রোহিঙ্গা ইস্যু
মিয়ানমারে না ফিরতে রোহিঙ্গাদের ইন্ধন দেয়াসহ তিনটি অভিযোগে তদন্ত হবে
সম্প্রতি দিনক্ষণ ঠিক করেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হয়। এ কারণে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শিবিরে কিছু দেশি-বিদেশি এনজিও'র কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, মিয়ানমারে না ফেরার জন্য রোহিঙ্গাদের ইন্ধন দেয়াসহ তিনটি অভিযোগে স্থানীয় প্রশাসন এবং গোয়েন্দারা বেশ কিছু দেশি-বিদেশী এনজিও'র বিরুদ্ধে তদন্ত করবেন।
পাশাপাশি, শিবিরে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড হচ্ছে কিনা তা নিয়েও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হবে। অন্যদিকে এনজিওগুলো বলছে, এনজিওদের নিয়ে ঢালাও অভিযোগ করে ভিন্ন পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে।এই অভিযোগ ঢালাওভাবে করা যাবে না। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সুনির্দিষ্টভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন তারা।
সরকারের এনজিও বিষয়ক ব্যুরো বলেছে, পুরোনো একটি তালিকায় ৪১টি এনজিও কর্মকাণ্ডে নানান অভিযোগ এসেছিল। সেগুলোও খতিয়ে দেখা হবে।
সম্প্রতি দিনক্ষণ ঠিক করেও প্রত্যাবাসন শুরু করতে না পারা এবং এরপর রোহিঙ্গাদের একটি সমাবেশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারপরই এবিষয়ে চূড়ান্ত তদন্তের জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।
তিনটি প্রশ্নে তদন্ত:
নির্ভরযোগ্য সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছু দেশি-বিদেশি এনজিওর বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগের তদন্ত করা হবে:
এক, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মিয়ানমারে ফেরত যেতে না চাওয়ার পিছনে কোন ইন্ধন দেওয়া হচ্ছে কিনা।
দুই, সম্প্রতি শরণার্থী শিবিরের ভেতরে রোহিঙ্গাদের বড় একটি সমাবেশ করার ক্ষেত্রে অর্থ যোগান বা অন্যান্য সহযোগিতা করা হয়েছে কিনা ।
এবং তিন, শরণার্থী শিবিরের ভেতর রাষ্ট্রবিরোধী কোন কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে কিনা।
এ তদন্ত করছে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম আব্দুস সালাম বলেছেন, পুরনো একটি তালিকায় ৪১টি এনজিও’র বিরুদ্ধে নিয়মভঙ্গসহ নানান তৎপরতা চালানোর যে অভিযোগ এসেছিল, সেগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
‘৪১টার মতই আমাদের তালিকায় ছিল। আপাতত সেটিই আছে। নতুন যে প্রক্রিয়া চলছে বা সর্বশেষ যে ইস্যুগুলো এসেছে, তাতে সংখ্যা বাড়তে বা কমতে পারে।’
কিছু এনজিও বন্ধ:
সম্প্রতি রোহিঙ্গা শিবিরে মুক্তি নামের একটি এনজিও'র কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এই এনজিওটি জমি নিড়ানির জন্য বেশ কয়েক হাজার যন্ত্র তৈরি করেছিল। এসব যন্ত্র শিবিরে সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহার হতে পারে এমন অভিযোগে সরকার তার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
এরও আগে, গত কয়েকমাসে বিভিন্ন কারণে আরও ৬টি এনজিওর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। এগুলো দেশি এনজিও।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার দুই বছর পূর্ণ হয় গত ২৫ শে আগস্ট। দুই বছর পুরো হওয়ার সেদিন শিবিরে রোহিঙ্গারা সমাবেশ করে বিভিন্ন দাবি জানিয়েছিল।
এর কয়েকদিন আগে রোহিঙ্গাদের আপত্তির কারণে তাদের ফেরত পাঠানোর দ্বিতীয় দফার একটি চেষ্টাও ব্যর্থ হয়।
এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের অনেকেই রোহিঙ্গাদের এসব কর্মকাণ্ডে ইন্ধন বা উস্কানি দেয়ার অভিযোগ তোলেন।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর কে এম আব্দুস সালাম বলেছেন, বার বার সতর্ক করার পরও কিছু এনজিও বিভিন্ন তৎপরতা চালাচ্ছে।
‘গত বছর আমরা বার বার বলেছি যে, এনজিওরা মানবিক সহায়তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, এর বাইরে তারা যেন কোন কিছুতে না জড়ায়।’
‘এখন বিভিন্ন দিক থেকে জানা গেছে যে, কিছু কিছু এনজিও তাদের ডিসকারেজ (অনুৎসাহিত) করেছে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে। আমরা খুঁজে দেখছি কারা এটা করেছে?’
প্রতিক্রিয়ায় যা বলছে এনজিওগুলো:
কক্সবাজারে শিবিরগুলোতে ১৩০টির বেশি দেশি বিদেশী এনজিও কাজ করছে।
তাদের একটি ফোরামের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এনজিওদের নিয়ে ঢালাও অভিযোগ করে ভিন্ন পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত একটি এনজিও'র একজন কর্মকর্তা শিউলী শর্মা বলেন, ঢালাও অভিযোগ না করে সুনির্দিষ্টভাবে তদন্ত করা উচিত।
‘যাচাই করতে হবে। একজনে বললো নিয়ম ভঙ্গ করেছে, আর সবাই তাতে লাফাচ্ছে, বিষয়টি এমনই হয়েছে আর কি। এই অভিযোগ ঢালাওভাবে করা যাবে না। মানে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সুনির্দিষ্টভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে’- বলেন তিনি।
আরপি/এসআর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: