রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০

মাছের কেজিতে বাড়লো ৩০ টাকা


প্রকাশিত:
১৭ আগস্ট ২০২২ ০২:১৩

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১৮:০২

মাছের কেজিতে বাড়লো ৩০ টাকা

দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে ক্রেতার নাগালের বাইরে। মাংসের বাজারে পাগলা ঘোড়া ছুটেছে। একই পথে হাঁটছে মাছের বাজার। ২০ টাকা কমে ফের ৩০ টাকা বাড়লো মাছের দাম! তবে মৎস্য চাষিরা বলছেন, মাছের উৎপাদন খরচ, পরিবহন ও শ্রমিকের মজুরি বাড়ার কারণে বেড়েছে দাম। অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিঞ্চিৎ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও আমদানির প্রভাবে বাড়ছে দাম।

সম্প্রতি রাতারাতি জ¦ালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সুযোগে প্রতিকেজি মাছে ৬০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে যায়। এরপর ১৪ আগস্ট কেজিতে ২০ টাকা কমে সব মাছের দাম। কিন্তু এ কম দামে বাজার স্থায়ী হয়নি। আজ ফের ৩০ টাকা বেড়েছে দাম। আর এ দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

আজ মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট ২০২২) রাজশাহীর সাহেববাজার মাছের আড়ত, উপশহর নিউমার্কেট, লক্ষীপুর মাছের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে কার্পজাতীয় মাছ। মাছের দাম ঈদের পর থেকেই বাড়ছে বলে মন্তব্য তাদের।

তারা বলছেন, ঈদের পর বাজারে মাছের চাহিদা থাকলেও আমদানি না থাকায় এক দফায় দাম বেড়েছে। এখন সবকিছুর দাম বেড়েছে ফলে মাছের দাম বাড়ানো যৌক্তিক। বৃষ্টি হওয়ার কারণে জেলেরা মাছ ধরতে পারছেন না বলেও অযৌক্তিক অজুহাত দাঁড় করান ব্যবসায়ীরা। অবশেষে গত এক মাসের মধ্যে মাছের দাম উঠানামা করেছে ৪ বার। এরমধ্যে মাত্র কমেছে একবার!

মাছের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে মাছ ধরার জেলে, বহন করার গাড়ি ও সর্বপরি লোকবল সংকটের কারণে বাজারে মাছের দাম বেড়েছে বলে চাষি ও ব্যবসায়ী উভয়ের বক্তব্য।  তবে, এ দাম এখানেই থেমে থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন তারা।

সাহেববাজারের মাছ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, মাছের দাম কেজিতে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল মাছের আমদানি ভালো হয়েছিল তাই দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা কম দামে বিক্রি করেছি। এখন আমরা মাছ কিনতে বেশি দামে কিনছি, বেশি দামে বিক্রি করছি। তেলের দাম বাড়ার কারণে মাছের পরিবহন খরচ বেড়েছে। যারা মাছ ধরার জেলের মজুরি বেড়েছে। সবমিলিয়ে তেলের প্রভাব পড়েছে বাজারে। চাষিরা দাম বেশি নিচ্ছে তাই বাধ্য হয়ে আমাদের কিনতে হচ্ছে।

রাজশাহীর বিভিন্ন কাঁচা বাজারের মৎস্য আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে ছোট এক থেকে দেড় কেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা কেজি দরে যা আগে ১৮০-২০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এই দাম থেকে ২০ টাকা কম দামে গত দুদিন বিক্রি হলেও আজ ২৮০ টাকা দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ৫ কেজির রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা কেজি দরে যা আগে বিক্রি হয়েছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায়।

