রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০


যে কারণে সানিকে মারধর করেন শাহাদাৎ


প্রকাশিত:
২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৬:১৬

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১১:৫৮

ক্রিকেটার শাহাদত হোসেন

জাতীয় লিগের ম্যাচে সতীর্থ আরাফাত সানির গায়ে হাত তোলার ঘটনায় দুই বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞাসহ পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন শাহাদাত হোসেন। নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বাংলাদেশ দলের এই সিমারকে।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পক্ষ থেকে শাহাদাতের শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। খুলনায় জাতীয় লিগের শেষ রাউন্ডের ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে, গত রোববার সতীর্থ অফ স্পিনার আরাফাত সানি জুনিয়রের গায়ে হাত তোলেন ৩৩ বছর বয়সী এই পেসার। খুলনায় জাতীয় লিগের শেষ রাউন্ডের ম্যাচ ছিল রোববার। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটিতে খুলনার বিপক্ষে ঢাকা বিভাগের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন শাহাদাত। ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে এই অপকর্ম ঘটান জাতীয় দলে দীর্ঘদিন খেলা এ পেসার।

বল ঘষে উজ্জ্বল করা নিয়ে ঝামেলা শুরু। ম্যাচ চলাকালীন সতীর্থ অফ স্পিনার আরাফাত সানি জুনিয়রকে বল ঘষে দিতে বলেন শাহাদাত। প্রথমে বল ঘষে দিতে অস্বীকৃতি জানান আরাফাত। এর পর হালকা কথা কাটাকাটি শুরু। শাহাদাতের কথায় উত্তর দেন আরাফাতও। এর পরই তাকে চড়-থাপ্পড় মারা শুরু করেন শাহাদাত।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, প্রথমে চড়, পরে আরাফাতকে লাথি মারা শুরু করেন তিনি। আম্পায়ার এসে সরিয়ে দেয়ার পরও শাহাদাত আবার গিয়ে মারতে থাকেন। পরে সতীর্থরা তাকে একরকম জোর করেই নিয়ে যান মাঠের বাইরে। আচরণবিধির লেভেল ফোর অপরাধের দায়ে ম্যাচের শেষ দুদিন বহিষ্কার করা হয় শাহাদাতকে।

আজ তাকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে পাঁচ বছর নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ৩ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। শাহাদাতের সাজা পূর্বাপর ঘটনা আমলে নিয়ে হয়েছে-এমনটি জানিয়েছেন টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। সভাশেষে টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান মিনহাজুল আবেদীন জানান, শাহাদাতের অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় এনেই এই শাস্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। ‘শাহাদাতের কিন্ত আগেও শৃঙ্খলাভঙ্গের ইতিহাস ছিল, সেটাকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

মাঠের মধ্যে সতীর্থের গায়ে হাত তোলা, এটা তো গুরুতর অপরাধ। টেকনিক্যাল কমিটির সবাই তার এই শাস্তির ব্যাপারে একমত হয়েছে।’ ‘আমাদের আশা, অন্য ক্রিকেটারদের জন্যও এটা একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। যেকোনো ক্রিকেটারের জন্যই এটা একটা খারাপ ব্যাপার যে, সে বারবার এরকম অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়াচ্ছে। শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না, এই বার্তাটা আমরা সবাইকে দিতে চাই।’ ম্যাচ রেফারি আখতার আহমেদ ওই দিন ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত ঘটনার প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের টেকনিক্যাল কমিটির প্রধানের কাছে। সেই অনুযায়ী বিসিবির টেকনিক্যাল কমিটি আজ সিদ্ধান্ত নিল। শৃঙ্খলাজনিত কারণে এর আগেও বেশ কয়েকবার শাস্তির মুখোমুখি হন বাংলাদেশ দলের এ পেসার।

তবে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেননি শাহাদাত হোসেন। দেশের ক্রিকেটে ‘ব্যাড বয়’ হিসেবে পরিচিত এই ডানহাতি পেসারকে এর আগে নিজ বাসার শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের দায়ে জেলে যেতে হয়েছিল। একই মামলায় জেলে ছিলেন তার স্ত্রীও। পেসার শাহাদাত এ ঘটনার জন্য অনুতপ্ত। ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। সোমবার এ ঘটনার পর ৩৩ বছর বয়সী এ পেসার বলেন, ‘আমি অনেক বড় ভুল করেছি। ওই কর্মকাণ্ডের জন্য আমি লজ্জিত, দুঃখিত। আমি অনুতপ্ত।’ তিনি বলেন, ‘আমার মাথা ঠিক ছিল না। এখন বুঝতে পারছি কাজটি ভালো হয়নি।

আমি বিসিবিতে গিয়ে নিজের ভুল স্বীকার করব। কৃতকর্মের জন্য বোর্ডের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুতাপ ও দুঃখ প্রকাশ করব।’ এর আগে শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের দায়ে জেল থেকে ফিরেও সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন শাহাদাত। জেলে যাওয়ার কারণে ওই সময়ে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে তাকে নিষিদ্ধ করেছিল বিসিবি। পরে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জীবিকার কথা ভেবে আবার ক্রিকেটে ফেরার অনুমতি দিয়েছিল বিসিবি। বাংলাদেশের হয়ে ৩৮ টেস্ট, ৫১ ওয়ানডে ও ছয়টি টি২০ খেলেছেন শাহাদাত। সবশেষ জাতীয় দলে খেলেছেন ২০১৫ সালে।

 

আরপি/ এএস



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top