রাজশাহী শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ই আশ্বিন ১৪৩১


করোনার আত‌ঙ্কে নয়, ওদের ভয় ক্ষুধার জ্বালার


প্রকাশিত:
১৬ মে ২০২০ ০৬:১৩

আপডেট:
১৬ মে ২০২০ ০৬:১৪

ছবি: সংগৃহীত

শুক্রবার, রাত ৮টা। রাজধানীর নীলক্ষেত-পলাশী রোডের ফুটপাতের দেয়ালে ও রাস্তায় রশিতে ইট বেঁধে টানানো মশারির নিচে বিছানায় শুয়ে আছে বছর দেড়েক বয়সী ছোট্ট শিশু। একা একাই শুয়ে খেলা করছিল শিশুটি।

পাশেই উদোম শরীরে হাফপ্যান্ট পরিহিত আরেকটি শিশু পলিথিন বিছিয়ে বসা। নিচে ফুটপাতে একটি হাঁড়িতে ভাত চড়ানোর জন্য পানি দিয়ে পরিষ্কার করছে শিশুটির মা।পাশে আরেকটি শিশুকে কোলে নিয়ে বসেছিল তার বাবা।

হঠাৎ করেই বাবার কোলে থাকা শিশুটি নেমে মশারির নিচে ঢুকে পড়ল। ভেতরে যে শিশুটি এতক্ষণ আপন মনে খেলছিল সে শিশুটি ভয়ে কাঁদতে লাগল। শিশুটিকে কাঁদতে দেখে সমবয়সী অন্য শিশুটি মশারির ভেতরে দৌড়াদৌড়ি করতে লাগল।

কিছুক্ষণ পর শিশুটির মা দুষ্টুমিরত শিশুটিকে মশারির বাইরে নিয়ে এলো। এবার ওদের মা রাস্তার পাশে মাটির চুলায় ভাত রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল।লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সবাই যখন ভয়ে অস্থির।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভসসহ ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী পরিধান করে রাস্তাঘাটে বের হচ্ছেন। আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় শিশুদের ভুলেও ঘরের বাইরে বের হতে দিচ্ছেন না। সেখানে ভাসমান এসব পরিবারের সদস্যদের কারও পক্ষেই স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না।

ফুটপাতের যে পরিবারটির বর্ণনা দেয়া হলো, তিনটি খুদে শিশুসহ পাঁচ সদস্যের পরিবারের কারও মুখে মাস্ক নেই। করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে তারা ফুটপাতে নিত্যদিন কাটাচ্ছেন।কৌতূহলবশত এ প্রতিবেদক শিশুদের মায়ের কাছে ভাইরাসকে ভয় পান কি না, জানতে চাইলে নাজমা নামের ওই তরুণী বলেন, তার স্বামী একজন রিকশাচালক।

তিনি পলাশীতে একটি বাসায় বুয়ার কাজ করেন। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে স্বামীর আয় রোজগার নেই বললেই চলে। যে বাসায় তিনি কাজ করতেন, সে বাসা থেকেও বলে দিয়েছে পরিস্থিতি ভালো না হলে তাদের কাজের লোক লাগবে না।

এমন পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের আতঙ্কের চেয়ে তাদের কাছে ক্ষুধার জ্বালার ভয় বেশি।ফযধশধনাজমা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাস্তাঘাটে যতটুকু সাহায্য পান, তা দিয়ে কোনোভাবে দিন কাটাচ্ছেন।

শুধু নাজমা নয়, রাজধানী ঢাকায় তার মতো ভাসমান হতদরিদ্র পরিবারের ছোট-বড় সবাই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির চেয়ে আগামী দিনগুলোতে কী খেয়ে বাঁচবেন, সে নিয়ে বেশি চিন্তিত।

 

 

আরপি / এমবি



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top