করোনা: নওগাঁয় ধান কাটা নিয়ে শঙ্কায় কৃষক
কয়েকদিন পরেই ক্ষেতে পাকতে শুরু করবে সোনালী ধান। ফসল ঘরে তোলার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন নওগাঁ জেলার কৃষাণ-কৃষাণী। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কৃষক-শ্রমিকসহ সবাই ঘরমুখো। তাই প্রাপ্তির আনন্দের চেয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তাদের। ফসল ঘরে তুলতে শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
এবার জেলায় ধান উৎপাদন লক্ষমাত্রা ১ লাখ ৮০ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমি। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে ২ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে ধান রোপন করা হয়েছে। মোট ১ লাখ ৮২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে বোরো ধান কাটা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষকরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ১০ থেকে ১৫ দিন পরই পুরোপুরি ধান কাটা শুরু হবে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ধান কাটার জন্য শ্রমিক আসে কিন্তু করোনার কারণে তারা আসতে পারবে না বলে জানিয়েছে। শ্রমিক ছাড়া ধান সংগ্রহ একদমই অসম্ভব বলেও জানান তারা।
ধান কাটার শ্রমিক সংকটের আশঙ্কা করছেন সাপাহার, পোরশা এলাকার জবাই বিল, মান্দার বিল, মান্দা উপজেলার আন্দোল বিলসহ বিভিন্ন এলাকার চাষীরা। করোনার কারনে বিগত ২০১৭ সালে অকালবন্যার মতো এবারো ফসল হারানোর শঙ্কা তাদের।
কৃষকরা জানান, ধান কাটতে যে সকল শ্রমিক আসতেন তাদেরকে ‘ দিয়েড়া’ কিংবা ‘সাঁওতাল’ হিসেবে স্থানীয় কৃষকরা চিনতেন। কিন্তু ধানতো মাত্র ১০ দিনের পাকতে শুরু করবে দিয়েড়া তো মিলছে না। পুলিশ প্রশাসন যদি কৃষককে একটা উপায় বলে দেন কিভাবে ধান কাটতে হবে তাহলে আমাদের সুবিধে হয়। সেটাওতো তারা বলছেন না এমন প্রশ্ন অনেক কৃষকের। বর্তমানে ধান কাটা শ্রমিক সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলার কৃষকরা।
জেলার মান্দা উপজেলার ১ নং ভারশোঁ ইউনিয়নের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের এ অঞ্চলের মানুষের একমাত্র আয়ের উৎস বোরো ধান। সারা বছরের খাবার, পরিবারের ভরণ-পোষণসহ সকল খরচ আসে ধান থেকে। এবছর ১৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। কয়েকদিন পরেই ধান পাকতে শুরু করবে কিন্তু ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া নিয়ে চিন্তায় আছি। করোনার ভয়ে শ্রমিকরা ধান কাটতে আসতে চাচ্ছে না। পুলিশের মার-হয়রানির কথা বলছেন শ্রমিকরা’
মান্দা উপজেলার ১১ নং কালিকাপুর ইউনিয়নের কৃষক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ধানের বাম্পার ফলন হইছে। আল্লাহ যদি ভালো আবহাওয়া রাখে তাহলে ধান ঘরে তোলা হবে। কিন্তু করোনার কারণে মানুষ বাইরে বের হতে চাচ্ছে না। সেইসাথে সামাজিক দুরত্বেও কথা বলা হচ্ছে। ধান কাটার শ্রমিকরা কিভাবে দুরুত্ব বজায় রেখে কাজ করবে?’
উপজেলার আন্দোল বিল অঞ্চলের কৃষক আব্দুর রশিদ জানান,‘ বিলের মধ্যে জমি। অতদূর থেকে ধান নিয়ে আসতে অনেক শ্রমিকের প্রয়োজন কিন্তু এখন শ্রমিক পাওয়া নিয়ে চিন্তায় ঘুম আসছে না। ধান যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে বউ- বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। একটু বৃষ্টি হলে বিলের নিচের জমির ধান পানিতে তলিয়ে যাবে। ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। ১৫ দিন পরেই ধান কাটতে হবে। করোনার এ পরিস্থিতি কবে নাগাদ ঠিক হবে তাতো কিছু আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা এসে ধান কাটতো কিন্তু এবার কোনো জায়গা থেকে শ্রমিক আসতে পারবে না। করোনার ভয়ে ঘর থেকে কোনো শ্রমিক বের হচ্ছে না। মোবাইল করলে তারা আসতে পারবে না বলে জানাচ্ছে। সরকার যদি হাওরের ধান কৃষকদের ঘরে তুলতে দ্রুত পদক্ষেপ না নেন তাহলে এবছর কৃষকদের পথে বসতে হবে।’
এবার জেলায় ধান উৎপাদন লক্ষমাত্রা ১ লাখ ৮০ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমি। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে ২ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে ধান রোপন করা হয়েছে। মোট ১ লাখ ৮২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘জেলায় ধান কাটার যন্ত্র রয়েছে ৩৫ টি আর জেলায় মোট কৃষক রয়েছে ৪ লাখ ৫৩ হাজার। ধান কাটতে মানুষের বিকল্প নাই। এসব কৃষক যদি নিজ নিজ জমিতে ধান কাটে এবং কোথাও না গিয়ে স্থানীয়ভাবে অন্যকে ধান কাটতে সাহায্য করে তাহলেই এই সংকট মোকাবেলা করা সহজ হবে। আমি বলবো কৃষকরা যেন নিজ নিজ এলাকায় মাঠে নামে। চলতি মাসের মধ্যেই ২৫ তারিখ থেকে বোরো ধান কাটা শুরু হবে। অনেক জায়গায় বিছিন্নভাবে ব্রি ধান ২৮ কাটা শুরু হয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোঃ হারুন-অর-রশীদ জানান, ‘শ্রমিক সংকট নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে। আমরা অনেক কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কৃষকরা যাতে মাঠে নামতে পারে সেটার ব্যবস্থা হচ্ছে। যেসব কৃষক মাঠে নামতে ভয় পাচ্ছে, তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। বড় বড় কৃষক যারা রয়েছে তাদের সাথে কথা হয়েছে। তাদের ধান কাটতে আসতে না চাইলে সেসব শ্রমিকের মোবাইল নাম্বার জমা দেিত বলেছি। ধান কাটার জন্য তাদের আনা হবে। ইতোমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে কিছু শ্রমিক এসেছে।’
আরপি/এমএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: