’ক্যাসিনো’ সংবিধান অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ
দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের সংবিধানে জুয়া বন্ধের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রাষ্ট্রকে নির্দেশনা দেয়া হয়। যদিও পরবর্তীকালে এ বিষয়ে আর নতুন কোনো আইন হয়নি। ফলে এখনও কার্যকর রয়ে গেছে দেড়শ বছরের বেশি পুরনো আইনটি।
বর্তমান সংবিধানের ১৮ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।’ এছাড়া ‘পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট, ১৮৬৭’ এর ৩, ৪ ও ১৩ ধারা অনুসারে এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তবে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স বা পারমিট নিয়ে মদ বিক্রি ও পানের সুযোগ আছে।
সম্প্রতি ঢাকায় র্যাবের সমন্বিত অভিযানে চারটি কথিত ক্যাসিনো সিলগালা ও অনেককে আটকের পর জুয়া খেলা ও ক্যাসিনো নিয়ে এখন বাংলাদেশে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বরাতে জানা যাচ্ছে, ঢাকায় অন্তত ৬০টি এমন ক্যাসিনোর অস্তিত্ব রয়েছে।
পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের আশপাশের দেশ সিঙ্গাপুর, ম্যাকাও, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এমনকি নেপালেও জুয়া খেলার জায়গা হিসেবে ক্যাসিনোর জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ক্লাবে বা আড্ডায় গোপনে জুয়া খেলার অনেক আসর বসার কথা নানা সময়ে শোনা গেলেও আধুনিক যন্ত্রপাতি ও উপকরণসজ্জিত এ ক্যাসিনোগুলোর অস্তিত্ব থাকার খবর বাংলাদেশের মানুষের কাছে একেবারেই নতুন। অথচ মদ বিক্রি বা পানের মতো ক্যাসিনোর অনুমোদন বা লাইসেন্স দেয়ার কোনো ব্যবস্থা বা সুযোগই বাংলাদেশের কোনো আইনে নেই। জুয়ার বিষয়ে যে আইনটি কার্যকর আছে সেটি হলো ‘প্রকাশ্য জুয়া আইন ১৮৬৭’, সেখানে অবশ্য ‘ক্যাসিনো’ বিষয়ে কিছু বলা নেই।
তবে ওই আইনে ঘর, তাঁবু, কক্ষ, প্রাঙ্গণ বা প্রাচীরবেষ্টিত স্থানের মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী বা ব্যবহারকারী হিসেবে যেকোনো ব্যক্তি জ্ঞাতসারে বা স্বেচ্ছায় অন্য লোককে, ওই স্থানকে সাধারণ জুয়ার স্থান হিসেবে ব্যবহার করতে দিলে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এমনকি তাস, পাশা, কাউন্টার অর্থ বা অন্য যেকোনো সরঞ্জামসহ যেকোনো ব্যক্তিকে ক্রীড়ারত বা উপস্থিত দেখতে পাওয়া গেলেও শাস্তি দেয়ার সুযোগ আছে এ আইনে।
সম্প্রতি র্যাবের অভিযানে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে বহিষ্কার হওয়া খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া এবং নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেয়া এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম গ্রেফতার হন। তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনা ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। দেশের প্রচলিত জুয়া আইনে শাস্তির বিধান কী? তা নিয়েও চলছে আলোচনা। যদিও জুয়া নিয়ে শাস্তির বিধান থাকলেও তা কোনো শাস্তির পর্যায়ে পড়ে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ক্যাসিনো খেলা নিয়ে সত্যিকার অর্থে শাস্তি দেয়ার মতো কোনো আইন নেই। আবার কেউ কেউ বলছেন, যেহেতু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় সংবিধানে জুয়া অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাই সেটি চলতে পারে না। আইনজ্ঞরা বলছেন, জুয়া ও ক্যাসিনো নিয়ে নতুন করে আইন তৈরি করা দরকার।
