রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ

দুর্নীতির সর্বোচ্চ নজির স্থাপন করেছে


প্রকাশিত:
৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১১:২৫

আপডেট:
৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২২:০০

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ

বালিশকান্ডকে পিছনে ফেলে দুর্নীতির সর্বোচ্চ নজির স্থাপন করেছে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ (ফেমিক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চার বছরে মেসার্স অনিক ট্রেডার্সের কাছ থেকে ৫১ কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার ১৬৬টি যন্ত্রপাতি কিনে ফেমিক।

যন্ত্রপাতির দামে অসঙ্গতি এবং নানান অনিয়মের কারণে ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল ৪ বছর পর্যন্ত এমন অনিয়মের ঘটনায় ২০ আগস্ট  দুদককে তদন্ত করে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন হাইকোর্ট।

অনিক ট্রেডার্স ৪১ কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার বিল পেয়েছে। যন্ত্রপাতির দাম বেশি দেখানোসহ বিভিন্ন অসঙ্গতির কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১০ কোটি টাকা আটকে দেয়। বকেয়া আদায় করার জন্য ২০১৭ সালের ১ জুন হাইকোটে রিট করেছিল অনিক ট্রেডাস ।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে অনিক ট্রেডার্সের সরবরাহ করা ১০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতির একটি তালিকা চেয়ে পাঠান। ফেমিক পরিচালক কামদা প্রসাদ সাহা ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ওই ১০ কোটি টাকার বিপরীতে দামসহ ১০ আইটেমের যন্ত্রপাতির একটি তালিকা দেন।

তালিকা অনুযায়ী মেলাতে গিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এসব দূর্নীতির চিত্র ফুটে উঠে।

একনজরে দূর্নীতির চিত্র: 

  •  ভিএসএ অনসাইড অক্সিজেন জেনারেটিং প্ল্যান্ট কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে পাঁচ কোটি ২৭ লাখ টাকা। যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এ যন্ত্রটি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের পেছনের কক্ষে তিন বছর তালাবদ্ধ। মরিচা ধরা তালা কড়া কেটে কক্ষে ঢুকতে হয়েছে।

 

  • সার্টেইন সিস্টেম ফর আইসিইউ/সিসিইউ বেডস। পর্দার খরচ দেখানো হয়েছে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কোরিয়াতে তৈরি এই পর্দা সাড়ে চার হাত প্রস্থ এবং ১২ হাত দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট। ১৬টি আধুনিক পর্দা রয়েছে। যার প্রতিটির দাম ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৫ টাকা। যন্ত্রপাতি থাকলেও তিন বছর কার্যক্রম নেই সিসিইউ ইউনিটটিতে। এই ওয়ার্ডের দায়িত্বে নিয়োজিত সিনিয়র স্টাফ নার্স রাজয়া সুলতানা বলেন, আমি প্রতিদিন ওই কক্ষটি খুলি, দেখাশোনা করি আবার বন্ধ করে বাসায় চলে যাই।

 

  •  তিনটি ডিজিটাল প্রসেসর সিস্টেম ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি উল্লেখ করা হলেও কোরিয়ার তৈরি মেশিনটি অব্যাবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে কেনা অবধি।

 

  •  ভ্যাকুয়াম প্ল্যান্ট দাম দেখানো হয়েছে ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পুরনো দন্ত বিভাগে স্থাপন করা হলেও তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে যন্ত্রটিও।

 

  • বিআইএস মনিটরিং সিস্টেম কেনা হয়েছে ২৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে। প্রতিবেদনে অপারেশন থিয়েটারে স্থাপন করার কথা উল্লেখ থাকলেও সরজেমিনে মেশিনের দেখা মেলেনি। স্টোরকিপার আব্দুর রাজ্জাক দাবি করেছেন, এই মেশিনটি আছে, হয়তো অন্য কোনো নামে কোথাও পড়ে আছে। তবে কোথায় আছে তা আমি জানি না।

 

  • চারটি থ্রি হেড কার্ডিয়াক স্টেথিসস্কোপের দাম দেখানো হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা। দুটি সিসি ওয়ার্ড ও দুটি মেইল মেডিসিন ওয়ার্ডের দুই ইউনিটে আছে। এগুলো ব্যবহার হয়।

 

  • দুটি ফাইবার অপটিক ল্যারিনগোসস্কোপ সেটের একটি প্রসূতি ওটিতে এবং একটি জেনারেল ওটিতে রয়েছে। এ দুটির দাম দেখানো হয়েছে ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

 

  • ছয়টি টোমেটিক স্কাব সিস্টেম চালু আছে, যার দাম দেখানো হয়েছে ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ওয়ার্ডের স্টাফ নার্স শুক্তি চক্রবর্ত্তী জানান, এগুলো চালু আছে রোগী আসলে দেখানো হয়।

 

  • ১০টি চাইনিজ সাকশন মেশিন দাম দেখানো হয়েছে তিন লাখ টাকা। বর্তমানে অপারেশন থিয়েটারে চালু আছে।

 

  • ২০টি ড্র সিস্টেম ইকুইপমেন্টের খরচ দেখানো হয়েছে চার লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা। আইসিইউ ওয়ার্ড চালু না থাকায় অকজো অবস্থায় পড়ে আছে যন্ত্রপাতিও।


প্রকল্পের দায়িত্বরত পরিচালকবৃন্দ:

২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত মোট পাঁচজন চিকিৎসক প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

  • আ স ম জাহাঙ্গীর চৌধুরী
  • এ বি এম শামসুল আলম
  • মো. ওমর ফারুক খান
  • গণপতি বিশ্বাস ও
  • আবুল কালাম আজাদ

এর মধ্যে ওমর ফারুখ খান মারা গেছেন।

হাসপাতালের পরিচালকদের বক্তব্য:

  • ফমেকের তৎকালীন প্রজেক্ট পরিচালক ডা. আ স ম জাহাঙ্গীর চৌধুরী বলেন, আমি প্রথম প্রকল্প পরিচালক ছিলাম। যে কেনাকাটার কথা বলা হচ্ছে তা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। যা প্রকল্পের বিষয়ই ছিল না, তার দায়ভার প্রকল্পের ওপর কেন বর্তাবে তা আমার বোধগম্য নয়।

 

  • তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক ডা. গণপতি বিশ্বাস বলেন, আমি প্রকল্প পরিচালক থাকা অবস্থায় যন্ত্রপাতি ক্রয়ে দুর্নীতির কোনো ঘটনা ঘটেনি। আদালতে কোনো বিষয়ে মামলা হয়েছে কিংবা আদালত কী নির্দেশনা দিয়েছেন।

 

  • ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, আদালতের নির্দেশনা আমি পাইনি। পেলে আদালতের নির্দেশনা মেনে চলব। দুদক যদি তদন্ত করে তবে সহযোগিতা করব আমি। তিনি বলেন, ১০ কোটি টাকার যেসব যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে তার মূল্য কিছুটা অতিরিক্ত দেখানো হয়েছে। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখব আমি।

 

 

আরপি/এমএইচ

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top