রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

মানবেতর দিন কাটছে ভোলাহাটের চরকা মিস্ত্রীদের


প্রকাশিত:
৩০ জুলাই ২০২১ ১৬:০১

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ০০:৩১

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

চরকা মিস্ত্রী মোঃ মজিবুর রহমান। সংসারের ৫ জন সদস্য নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন তিনিসহ তাঁর মত আরো প্রায় ২০জন চরকা মিস্ত্রী। ভয়াবহ করোনা থামিয়ে দিয়েছে তাদের জীবনের গতি। দীর্ঘ ২০ বছরের পেশা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা চরকা মিস্ত্রীরা। নির্দিষ্ট পেশা বেছে নিতে পারছেন না তাঁরা। যে যার মত জীবন বাঁচাতে যখন যা পায় সে পেশাতেই লেগে পড়েন। কেউ কেউ ঢাকায় গিয়ে কামলা দিচ্ছেন।

এদিকে এ চরকায় সূতা তৈরী করে ভোলাহাট উপজেলার প্রায় ১০/১৫ হাজার নারীরা অর্থ আয় করে সংসার চালাতেন। চরকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁদেরও আয় বন্ধ হয়েছে। ফলে তাঁরাও জীবন-জীবিকা নিয়ে সংকটে আছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার অন্যতম অর্থ আয়ের উৎস ছিল চরকায় সুতা তৈরি করা। চরকায় যাঁদের জীবন। তঁদের মধ্যে ভোলাহাট উপজেলার নতুনহাজীপাড়া গ্রামের মোঃ আরসেদ আলীর ছেলে মোঃ মজিবুর রহমান(৪৮)। তিনি তাঁর কর্ম হারিয়ে এখন ছোট্ট একটি দোকান নিয়ে বসেছেন বাড়ীর সামনে।

তিনি বলেন, আমি আজ থেকে ২০ বছর পূর্বে রেশম সূতা থেকে পরিত্যক্ত যা বের হয় তাকে লাট(টোপা) বলা হয়। সেই লাট(টোপা) দিয়েএলাকার দরিদ্র নারীরা চরকা দিয়ে সূতাতৈরী করতেন। সেই সূতা কাটা মেশিনটি নষ্ট হলে আমি মেরামত করতাম। আমার মত ভোলাহাটে আরো ২০/২১জন চরকা ভালো করা মিস্ত্রী আছেন। লাট(টোপা)গুলো আসতো ভারত থেকে। কিন্তু ভয়াবহ করোনার থাবায় দেড় বছর ধরে লাট(টোপা) আসা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে লাট(টোপা) থেকে সূতা তৈরী করা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ভোলাহাটের প্রায় ৭ হাজার নারীর চরকায় সূতা তৈরী করা বন্ধ হয়ে গেছে। সূতা তৈরী বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরকা নিয়ে কোন নারীরা চরকা ভালো করতে আমার কাছে আসেন না। এতে করে চরকায় সূতা তৈরী করা প্রায় ৬/৭ হাজার নারী বেকার হয়ে পড়েছেন। তাছাড়া আমিসহ ২০/২১জন চরকা মিস্ত্রী বেকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

তিনি আরও বলেন, চরকা ভালো করে আমি ১৬/১৭ হাজার টাকা মাসে আয় করতাম। এখন সে আয়টা না থাকায় সংসারের ৫জন সদস্য নিয়ে বাড়ীর সামনে একটি ছোট্ট পান সিগারেরটের দোকান নিয়ে বসেছি। এ দোকান থেকে যে আয় হয় তাতে সংসার চলে না। কাউকে বলতে পারিনা নিজের কষ্টের কথা। খেয়ে না খেয়ে পার করতে হচ্ছে সংসার। করোনার পূর্বে দিনে ১০/১২টি চরকা মেশিন ভালো করে দিনে তিন বেলা খেয়ে ভালো মত সংসার চলতো। এদিকে আমার মত আরো ২০/২১জন চরকা মিস্ত্রী আছেন তাঁরা যেভাবে পারছেন সে ভাবে কষ্টে সংসার চালাচ্ছেন। কেউ কেউ ঢাকায় গিয়ে বিভিন্ন কাজ করছেন।

তিনি বলেন, করোনা থামার কোন লক্ষন পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ভারত থেকে লাট(টোপা) আসবে বলে মনে হয় না। তাই চরকায় সূতা তৈরী আর হবে না বলে শংকা প্রকাশ করেন। মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, ভোলাহাট উপজেলায় ২০/২১ জন বেকার চরকা মিস্ত্রীর পরিবারে প্রায় ১’শ২৫জন সদস্য মানবেতর জীবন পার করছেন। তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারী কোন সুযোগ তিনি পাননি।

মোঃ মজিবুর রহমানের স্ত্রী নার্গিস আক্তার বলেন, করোনার পূর্বে আমার স্বামী চরকা মেরামত করে যে আয় করতেন তা দিয়ে সংসারটা বেশ ভালো ভাবেই চলে যেত। কিন্তু চরকায় সূতা তৈরী করা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কেই আর চরকা মেরামত করতে আসেন না। যার কারণে আয় কমে গেছে । খুব কষ্টে সংসার চলছে।

লাটগুঠি(টোপা) রপ্তানিকারক মোঃ নাসিরুল্লাহ বলেন, আর্ন্তজাতিক বাজার ও করোনার কারণে লাটগুঠির দাম বৃদ্ধি হয়েছে। যার কারণে ভোলাহাটের তৈরী সূতার দাম কমে গেছে। এতে স্থানীয় নারীরা সূতা তৈরী বন্ধ করে দেয়ায় প্রভাব পড়েছে চরকা মিন্ত্রীদের উপর। এখন চরকায় সূতা তৈরী করা নারী ও চরকা মিস্ত্রীরা বেশ কষ্টে আছেন। 

 

 

 

আরপি/এসআর-০৫



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top