রাজশাহী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


৬ গ্রুপে ঢাবি ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা, কর্মীর চেয়ে নেতা বেশি


প্রকাশিত:
১২ ডিসেম্বর ২০২০ ২০:৫৬

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:৪৩

ছবি সংগৃহীত

স্বেচ্ছাচারিতা, সমন্বয়হীনতা আর সিন্ডিকেটের আধিপত্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। দেখা দিয়েছে ক্ষোভ, অসন্তোষ আর অভ্যন্তরীণ কোন্দল। দীর্ঘদিনের লুকায়িত এসব সমস্যা দিনদিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। হাতছাড়া হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সহাবস্থানমূলক ছাত্ররাজনীতি করার সুযোগ। তারপরও এসব সমস্যা সমাধান না করে ‘অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়ার নীতি’ অনুসরণ করছেন এই সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।

গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের ৯১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল । তখন থেকেই এটিকে ‘পকেট কমিটি’ অ‌্যাখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নামে পদবঞ্চিতরা। এমনকি এ নিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন এলাকায় একাধিকবার সংঘর্ষেও জড়ায় ছাত্রদলের পদপ্রাপ্ত ও বঞ্চিত গ্রুপ।

২০১৯ সালের মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে দীর্ঘ নয় বছর পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পায় ছাত্রদল। কিন্তু অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও শিক্ষার্থী-বিচ্ছিন্নতার কারণে ডাকসু নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলকে। ডাকসু নির্বাচনের পর ঝাঁক বেঁধে ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া শুরু করে ছাত্রদল। তখন বিভিন্ন ইস্যুতে ছাত্রলীগের মুখোমুখি হলেও তা বিভিন্নভাবে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় বিএনপির ছাত্র সংগঠনটি। কিন্তু নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারা।

গত বছরের অক্টোবরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের পর জমে থাকা ‘চাপা ক্ষোভ’ ক্রমশ প্রকাশ পেতে থাকে। সেই ক্ষোভ ব্যাপকভাবে প্রকাশ হয় ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি ঘোষণার পর। অভিযোগ ওঠে, বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির ৯১ সদস্যের মধ্যে প্রধান দুইজনসহ ৪৭ জন একই সিন্ডিকেটের। তারপর থেকেই মধুর ক্যান্টিনের সামনে সাতদিনে অন্তত পাঁচ দিন, চন্দ্রিমা উদ্যানে দুইবার ও নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ একটি অংশ। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন এলাকায় দুইবার আন্তঃসংঘর্ষে জড়ায় তারা । এতে নেতৃত্ব থাকা ও বঞ্চিত উভয় পক্ষের একাধিক নেতাকর্মী আহত হন।

এমনকি বিভিন্ন ইস্যুতে ছাত্রদলের মিছিল-সমাবেশ চলাকালে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের সঙ্গে সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের অনুসারী বলে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমানের একাধিকবার ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এছাড়া আমানের হাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের ঢাবি কমিটির কয়েকজন নেতা মারধরের শিকার হন। এমনকি টিএসসিতেও ছাত্রদলের দুপক্ষের মারামারি হয়।

জানা যায়, ঢাবি কমিটির আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমান ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর অনুসারী। আর ৯১ সদস্যবিশিষ্ট ঢাবি কমিটির ৪৭টি পদই বাগিয়ে নেয় এই সিন্ডিকেট। এজন্য ত্যাগী, পরিশ্রমী ও নির্যাতিত নেতারা বাদ পড়েন বলে অভিযোগ ওঠে।

গত ২ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার মোগলটুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম ফের ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়’ রাখার দাবিতে ঢাবি ছাত্রদলের ঘোষিত একটি কর্মসূচি দুই গ্রুপ আলাদাভাবে পালন করে। একটি গ্রুপ কর্মসূচি পালন করে বর্তমান নেতৃত্বে থাকা আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমানের নেতৃত্বে। আরেকটি গ্রুপ কর্মসূচি পালন করে ঢাবি কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-আহ্বায়ক আকতার হোসেন ও সদস্য আনিসুর রহমান খন্দকার অনিকের নেতৃত্বে। এর মাধ্যমেই ঢাবি

সংগঠন সূত্রে জানা যায়, অন্তত ছয়টি গ্রুপ এখন বেশ সক্রিয়। আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নেতৃত্বাধীন গ্রুপের বাইরে আকতার ও আনিসের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ হচ্ছে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের অনুসারী। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুল রহমান খোকনের অনুসারী একটি গ্রুপ আছে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ওয়ালিউর রহমান জনি, এম এম মাহমুদুল হাসান রনি ও মোস্তাফিজুর রহমান।

সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের অনুসারী গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাবি কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন নাসির, শরীফ প্রধান শরীফ ও কাজী সামসুল হুদা। কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিনের অনুসারী হচ্ছেন ঢাবি কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক শাফী ইসলাম, রিয়াদ রহমান ও ফারুক আহমেদ। এছাড়া ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের অনুসারী গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুগ্ম-আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন ও ফজলুল হক মুসলিম হলের সভাপতি শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-আহ্বায়ক আকতার হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি একটি এককেন্দ্রিক কমিটি। শুরু থেকেই তারা সমন্বয়হীনভাবে কাজ করেছে। স্বেচ্ছাচারিতা করছে। যার জন্য বর্তমান কমিটি ভেঙে সবার সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।’

জানা যায়, ঢাবি ছাত্রদলের এই আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ ছিল তিন মাস। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর কমিটি ঘোষণার দিন হিসেবে তা মার্চেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়। তবে এই কমিটি তাদের গঠনতান্ত্রিক মেয়াদের শেষ দিন সম্মেলন ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি হলে কমিটি ঘোষণা করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর (১ জানুয়ারি) পর নতুন কমিটির জন্য সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।’

ছাত্রদলে ঢাবি ও হল কমিটি মিলিয়ে প্রায় দুই শতাধিক নেতা থাকলেও উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মী বাহিনী নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব দাবি করছেন, তারা দায়িত্ব পাওয়ার পর ঢাবির দেড়শ’ শিক্ষার্থী ছাত্রদলের ফরম পূরণ করেছেন।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিভিন্ন হল ও বিভাগে ১৫০ জন শিক্ষার্থী ছাত্রদলের কর্মী ফরম পূরণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে আরও অনেক শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করবেন।’

তবে ঢাবি কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-আহ্বায়ক আকতার হোসেন বলেন, ‘তার এই দাবি ভিত্তিহীন। তিনি যদি দেড়শ’ শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ করে থাকেন, তাহলে এর তথ্য-উপাত্ত কোথায়?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ১২১ সদস্যের কমিটিতে মাত্র দুজন নারী রয়েছেন। যা দুই শতাংশেরও কম। তারা আবার একদম নিচের দিকের সদস্য। এছাড়া ছাত্রদল ছেলেদের ১৩টি হলের ১২টিতে কমিটি করতে পারলেও মেয়েদের পাঁচটি হলের একটিতেও কমিটি করতে পারেনি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতির কারণে মেয়ে শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলের রাজনীতিতে আসতে চায় না।’

তবে অধিকাংশ নেতাই মনে করেন, মেয়েদের হলগুলোতে নেতাকর্মী না থাকায় হল কমিটি করতে পারেনি ছাত্রদল।

সূত্র : জাগোনিউজ

 

আরপি/এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top