জুয়া বন্ধে দেড়শ বছরেরও বেশি পুরনো আইনটি যুগোপযোগী করে সংশোধন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্ট আইনজীবী ও সাবেক বিচারপতিরা। তারা বলছেন, জুয়া নিয়ে প্রচলিত আইনটিতে সাজা নামমাত্র। ওই আইনে ‘ক্যাসিনো’ বলে কোনো শব্দই নেই। এছাড়া যে বিধিবিধান রয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা-ও চলে না। বলা চলে, আইনটি তার কার্যকারিতাই হারিয়েছে। তাই দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে আইনটির সংশোধন জরুরি।
জানা গেছে, সম্প্রতি ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন ক্লাবে অভিযান চালিয়ে বেশকিছু ক্যাসিনো সিলগালা ও অনেককে আটক করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কারও বিরুদ্ধেই জুয়া খেলার অপরাধে মামলা হয়নি। সব মামলা হয়েছে মাদক, মানি লন্ডারিং ও অস্ত্র আইনে।
পুরনো জুয়া আইনের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা নিশ্চয়ই পুরনো আইনটি নিয়ে নতুন করে চিন্তা করব। কারণ আমরা জানতামই না জুয়া এ রকম হয়। বাস্তবতার নিরিখে আমাদের জুয়া খেলা বন্ধ করতে হবে এবং কার্যকর আইন তৈরি করতে হবে।’
১৮৬৭ সালের বঙ্গীয় প্রকাশ্য জুয়া আইনের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নরের প্রজারা যেসব এলাকায় বসবাস করে সেখানে প্রকাশ্যে জুয়ার জন্য শাস্তি প্রদানের এবং সাধারণ ক্রীড়াভবনের ব্যবস্থা করার জন্য একটি আইন।’ ঔপনিবেশিক শাসনামলে বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নরের শাসনাধীন এলাকায় প্রকাশ্য জুয়া খেলার অপরাধে শাস্তি এবং সাধারণ ক্রীড়াভবনের ব্যবস্থা করার জন্য আইনটি প্রণয়ন করা হয়।
আইনের ১ ধারায় জুয়ার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘ক্রীড়া’ শব্দ দ্বারা জুয়া বা বাজি ধরা বোঝাবে (কেবল ঘোড়দৌড়ের জন্য ধরা বা জুয়া খেলা ব্যতীত)। খেলার কাজে ব্যবহৃত যেকোনো হাতিয়ার বা সামগ্রী ‘ক্রীড়াসামগ্রী’ শব্দের অন্তর্গত।
ধারা-৩ এ বলা আছে, ‘এ ধরনের জুয়া খেলা দণ্ডনীয় অপরাধ। যেকোনো ঘর, স্থান বা তাঁবু জুয়ার আসর হিসেবে ব্যবহৃত হলে তার মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী, জুয়ার ব্যবস্থাপক বা এতে কোনো সাহায্যকারী তিন মাসের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ২০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। এ রকম কোনো ঘরে তাস, পাশা, কাউন্টার বা যেকোনো সরঞ্জামসহ কোনো ব্যক্তিকে জুয়ারত বা উপস্থিত দেখতে পাওয়া গেলে তিনি এক মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০০ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
দেশে জুয়াবিরোধী একটি আইন থাকলেও রাজধানীতে গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন ক্রীড়া-ক্লাবের জুয়ার আসর থেকে আটক শতাধিক ব্যক্তির কারও বিরুদ্ধেই ওই আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
দেশে ‘পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট, ১৮৬৭’ নামের যে আইনটি রয়েছে সেটি রাজধানীতে প্রয়োগ করার সুযোগ নেই। এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা ছাড়া সমগ্র বাংলাদেশে ইহা প্রযোজ্য হইবে’। অন্যদিকে, ‘ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬’ এর ৯২ ধারায় প্রকাশ্যে জুয়া খেলার জন্য মাত্র ১০০ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে।
রাজধানীর ক্লাবগুলো থেকে জুয়া এবং ক্যাসিনোর বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম জব্দ করা হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ‘দুর্বল’ আইনের কারণেই আটকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই। তারা জুয়াবিরোধী আইন যুগোপযোগী করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
