রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ১৬ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


দেশের কূটনীতিক অবস্থা অনিশ্চিত


প্রকাশিত:
৩০ নভেম্বর ২০১৯ ২০:২২

আপডেট:
১৬ মে ২০২৪ ১৬:৪১

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

কূটনীতিতে এখন অনিশ্চিত পরিস্থিতিই একমাত্র নিশ্চিত সত্য। উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং সস্তা জনপ্রিয় মতবাদের (পপুলিজম) উত্থান, প্রযুক্তির ব্যবহার, যোগাযোগমাধ্যমের পরিবর্তনসহ সমসাময়িক অন্য বিষয়গুলো এখনকার দিনে কূটনীতিকে বেশি জটিল করে তুলেছে। সামাজিক গণমাধ্যমের কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেশ বা সরকারের চেয়ে বর্তমানে সাধারণ জনগণের হাতে বেশি ক্ষমতাও গোটা কূটনীতিক মহলকে ব্যতিব্যস্ত রাখে।

অনান্য দেশের মতো বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি এবং কূটনীতিকদের কার্যক্রমও এসব নতুন চালকের কারণে পরিবর্তিত হচ্ছে। নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে কূটনীতিকরা জাতীয় স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা করছেন।

এ বিষয়ে ভারতে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত লিয়াকত আলী চৌধুরী বলেন, ‘কূটনীতির যে মৌলিক চ্যালেঞ্জ সেটি একই রয়েছে কিন্তু এর ধরন পাল্টেছে।’ তাদের সময়ে কূটনীতিতে উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং সস্তা জনপ্রিয় মতবাদগুলো থাকলেও তা বর্তমানের মতো এত ব্যাপকভাবে ছিল না বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তবে এটি মনে রাখতে হবে, দু-একটি দেশ ছাড়া অন্য দেশে বিষয়টি সরকারের নীতি নয়, বরং এটি ব্যক্তি বিশেষের এজেন্ডা, যা জনগণ পছন্দ করে থাকে।’


যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যোগাযোগ অত্যন্ত দ্রুতগতিতে হয়। যা অনেকের কাছে চ্যালেঞ্জ আবার অনেকের কাছে সুযোগ।’ তিনি বলেন, ‘এটি নির্ভর করছে কে এটি ব্যবহার করছে এবং এই ব্যবহার সংক্রান্ত কতটুকু জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা তার আছে।’

বর্ষীয়ান এই কূটনীতিবিদের মতে, ‘উদার মানসিকতা নিয়ে কূটনীতিকদের নেতৃত্ব দেওয়া এখন অনেক বেশি প্রয়োজন।’

শুধু তা-ই নয়, নতুন চিন্তা করতে পারে (আউট অব দ্য বক্স), জ্ঞানসম্পন্ন, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারা কূটনীতিক এখন বেশি প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘শুধু জ্ঞান নয়, এটি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে সেটিও জানতে হবে।’

পরিবর্তিত পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমাদের নতুন জোট খুঁজে বের করতে হবে।’

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন স্বল্পোন্নত দেশ ছিল তখন আমরা এর নেতৃত্ব নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমরা এর থেকে বের হয়ে এসেছি এবং নতুন নতুন জোটে যোগদানের সময় এসেছে।’

একই ধরনের মত প্রকাশ করে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফায়েজ আহমেদ বলেন, ‘আগে কূটনীতি দুই দেশ বা সরকারের মধ্যে হতো। কিন্তু এখন সেটি পরিবর্তিত হয়ে মানুষের জন্য হয়েছে।’

অন্যরা কীভাবে কূটনীতি করছে সেটি অনুসরণ না করে নিজস্ব ধরনের পররাষ্ট্র নীতি তৈরি করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে নীতি তৈরি করা উচিত।’

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশিদের ব্যবহার করে আমরা আমাদের পররাষ্ট্র নীতির লক্ষ্য অর্জন করতে পারি। তবে এক্ষেত্রে আমাদের সাবধান থাকতে হবে তারা যেন দেশীয় রাজনীতির বিভাজনের শিকার না হন।’

দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশে ট্র্যাক টু কূটনীতিও বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভালো ফল আনতে পারে বলে মনে করেন মুন্সী ফায়েজ।

তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য সম্প্রসারণে ব্যবসায়ীদের ব্যবহার অথবা ক্রীড়া বা সাংস্কৃতিক কূটনীতি এখন আর শুধু সরকারের মন্ত্রী ও আমলাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বেসরকারি নাগরিক যেমন ব্যবসায়ী, খেলোয়াড় বা শিল্পীদেরও এখন কূটনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।’

 

 

আরপি/এমএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top