রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


কিংবদন্তি ফুটবলার মনোরঞ্জন মনা আর নেই


প্রকাশিত:
২১ মে ২০২১ ০৩:৫৬

আপডেট:
২১ মে ২০২১ ০৫:১১

ছবি: মনোরঞ্জন মনা

ফুটবল খেলতে খেলতে মাঠেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়লেন তরুন ফুটবলার মনোরঞ্জন কুমার দাস মনা (২৮)। বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার লালপুর ডিগ্রী কলেজ মাঠে খেলার সময় হৃদযন্ত্রের ক্রীয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি।

তিনি নাটোরের লালপুরের হলমোড় এলাকার বাসিন্দা হিরালাল কার্তিক দাস ওরফে হিরুয়া দাসের ছেলে। বৃহস্পতিবার মধ্যেরাত গোপালপুর পৌর মহাশ্মশানে তার দাহ-সৎকার সম্পন্ন হয়। প্রত্যক্ষদর্শী খেলোয়াড় ডা. আহমেদ রিজভী জানান, বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপজেলার লালপুর ডিগ্রী কলেজ মাঠে খেলার সময় হঠাৎ পড়ে যান মনা। তাৎক্ষণিক মাথায় পানি ঢালা হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে ইসিজি পরীক্ষার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

এরপর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কিছু সময় পর তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নার সময় তার হাত নারাচারা করে ওঠে। বেঁচে আছে এই ধারণা থেকে তাকে আবার লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে পরিবারের লোকজন। এ সময় খেলোয়াড় ও সমর্থকরা হাসপাতালে ভীড় করে। তাৎক্ষণিক কিছুটা উত্তেজনা দেখা দেয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। দ্বিতীয় বার ইসিজি করে মৃত ঘোষণা করা হয়।

নিহতের বাবা হিরালাল কার্তিক দাস ওরফে হিরুয়া দাস জানান, মাস তিনেক হলো মনা বিয়ে করেছে। তার স্বপ্ন ছিল কাকা গণেশ চন্দ্র দাসের মতো নামকরা ফুটবলা হবে। আমার ছেলের সে স্বপ্ন পূর্ণ হলো না।

লালপুর খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সভাপতি আ স ম আব্দুল্লাহ আল হাসান তনু বলেন, মনোরঞ্জন কুমার দাস মনা একজন উদীয়মান ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ফুটবলার হিসেবে তার জাদুকরী ক্রীড়া নৈপূণ্য দর্শকদের মুগ্ধ করে। তাকে ‘ফুটবল মাঠের ঈগল’ বলা হতো। তিনি জাতীয় পর্যায়ের একজন খেলোয়াড় ছিলেন। তার মৃত্যুতে লালপুরের ফুটবল জগতে অপূরণীয় ক্ষতি হলো।

লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফজলুর রহমান বলেন, ভুল বোঝার কারণে খেলোয়াড় ও সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

 

খেলোয়ার মনার সংক্ষিপ্ত জীবন-বৃত্তান্ত:

নাটোরের লালপুরের সিনেমা হল মোড় (উত্তর লালপুর) গ্রামে ১৯৯৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন মনোরঞ্জন কুমার দাস মনা। বাবা হিরালাল কার্তিক দাস ওরফে হিরুয়া দাস ও মা রিনা রানী দাস। তিন ভাই-বোনের মধ্যে ছোট তিনি। বড় ভাই বাপ্পী দাস নান্নু ও বোন বৈশাখী রানী দাস টিয়া। স্ত্রী ঋতু রানী দাস। তিনি নামকরা ফুটবলার গণেশ চন্দ্র দাসের ভাতিজা।

তিনি লালপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি, লালপুর শ্রী সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, লালপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ডিগ্রি পাশ করেন।

২০০৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি স্বপ্নপুরিতে টুর্ণামেন্ট খেলার মাধ্যমে পেশাদার ফুটবল খেলার যাত্রা শুরু করেন। তিনি লালপুর খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি দলের নিয়মিত খেলোয়াড়। ২০১১ সালে প্রিমিয়ার ফুটবল লীগ, ২০১৪ সালে শান্তিনগর ক্লাবে দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লীগ, ২০১৬ সালে কোয়ালিটি স্পোর্টস ক্লাবে চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল, ২০১৭ সালে কারওরান বাজার প্রগতি সংঘে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ান লীগ ফুটবল, ২০১৮-২০১৯ সালে নবাবপুর ক্রীড়া চক্রে টিভিএস ঢাকা সিনিয়র ডিভিশনাল ফুটবল লীগ, ২০১৯-২০২০ সালে নবাবপুর ক্রীড়া চক্রে প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ, ২০২০ সালে নাটোর জেলা দলে বঙ্গবন্ধু জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপ খেলায় কৃতীত্ব অর্জন করেন। এসব খেলায় ম্যান অব দ্যা ম্যাচ, ম্যান অব দ্যা টুর্ণামেন্ট হওয়ার গৌরবও অর্জন করেন।

এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের টুর্ণামেন্ট এবং উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করে অসংখ্য মেডেল, ক্রেস্ট ও স্বীকৃতি লাভ করেন। 

 

 

 

 

আরপি/এসআর-০৫



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top