জুয়া ও ক্যাসিনো নিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, “জুয়া খেলা বন্ধে যে আইন আছে তা হচ্ছে ‘প্রকাশ্য জুয়া আইন- ১৮৬৭’। এটার কোনো প্রয়োগ নেই। আইনটি আসলে আগেকার আমলে বিভিন্ন মেলায় যে জুয়ার আসর বসত, সেটি বন্ধের জন্য। কিন্তু ক্যাসিনোতে গোপনে খেলা হয়। এখানে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়। এ ক্যাসিনোর বিষয়ে কোনো আইন নেই। তাই বেআইনিভাবে ক্যাসিনোগুলো চলছে।”
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু জুয়ার ব্যাপারে দেশে কোনো কার্যকর আইন নেই, তাই অতিদ্রুত এ ব্যাপারে একটি কঠোর আইন করা দরকার।’
ক্যাসিনো ও জুয়ার আইন নিয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের দেশের অধিকাংশ আইনই ঊনবিংশ শতাব্দীতে করা। যে দেশ ওই আইনগুলো করেছিল, এখন সেখানেও ওই আইন খুঁজে পাওয়া যাবে না। আইনগুলো নিয়ে ব্যাপকভাবে চিন্তা করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘জুয়া নিয়ে যে আইনটা রয়েছে, তার সাজা একেবারেই অপ্রতুল। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ অপরাধের দায়ে সাজা বাড়ানো উচিত। একই সঙ্গে, আইনটি জামিন অযোগ্যও হতে হবে। নয়তো অপরাধীরা জামিনে বেরিয়ে পরদিনই আবার জুয়া খেলবে।’
বর্তমানে জুয়া বা ক্যাসিনো বন্ধে যে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করা হয়েছে, আইন সংশোধন না হলে সেই যুদ্ধে জয় লাভ করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু এ খেলার পর টাকা পাচার করা হচ্ছে, তাই মানিলন্ডারিং আইনে অনেক মামলা হচ্ছে বা তাদের বিচার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনেও করা হচ্ছে। আশা করি, তাদের বিচার মানিলন্ডারিং আইনে হওয়া দরকার।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘জুয়া নিয়ে দেশে বর্তমানে প্রচলিত আইনটি অনেক পুরনো, দেড়শ বছরেরও বেশি সময় আগে করা আইন। যখন আইনটি করা হয়েছিল, ক্যাসিনো কী, সেটা তখন কেউ জানতই না। তখন গ্রামের মেলা বা কোনো আসরে জুয়া খেলা হতো, সেই মাঠে বা আসরে খেলায় জড়িতদেরকে শাস্তি দেয়া হতো। এজন্য ওই আইনে সাজাও ছিল খুব কম।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে প্রেক্ষাপট অনেক বদলে গেছে। এখন ক্যাসিনোতে জুয়া খেলা হয়, সেখানে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়। নানা ধরনের অপরাধ হয়। এজন্য প্রেক্ষাপট ও বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত আইনটি যুগোপযোগী করা দরকার।’
এ বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘ক্যাসিনো বা জুয়া সাধারণ মানুষের জন্য কোনো খেলা নয়, এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এজন্য দেশের ফাইভস্টার হোটেলগুলোতে অনুমতি দেয়া আছে। এর বাইরে ক্যাসিনো বা জুয়া খেলার কোনো নিয়ম নেই।’
তবে ক্যাসিনো বা জুয়া বন্ধে আইনের কোনো প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন এ আইনজীবী। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু এটি তৎকালীন সময়ে অর্থাৎ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানে জুয়া নিষিদ্ধ বা অবৈধ ঘোষণা করেছেন, সেখানে আইনের কোনো প্রয়োজেন নাই। কারণ যেখানে জুয়া খেলা নিষেধ সেখানে আইনের প্রয়োজন পড়ে না। আর যে খেলা নিষেধ সেটি কীভাবে খেলে দেশের সাধারণ জুয়াড়িরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবশ্যই এটি জানে। তারা জেনেও এসব অবৈধ জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই খতিয়ে দেখা দরকার এসবের সঙ্গে কারা কারা জড়িত।’
তিনি আরও বলেন, জুয়া নিয়ে নতুন আইন তখনই করা প্রয়োজন হবে যখন জুয়া খেলা সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
