ে সংরক্ষণ করা আম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। ফ্রুটব্যাগে আম চাষে খরচ বেশি। ফলে চাষিরা ভাল আম উৎপাদন করলেও বিদেশে না পাঠাতে পারলে ন্যায্যমূল্য পাবে না।

চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার বলেন, উপজেলায় দিন দিন ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এই পদ্ধতির ফলে মাছিপোকা আম নষ্ট করতে পারে না। তাছাড়া আম দেখতে সুন্দর এবং ফলনও বৃদ্ধি পায়।

বিষমুক্ত নিরাপদ ফল উৎপাদনে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির প্রসার ঘটাতে উপজেলা কৃষি বিভাগ হতে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

আরপি / এমবি-২


বিষয়: চারঘাট আম


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top