এছাড়া, সিলভার কার্প মাছ প্রতিকেজি ২৪০, ছোট আকারের কাতল ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা; ৫ কেজির কাতল ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা , দুই কেজি ওজনের মৃগেল চাষি পর্যায়ে ২০০ টাকা এবং বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়। এছাড়া তেলাপিয়া ১৮০ টাকা, বোয়াল ১০০০ থেকে বেড়ে ১০৫০ টাকা। অন্যদিকে চিংড়ির কেজিতে ৪০০ টাকা বেড়ে বাগদা চিংড়ি ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছ ব্যবসায়ী হাসিবুল ইসলাম বলেন, ইলিশের মৌসুম চলছে। বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ রয়েছে কিন্তু দাম বেড়েছে। মানুষ দাম বাড়লে আর তেমন রিঅ্যাকশন দেখায় না। দাম ১০০ টাকা বেড়েছে। আগে হাফকেজি- ছয়’শ গ্রামের ইলিশ ৭০০ টাকা বিক্রি হয়েছে এখন ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১৩’শ টাকা থেকে ১৪”শ টাকা থেকে বেড়ে ১৫”শ টাকা।

রাজশাহী জেলা মৎস্য সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলায় মৎস্য উৎপাদন ও বিপণন-বিক্রির সঙ্গে জড়িত জেলার প্রায় সাড়ে ৯ লাখ মানুষ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮০ হাজার ১৪১ মেট্রিকটন মাছ উৎপাদন হয়। বর্তমানে মাছ উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৮৩ হাজার ৪৯২ মেট্রিন টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে জেলায় মাছ উদ্বৃত্ত ৩১ হাজার ৪২৯ মেট্রিক টন। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২০ সালে মাছের উদ্বৃত্ত প্রায় আড়াই গুণ। সেইসাথে মোট জলাশয়ের সংখ্যা বেড়েছে। তিন ৪৮ হাজার ৪২৭টি থেকে বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৭২০ টিতে।

জেলার পবা উপজেলার পারিলা গ্রামের বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, ২০১৯-২০ সালের দিকে নারিশ মাছের ফিড কিনেছি ৯০০ টাকা সেই বস্তা এখন ১৪০০ টাকা। তবে উৎপাদন খরচ বাড়ার সাথে সাথে মাছের দাম বেড়েছে। কিছুদিন ধরে যে দাম তাতে কিছুটা লাভ করা সম্ভব। এখন পাইকারিতে ৩-৪ কেজি ওজনের রুই বিক্রি করেছি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা পর্যন্ত। পাইকারিতে আমরা ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেশি পাচ্ছি। আগে ৫ কেজির রুই ৪০০ টাকা বিক্রি করেছি দাম বাড়ার পর ৫’শ টাকা কাছাকাছি বিক্রি হচ্ছে।

তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব চাষি পর্যায়ে কিভাবে পড়বে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আগামী সপ্তাহে ঢাকায় মাছ পাঠাব। ট্রাকভাড়া বেড়ে গেছে, জেলের মজুরি বাড়াতে হবে তাছাড়া মাছ ধরবে না। খাবার খরচ বাড়ছে। এটা মূলত একধরণের চেইন। চাইলেই কিছু করা সম্ভব হয়না।

বেশ কয়েকজন চাষির সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় উৎপাদিত রুই, কাতলা, ম্রিগেল, গ্রাসকার্প, ব্লাডকার্প, সিলভারসহ বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছ ঢাকার বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানেও ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে তাজা মাছ। গত ১০ জুলাই কোরবানির ঈদ অনুষ্ঠিত হলেও একদিন পর থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রামে রাজশাহীর মাছ যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত বাইরে মাছ যাওয়ার কারণে মাছের দাম বেশি।

উল্লেখ্য, রাজশাহীতে উৎপাদিত মাছের কার্প জাতীয় মাছ প্রায় ৮৫ শতাংশ। এছাড়াও কার্পজাতীয় মাছ উৎপাদনে শীর্ষে থাকা রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন প্রায় ১৫০ ট্রাক মাছ রপ্তানি হয়ে থাকে। বর্তমানে ঢাকায় মাছের চাহিদা ও বেশ ভালো দাম থাকায় খুশি এখানকার চাষিরা।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top