‘দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগার ওপরে এসব হচ্ছে। তারা জানে কারা এসব করছে। এর সঙ্গে রাজনীতিবিদ, পুলিশ জড়িত। কে জড়িত না- সেটাই এখন খুঁজে বের করতে হবে। জড়িতদের চিহ্নিত করতে হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে’, যোগ করেন মনজিল মোরসেদ।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে প্রথম অভিযান চালায় র্যাব। এখানে জুয়া-ক্যাসিনো চালানোয় ক্লাবের কর্ণধার যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গুলশানের বাসা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়। ওইদিন মতিঝিলে ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ও গুলিস্তানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাবেও অভিযান চালানো হয়। এসব অভিযানে জুয়া-ক্যাসিনোর বিপুল সরঞ্জাম, টাকা জব্দের পাশাপাশি ১৪২ জনকে আটক করা হয়।
যুবলীগ নেতা খালেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও মুদ্রাপাচার আইনে মামলা হয়েছে। এছাড়া আটক অন্যদের ছয়মাস থেকে এক বছর মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গত রোববার পুলিশ মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া, আরামবাগ ও দিলকুশা ক্লাবে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ জুয়ার সামগ্রী জব্দ করে। একটি ক্লাবে মদ এবং এক লাখ টাকাও পাওয়া যায়। এসব ক্লাব থেকে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তাই কারও বিরুদ্ধে মামলাও হয়নি। তবে, জব্দ করা মালামাল ধ্বংস করতে এবং উদ্ধার হওয়া টাকা কোথায় জমা দেয়া হবে সে ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় মাদক এবং মানিলন্ডারিং আইনে একাধিক মামলা হয়েছে বলেও সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ‘ঢাকা মহানগর পুলিশ ট্রাফিক আইনে জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে সময়োপযোগী করেছে। জুয়া বা বাজির ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশে যে ধারা আছে সেটাও যুগোপযোগী করা প্রয়োজন।’
দেশে ক্যাসিনো নিয়ে চলমান ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে মতামত জানতে চাইলে বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে যে আইনশৃঙ্খলা নেই তা এখন চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায়। তাদের (প্রশাসন) নাকের ডগার ওপরে এসব হচ্ছে। তারা জানে কারা এসব করছে।’
তিনি বলেন, যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এসবের সঙ্গে জড়িত তাদের ধরতে সরকার যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে সরকারের ভাবমূর্তি একেবারে তলানিতে চলে যাবে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে বিচারপতি আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতা, যুবলীগ-ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতা, যারা সরকার পরিচালনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং এর সঙ্গে প্রশাসনের মধ্যে যাদের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, সেই পুলিশ বাহিনীও জড়িত। পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধেও বক্তব্য আসছে যে, তাদেরকেও রীতিমতো মাসোহারা দেয়া হতো ক্যাসিনো চালানোর জন্য।’
তিনি বলেন, “ক্যাসিনো চালানো বাংলাদেশের আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, দেশে এটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টিতে এটি আগেই ধরা পড়া উচিত ছিল। তারা এখন বলেন যে, ‘আমরা এ ব্যাপারে কিছু জানতাম না’। আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে মনে করি, এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।”
আরপি/ এ্মএএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: