রাজশাহী মঙ্গলবার, ১৪ই মে ২০২৪, ১লা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


‘আমি করোনা রোগী’- কাঁদতে কাঁদতে বললেন সাহেদ


প্রকাশিত:
১৬ জুলাই ২০২০ ২১:৪৯

আপডেট:
১৬ জুলাই ২০২০ ২১:৪৯

করোনাভাইরাসের টেস্ট জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

করোনাভাইরাসের টেস্ট জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই মামলায় রিজেন্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজের ১০ দিন ও জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক শিবলীর সাত দিন রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

এদিন রিমান্ড শুনানির আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাহেদকে কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। এর পরই তাঁকে সিএমএম আদালতের সপ্তমতলায় লিফটের মাধ্যমে তোলা হয়। তাঁকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের আদালতে তোলা হয়। আদালতের ভেতরে নেওয়ার পর তাঁকে কাঠগড়ায় রাখা হয়। এরপরে তাঁকে ঘিরে রাখে পুলিশ সদস্যরা।

আদালতের বিচারক তাঁর চেয়ারে বসলে সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) মামলার নম্বর ধরে ডাক দেন। এর পরই সাহেদ বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি কি একটা কথা বলতে পারি?’ তখন তিনি কান্না শুরু করে দেন।

সাহেদ বলেন, ‘আমি দেড় মাস ধরে করোনায় আক্রান্ত। আমার বাবা করোনায় মারা গেছেন। আমি মার্চে প্রথম দিন যখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যাই তখন তারা আমাকে আমার হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন করতে বলেন। তখন আমি বলি আমার লাইসেন্সের ঘাটতি আছে। তখন তারা বলে যে লাইসেন্স নবায়নের জন্য সোনালী ব্যাংকে টাকা জমা দেন। আমি তাদের কথা মতো টাকা জমা দেই। সারা দেশে করোনা চিকিৎসার কাজ বেসরকারিভাবে আমরাই শুরু করেছি। তার পরও আমার সব প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করা হয়েছে।’

এরপর সাহেদের আইনজীবী মনিরুজ্জামান ও নাজমুল বলেন, ‘মাননীয় আদালত জামিন চাওয়ার অন্যতম কারণ সাহেদ অসুস্থ। পাশাপাশি তাঁর বাবা মারা গেছেন বলে তিনি শোকাহত। তিনি বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক, দেশ ছেড়ে কোথাও যাবেন না। তাই তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন পড়ে না।’

অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু শুনানিতে বলেন, আসামিরা মানুষের জীবন নিয়ে খেলেছে। তাদের থেকে মানুষ করোনা পরীক্ষা করে বিদেশে গিয়েছে, সেখানে রিপোর্ট ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণে দেশের নাম বিদেশে খারাপ হয়েছে। আসামিরা দেশ ও জাতির শত্রু। এ ঘটনার সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত আছে তা উদঘাটন করতে আসামিকে রিমান্ড নেওয়া আবশ্যক।

এর পর শুনানি শেষে বিচারক সাহেদ ও মাসুদ পারভেজের ১০ দিন এবং রিজেন্ট গ্রুপের জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক শিবলীর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গতকাল সকালে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুরে র‌্যাবের হাতে একটি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি ও একটি ম্যাগাজিনসহ সাহেদ ধরা পড়েন। পরে তাঁকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসেন র‍্যাব সদস্যরা। বিকেলে তাঁকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর বিকেল সোয়া ৫টার দিকে সাহেদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেখানে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। পরীক্ষা শেষে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসাও দেওয়া হয়। চিকিৎসা শেষে আবার ডিবিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

তার আগে র‍্যাব সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে সংস্থাটির মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘প্রতারণার অভিযোগে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমসহ প্রতিষ্ঠানের ১৬ জনের বিরুদ্ধে র‌্যাব বাদী হয়ে যে মামলাটি দায়ের করেছিল, সেটি বর্তমানে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে। আমরা গ্রেপ্তার সাহেদ করিমকে সেখানেই হস্তান্তর করব।’

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সাহেদের নামে প্রায় ৫৯টি মামলা রয়েছে। এ থেকেই তিনি কতটা প্রতারক সেটি বুঝতে পারছেন। গ্রেপ্তারের আগে কোনো জায়গায় স্থিরভাবে তিনি থাকেননি। রাজধানী থেকে বের হয়েছেন, আবার রাজধানীতে ঢুকেছেন আবার বের হয়েছেন। আমরাও তাঁকে প্রথম থেকেই সেভাবেই অনুসরণ করছিলাম। একপর্যায়ে তাকে ধরতে সক্ষম হই। গত ৬ জুলাইয়ের পর থেকে সাহেদ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে চলাফেরা করতেন। কখনো গণপরিবহনে, কখনো ব্যক্তিগত গাড়িতে, কখনো ট্রাকে চড়ে আবার কখনো হেঁটে চলাফেরা করেছেন।’ 

আরপি/ এএন-৩



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top