রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০

‘আঞ্চলিক খালামনি’র অ্যালামনাই


প্রকাশিত:
২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ২০:১৯

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১১:৫৫

 

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা। দেশের তৃতীয় প্রাচীন বিদ্যাপীঠ রাজশাহী কলেজের ভেতরে চলছে উৎসব। কারন পরের দিন শুক্রবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে এইচএসসি অ্যালামনাই পুনর্মিলনী। কিন্তু আগের দিন থেকেই দেশ-বিদেশ থেকে আগত অ্যালামনাসদের বিচরণে মূখর ক্যাম্পাস।


ক্যাম্পাসের হাজি মোহাম্মদ মহসিন ভবনের পাশ দিয়ে মাঠের দিকে যাচ্ছেন এক নারী। তাকে দেখে উৎসাহ ভরে এগিয়ে আসছেন অনেকেই। ছবি তুলছেন, আলাপ করছেন। ভদ্র মহিলা প্রমিত বাংলায় কথা বলতে শুরু করছেন, কিন্তু তাকে ঘিরে ধরা ভিড়ের অনুরোধে কথা চালিয়ে যাচ্ছেন রাজশাহীর স্থানীয় ভাষায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ইনি জুবাইদা পারভীন লিপি (৪৯)। রাজশাহী কলেজের ১৯৮৮-১৯৯০ সেশনের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। এই অ্যালামনাই অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটিতে রয়েছেন।

বিভিন্ন সময় রাজশাহীর স্থানীয় ভাষায় এই অ্যালামনাই অনুষ্ঠান নিয়ে তার প্রচারণা ও এ্যাক্টগুলোর ভিডিও ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় ও সমাদৃত হয়েছে। এ্যালামনাইয়ের ফেসবুক পেইজসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাই অ্যালামনাসরা তাকে দেখেই চিনে ফেলছেন। তার মুখে রাজশাহীর স্থানীয় ভাষায় কথা শুনতে ও ছবি তুলতে ঘিরে ধরছেন।

লিপি এই কলেজ থেকে ৭১৯ নম্বর পেয়ে রাজশাহী বোর্ডে চতুর্থ হয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। এরপর রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। লেখালেখি ও সমাজসেবামূলক কাজ করেন তিনি। ২০১৪ সালে কবিতার বই ‘আমার যত কথা’, ২০১৯ সালে পেন্সিল পাবলিকেশন্সর সংকলনে ‘যুদ্ধের লেলিহান শিখা’ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ২০২০ প্রকাশিত হবে গল্পগ্রন্থ ‘নিয়তি’। জনপ্রিয় ‘ক্যানভাস’ নিজের প্রেমের গল্প লিখে প্রথম হয়েছিলেন লিপি। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন।

নগরীর কাদিরগঞ্জে বাবার বাড়ি। আর শ্বশুরবাড়ি হাঁতেম খা। রাজশাহীর স্থানীয় ভাষায় পোক্ত তিনি। তাই অ্যালামনাইয়ের প্রচারণায় স্থানীয় ভাষা ব্যবহারে কোনরকম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি তাকে।

লিপি জানান, তিনি সবসময় রাজশাহীর ভাষায় কথা বলেন। শুধু প্রয়োজন বিশেষে প্রমিত বাংলায় কথা বলেন। বিভিন্ন সামাজিক কাজের সাথে জড়িত লিপিকে তাই বাচ্চারা ‘আঞ্চলিক খালামনি’ বলে ডাকে।

অ্যালামনাইয়ের প্রচারণার এমন অভিনব পদ্ধতি কিভাবে মাথায় এলো এবং এত স্বতস্ফূর্তভাবে কিভাবে করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে লিপি জানান, তিনি একজন বাচিক শিল্পী। নিয়মিত গান, নাটক, অভিনয় করেন। ‘শেষ কথা’ নামক একটি সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন তিনি। তাই এসব করতে কোন সমস্যা হয়নি। আর ভিডিওগুলোর ভিউ নেট দুনিয়ায় ৩০-৩৫ হাজার ছাড়ানোতে আরো উৎসাহী হয়েছেন।

কেমন লাগছে এই মিলনমেলা এমন প্রশ্নের জবাবে লিপি বলেন, খুবই ভাল লাগছে। কলেজের এই সাজসজ্জা, বহু বছর পরে অনেকের সাথে দেখা হচ্ছে, সবাই আনন্দ করছে এ কারনেই ভাল লাগছে। আর ফেসবুকের বদৌলতে অনেকেই আমাকে চিনে ফেলছেন, কথা বলতে এগিয়ে আসছেন, ছবি তুলছেন-এগুলো উপভোগ করছি।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক সন্তানের জননী। ছেলে এটিএম জুবায়ের হাসনাইন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। স্বামী এটিএম মাহফুজুর রহমান বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী। তিনি ১৯৮৪ সালে এই কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। লিপির বাবা এ্যাড. আবুল কালামও এই কলেজ থেকে ১৯৬২ সালে এইচএসসি পাশ করেছেন। এবার অ্যালামনাইয়ে তারা তিনজনই অংশ নিচ্ছেন।

 

আরপি/ এএন



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top