চেয়ারম্যানের তিন মাসহ পরিবারে রয়েছে ১৫টি কার্ড, পেয়েছেন প্রবাসীও
নড়াইলে একের পর এক বেরিয়ে আসছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির নানা অনিয়মের তথ্য। ভিজিএফ'র চাল চুরির দায়ে পিরোলী ইউপি চেয়ারম্যানের নামে মামলা ও তাকে বহিষ্কার করা হয়।
একইভাবে ত্রাণের চাল চুরির অভিযোগ জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যানের নামে।জেলার ৩৯ ইউনিয়নের মধ্যে অন্তত ৩৫ ইউনিয়নে সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণে অনিয়ম রয়েছে।
সদরের হবখালী ইউনিয়নে এসব ছাপিয়ে অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানের পরিবারের কমপক্ষে ১৫ জন সদস্যের নামে ১০ টাকা কেজির চালের কার্ড থাকার খবর।
স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম চঞ্চলের আপন ও সৎমিলে তিনজন মা, আপন দুই ভাই, বোন, ভগ্নিপতি, ভাইপো, চাচা, মামা, বেয়াইসহ ১৫ জনের নামে কার্ডের সন্ধান পাওয়া গেছে।
ইউপি চেয়ারম্যানের মা রিজিয়া বেগম (ক্রমিক-৪১), নূরজাহান বেগম (ক্রমিক-৬২) ও রোকসানা বেগমের (ক্রমিক-৮০) নামে ভান্ডারীপাড়ার ১০ টাকা কেজির চালের কার্ড রয়েছে। এছাড়া বোন আইরিন (ক্রমিক-১০২) ও ভগ্নিপতি রওশন শেখের (ক্রমিক-১০৩) নামে রয়েছে আরও দুটি কার্ড।আপন ভাই কামরুজ্জামানের নাম ১১ ও ৬০ ক্রমিকে দুই জায়গায় রয়েছে।
অপর ভাই ঝন্নুর নামে ৪১৪ ক্রমিকে কার্ড রয়েছে। এখানেই শেষ নয় চেয়ারম্যানের ভাইপো সৌরভ আর বৌমা সুমীর নামে দুটি কার্ড করা হয়েছে। ভান্ডারীপাড়ায় চেয়ারম্যানের মামা মো. রবিউল ইসলামও (ক্রমিক-৮৫) কার্ডধারী।
হবখালী গ্রামে চেয়ারম্যানের বেয়াই আ. ওয়াদুদ মোল্যা (ক্রমিক-১৯৪) ও তার স্ত্রী তানজিরা (ক্রমিক-১০১) দুজনকেই কার্ড করে দেয়া হয়েছে। মামাতো ভাই ইকবাল, জাহিদ ও আরেক ভাই নাইমের নামে রয়েছে খাদ্যবান্ধব চালের কার্ড।
এছাড়া ভান্ডারীপাড়ার তামেশা বেগম, শিল্পীসহ পঞ্চাশোর্ধ্ব লোকের নাম তালিকায় আছে যারা বহু আগেই গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন। ভান্ডারীপাড়া কাজী তরিকুল যিনি প্রবাসে থাকেন, তার নামেও কার্ড রয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান চঞ্চলের বাড়ি ইউনিয়নের ভান্ডরীপাড়া গ্রামে। তার আপন ভাইপো মো. লিংকন রহমান ১০ টাকা দামের চালের ডিলার হওয়ায় অজান্তেই এসব চাল বিতরণ হচ্ছে অথবা অন্যত্র পাচার হয়ে যাচ্ছে।
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, হবখালী ইউনিয়নে দুটি ডিলারের মাধ্যমে ৬১৮টি কার্ডে হতদরিদ্রদের ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণ করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে ৩০৯টি কার্ডে চাল বিতরণ হয় চেয়ারম্যানের ভাইপো ডিলার মো. লিংকন রহমান এবং অপর ডিলার বাগডাঙ্গা বাজারে মো. জিন্নাহ মোল্যার মাধ্যমে। প্রতিনিয়ত এসব অনিয়ম হলেও তা দেখেন না তদারককারী কর্মকর্তা কিম্বা খাদ্য বিভাগের কেউ।
ডিলার মো. লিংকন রহমান বলেন, আমি তো তালিকা করিনা। এটা চেয়ারম্যান-মেম্বররা করেন। কেউ না আসলে তার পক্ষের কাউকে চাল দিয়ে দেয়া হয়। হবখালী ইউপি সচীব বিষ্ণুপদ সেন জানান, ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত সাপেক্ষে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ৯১টি কার্ড সংশোধনের জন্য বলা হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ে সেসব কার্ড সংশোধনের কাজ চলছে। চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম চঞ্চলকে তার পরিবারের এতগুলো লোকের নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড হবার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে কিছু ভুলত্রুটি ছিল। তা সংশোধন করা হচ্ছে।
তাছাড়া এরা সবাইতো গরিব। কর্মসূচির তদারককারী কর্মকর্তা (উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা) বিএম জাহিদ শাকিল বলেন, আমাকে একসাথে অনেকগুলো ফিল্ড দেখতে হয়। তাই সম্পূর্ণ সময় থাকতে পারি না। আমি যতটুকু সময় থাকি সেখানে তো কোনো অনিয়ম ধরা পড়ে না।
তবে আগের ডিলারের বিরুদ্ধে অফিসে অভিযোগ করেছি। হবখালী ইউনিয়নের ১০ টাকা কেজির চালে এতসব অনিয়মের ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম বলেন, একজন ডিলার বাতিল এবং অন্যজনকে কারণ দর্শানো এবং চেয়ারম্যানকে ও কারণ দর্শানোর কথা বলেন।
বাস্তবে দুই ডিলারের সাথে সরাসরি কখা বললে তারা শোকজ বা ডিলারশিপ বাতিলের কোনো পত্র পাননি বলে জানান। নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, মাঠ পর্যায়ের অনেক কার্ড এর ভুলত্রুটি আমাদের নজরে এসেছে।
মিডিয়া এক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সব কার্ডগুলো পুনরায় যাচাই এর জন্য। আশাকরি আগামীতে সমস্ত অনিয়ম সংশোধন হবে।
আরপি / এমবি

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: