রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১

ঝালমুড়িতেই বাঁচার স্বপ্ন ষাটোর্ধ্ব সেলিনার!


প্রকাশিত:
২৩ আগস্ট ২০২১ ০৮:৩৬

আপডেট:
২৩ আগস্ট ২০২১ ০৮:৩৮

মুখরোচক ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন সেলিনা। ছবি: রাজশাহী পোস্ট

সেলিনা বিবি। বয়স ৬০ পেরিয়েছে কয়েক বছর আগেই। বসবাস রাজশাহী নগরীর পঞ্চবটি কেঁদুর মোড় এলাকায়। প্রাপ্তবয়স্ক দুই ছেলে থাকলেও সংসারের ভার তার কাধেই। বয়সের দারপ্রান্তে এসেও থেমে যান নি। ছোট মনে করেন নি কোনো কাজকে। সেলিনার স্বামী আহসান আলী বেকার জীবনযাপন করায় সংসারের দায়িত্ব তাকেই নিতে হয়েছে।

জানা গেছে, তিন সন্তানের জননী সেলিনা। দুই ছেলে সেলিম ও আলিমের বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর আলাদা হয়ে গেছেন তারা। একমাত্র মেয়ে রিতা খাতুনকেও বিয়ে দেয়ায় সংসারে শুধু আহসান ও সেলিনা দু‘জনই। তাদের দুই ছেলে পদ্মা নদীতে মাছ ধরে সংসার চালান। সেলিনার বড় ছেলে সেলিমের রয়েছে তিন সন্তান, দুই ছেলে ও এক মেয়ে। আর ছোট ছেলে আলিম দেখেছেন দুই সন্তানের মুখ। দুটিই তার ছেলে সন্তান। তবে তারা মা-বাবার খোঁজখবর না নেয়ায় দায়িত্ব বেড়ে যায় বৃদ্ধা সেলিনার। ৫০ বছর বয়সে শুরু করেন ঝালমুড়ি বিক্রি। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি বিক্রি করে আসছেন মুখরোচক ঝালমুড়ি।

বয়সের ভারে জড়সড়ো হয়ে উঠেছে অদম্য সেলিনার শরীরের চামড়া। চোখেও অনেকটা কম দেখছেন। ফলে ব্যবহার করছেন চশমা। তবুও বসে থাকেন নি। নিয়মিত বিক্রি করছেন ঝালমুড়ি। দৈনিক আয়ের পয়সা দিয়েই কিছু চাল-ডাল কিনে খেয়ে বেঁচে থাকেন স্বামীকে নিয়ে। তাতেই খুশি ছিলেন তিনি। নিজ কাজের মাধ্যমে উপার্জনের টাকা দিয়েই সংসার চলত। তবুও কারো কাছে হাত পাতেন নি।

তবে পদ্মার চিরচেনা রূপ চরম ধাক্কা দিয়েছে সেলিনার দৈনন্দিন জীবনের রুটিনে। গত সপ্তাহে ডুবে গেছে টিনের তৈরি তার ঘর। আশ্রয় নিয়েছেন পাশ্ববর্তী এলাকার মানুষদের বাড়ির বারান্দায়। তার দুই ছেলে সেলিম-আলিমের ঘরবাড়িও তলিয়েছে পদ্মায়। ওই এলাকার অন্তত দুই শতাধিক মানুষের বাড়িতে বর্তমানে হাটুপানি। পদ্মার পানি বাড়িতে ঢুকে সর্বস্ব হারালেও সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন নি কোনো জনপ্রতিনিধি।

নদীর পাড়ে ঝালমুড়ি বিক্রি করেই উপার্জনের মাধ্যমে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন ষাটোর্ধ্ব সেলিনা বিবি। তিনি ভোরের কাগজকে জানান, অনেকটা বাধ্য হয়েই শুরু করেছিলেন ঝালমুড়ি বিক্রি। ছেলেদের বিয়ে দেয়ার পর তারা স্ত্রী নিয়ে আলাদা হয়ে যায়। আর তার স্বামী কাজে অক্ষম হয়ে পড়েন। নারী হিসেবে ঝালমুড়ি বিক্রিই সহজ মনে হয় এবং সেটিই শুরু করেন।

সেলিনা বিবি বলেন, নারীরা সমাজের বোঝা নয়। তারাও পারে শত বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যেতে। তাছাড়া কোনো কাজ ছোট নয়। পরিশ্রমের মাধ্যমে বা কিছু বিক্রি করে উপার্জনে শরমের কিছু নেই। তবে বাড়িঘর ডুবে গিয়ে বেশ কষ্টে দিনাতিপাত করছি। করোনাকালে কেউ পাশে দাঁড়ায় নি। পদ্মায় সবকিছু ডুবে গেলেও এখনো পর্যন্ত পাই নি কোনো সহযোগিতা। বয়স্ক ভাতার জন্যও তালিকাভুক্ত করা হয় নি আমার নাম।

এদিকে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহে প্রতিদিন প্রায় ৯-১০ সেন্টিমিটার করে পানি বৃদ্ধি পায় পদ্মা নদীতে। গতকাল রবিবার সকাল ৬টায় নগরীতে পদ্মার পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৭৮ মিটার। আর গত শনিবার দুপুর ১২টায় পদ্মার পানির উচ্চতা পাওয়া যায় ১৭ দশমিক ৮৫ মিটার। পানি বর্তমানে বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে নগরীর প্রায় আড়াই হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি। কিন্তু পানিবন্দিদের সহায়তায় দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম হাতে নেয়া হয় নি।

তবে এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরমান আলী বলেন, রাসিক মেয়র ও সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। সহযোগিতার জন্য তারা আশ্বস্ত করেছেন।

 

আরপি/আআ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top