রাজশাহী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১


আগুনে পুরো শেষ হল অসংখ্য পরিবার


প্রকাশিত:
১ মার্চ ২০২৪ ১১:৪৪

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:২৩

ফাইল ছবি

বেইলি রোডের রেস্তোরাঁয় বান্ধবী আর তুতো বোনদের নিয়ে খেতে গিয়েছিল নিমু। ভবনে আগুন লাগলে তারা ছয়জন ভেতরে আটকা পড়ে। আগুন যখন নিচ থেকে ওপরের দিকে ক্রমশ তীব্র হচ্ছিল, তখন ১৮ বছর বয়সি নিমু ফোন করেন তার বাবাকে। বাঁচার আকুতি জানিয়ে নিমু তার বাবাকে বলেন, ‘বাবা, আমাকে বাঁচাও, আমি আটকে পড়েছি।’

এর কিছুক্ষণ পরই বন্ধ হয়ে যায় নিমুর মোবাইল ফোন। বাবা আবদুল কুদ্দুস দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে জানতে পারেন, তার মেয়ের মরদেহ ইতোমধ্যেই নেয়া হয়ে গিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।

আবদুল কুদ্দুস ভারাক্রান্ত কন্ঠে চিৎকার দিয়ে মেয়ের জন্য আহাজারি করে বলেন, ‘মেয়েটা মৃত্যুর সময় বারবার বাবা বলে চিৎকার দিয়েছিল।’ নিমু তার খালাতো বোন আলিশা ও রিয়াসহ পাশের বাসার আরও তিনজন বান্ধবীর সঙ্গে ভবনটির একটি রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিল। তারা ছয়জনই আগুনে মারা গেছেন বলে জানান আলিশার মামা।

‘কোথায় গেলি ও সম্পূর্ণা, ও সান, ও পপি...। এ কী হয়ে গেল আমাদের? আগুনে একটি পরিবার শেষ হয়ে গেল?’। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গের সামনে এভাবেই চিৎকার করছিলেন পীযূষ পোদ্দার। বেইলি রোডের একটি রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন তাঁর বোন পপি, ভাগনে সান রায় (১০) ও ভাগনি সম্পূর্ণা রায় (১২)।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মর্গের সামনে কথা হয় পীযূষ পোদ্দারের সঙ্গে। তিনি জানান, ভাগনি সম্পূর্ণা পড়ত সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। আর সান রায় পড়ত উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণিতে। মা–বাবার সঙ্গে মালিবাগে থাকত তারা।

পীযূষ পোদ্দার  বলেন, রেস্তোরাঁয় আগুন লাগার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তিনি সেখানে চলে যান। এসে দেখেন দাউ দাউ করে রেস্তোরাঁ জ্বলছে। কিন্তু কোথাও পপি, সম্পূর্ণ ও সানের খোঁজ পাননি। এরপর মধ্যরাতে ছুটে এসেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে। সম্পূর্ণা ও সানের মরদেহ খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু পপির কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না।

বেইলি রোডের বহুতল ভবনের আগুনে সম্পূর্ণা, সানের মতো ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার রাত একটার পর একে একে বেইলি রোড থেকে লাশের সারি আসতে থাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। খবর পেয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ছুটে আসেন নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা।

একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করতেন মেহেরা কবির (দোলা)। তাঁর বোন মায়েশা কবির পড়তেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুই বোন মিলে মতিঝিলে থাকতেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে মতিঝিল থেকে তাঁরা বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁয় খেতে আসেন। আগুনে পুড়ে এই দুই বোনও মারা গেছেন। তাঁদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের বাতাস।

দুই সন্তান আয়ান (৮) ও আয়াতকে (৬) নিয়ে বেইলি রোড এলাকায় বসবাস করতেন নাজিয়া আক্তার (৩১)। তাঁর স্বামী মো. আশিক পেশায় ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ব্যবসার কাজে বনানীতে যান। নাজিয়া দুই সন্তানকে নিয়ে ভবনের তৃতীয় তলার একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যান। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তিনি স্বামীকে ফোন দিয়ে বলেন তাঁরা বিপদে আছেন।

নাজিয়ার আত্মীয় রিফাত হোসেন। তিনি ঘটনার সময় ওই ভবনের সামনে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ ভবনটির নিচতলায় বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পান। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তৃতীয় সিঁড়ি থেকে আয়ানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আগুনে মারা গেছেন নাজিয়া এবং আয়াতও। ঢাকা মেডিকেলের মর্গে তাঁদের মরদেহ রাখা হয়েছে।

মধ্যরাত থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে স্বজনহারাদের ভিড়। তাঁদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বাতাস। তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার এতটুকু ভাষাও যেন জানা নেই কারও।

 

 

আরপি/যেডএফ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top