রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


সিইসির বিরুদ্ধে ৪ কমিশনার


প্রকাশিত:
২৫ নভেম্বর ২০১৯ ২১:৪৫

আপডেট:
২৮ মার্চ ২০২৪ ১৪:৪৬

সিইসি কেএম নূরুল হুদা

সিইসি কেএম নূরুল হুদার বিরুদ্ধে ইসি সচিবালয়ের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত না করার অভিযোগ তুলেছেন চার কমিশনার। পাশাপাশি ইসির সিনিয়র সচিবের ওপরও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। এই ক্ষোভের কথা জানিয়ে রবিবার (২৪ নভেম্বর) তারা সিইসিকে একটি ইউনোট (আন-অফিসিয়াল নোট) দিয়েছেন।

এই চার কমিশনার হলেন মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন কেনা-সংক্রান্ত প্রকল্পের বিষয়ে অবহিত না করার অভিযোগ তুলে এই চার জন ইসি সচিবকে ইউনোট দিয়েছিলেন। পরে বিষয়টি নিয়ে কমিশন সভায় আলোচনা হয় এবং সব কার্যক্রম কমিশনারদের অবহিত করা হবে বলে সিদ্ধান্তও হয়েছিল।

জানা গেছে, এই ইউনোটে সম্প্রতি কমিশন সচিবালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৩৩৯ জন কর্মচারী নিয়োগ, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও সচিবালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে চার কমিশনারকে অবহিত না করার অভিযোগ করা হয়েছে। ইউনোটে সংবিধান, আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ) ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে একক সিদ্ধান্ত গ্রহণকে আইন ও বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, তিনি ইউনোটের বিষয়ে কিছু জানেন না। নিয়োগসহ সব সিদ্ধান্ত আইন অনুযায়ী হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, নিয়োগের বিষয়ে কোনও অভিযোগ তিনি পাননি।

স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ হয়েছে দাবি করে মো. আলমগীর বলেন, ‘নিয়োগে কোনও অনিয়ম হলে কমিশন তদন্ত করে দেখতে পারে। কমিটির সুপারিশ কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী আমি সিইসির কাছে উপস্থাপন করেছি।’ ২০০৯-২০১০ সাল থেকে নিয়োগ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম এভাবেই পরিচালিত হয়ে আসছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জানা গেছে, ইসি সচিবালয়ে ১২ থেকে ২০তম গ্রেডের ৩৩৯ জন কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব পদের বিপরীতে ৮৫ হাজার ৮৯৩ জন আবেদন করেছিলেন। এই নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনায় ইসির ব্যয় হয় ৪ কোটি ৮ লাখ টাকা। জালিয়াতির দায়ে মৌখিক পরীক্ষায় ৩৫ জনকে বহিষ্কার করা হয়। ইসির জনবল শাখা থেকে সম্পন্ন করা এই নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কমিশনাররা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম নিয়ে গত ১৪ নভেম্বর সিইসির সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার একপর্যায়ে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, নিয়োগের বিষয় ও এ-সংক্রান্ত ব্যয় নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারবহির্ভূত। বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনারও সমর্থন দেন।

ওই সভায় সচিব আরও বলেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী শুধু নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয়ে কমিশনের অনুমোদনের প্রয়োজন আছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অন্যান্য বিষয়ে সিইসির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এই পটভূমিতে ইউনোট দিলেন চার কমিশনার।

ইউনোটে বলা হয়, সচিবালয়ের সব কর্মকর্তা কর্মচারী ইসির সার্বিক নিয়ন্ত্রণে অর্পিত সব দায়িত্ব পালন করবে এবং সচিব সিইসির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের কাছে দায়ী থাকবেন। সিনিয়র সচিবের বক্তব্য ও বর্তমান অবস্থায় ১৪(২) উপধারা অনুযায়ী সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ওপর নির্বাচন কমিশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ অনুপস্থিত। তারা শুধু সচিব ও সিইসির নিয়ন্ত্রণে আছেন।

এতে আরও বলা হয়, মাঝে মধ্যে নির্বাচনের প্রশিক্ষণ-সংক্রান্ত কোনও কোনও বিষয় উপস্থাপন করা হলেও অন্য কোনও আর্থিক বিষয় কমিশনকে অবহিত করা হয় না, যা নির্বাচন কমিশন আইন, ২০০৯-এর ১৬ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

ইসি সচিবালয়ের কার্যক্রম প্রসঙ্গে ইউনোটে আরও বলা হয়েছে, ইসি সচিবালয় আইন, ২০০৯-এর ধারা ৪ ও অন্যান্য ধারায় বর্ণিত কমিশনের ওপর অর্পিত সব কাজে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কমিশনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এছাড়া সচিবালয় এককভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে; তা ১৪ নভেম্বর সভায় সিনিয়র সচিব তুলেও ধরেছেন। এটা সংবিধান, আরপিও এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ এবং সংশ্লিষ্ট বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

ইউনোটে চার কমিশনার বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও নির্বাচন কমিশনের সব বিষয় সংবিধানসহ বিদ্যমান সব আইন ও বিধি অনুযায়ী পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ বিঘ্নিত হবে। একই সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।

এসব বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের অবহিত করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে ইউনোটে।

এ বিষয়ে কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়োগের বিষয় নয়, কমিশনের অনেক সিদ্ধান্ত আমরা জানতে পারি না। সিদ্ধান্তগুলো আমাদের অবহিতও করা হয় না। এটা যাতে করা হয়, সে জন্য আমরা জানিয়েছি।’



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top