রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর দর্শন এখনও প্রাসঙ্গিক


প্রকাশিত:
৮ আগস্ট ২০২২ ০৬:৫৬

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৩৮

সংগৃহিত

দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর দর্শন এখনও প্রাসঙ্গিক। তার দেখানো পথেই বর্তমান সংকটের উত্তরণের উপায় নিহিত আছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। রোববার সকালে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর অর্থনীতি ও বাণিজ্য ভাবনাবিষয়ক সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ-বঞ্চনার কৌশল। শুধু রাজনৈতিক মুক্তিই নয়, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যও ছিল বঙ্গবন্ধুর। তাই তার ঘোষিত ছয় দফার মধ্যে তিনটিই ছিল অর্থনীতি বিষয়ক।

মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর এনে দেওয়া স্বাধীন বাংলাদেশে অর্থনৈতিক মুক্তি আনার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেওয়ার জন্য কোন কাজ করেন না। তার প্রতিটি সিদ্ধান্তের পেছনে দূরদর্শী পরিকল্পনা থাকে।

চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। দেশ এসব সিদ্ধান্তের সুফল শিগগিরই পাবে বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। দেশবিরোধীরা এখনও সক্রিয়। নানাভাবে দেশের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। এসব বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান মন্ত্রী।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার কারণে দেশের রপ্তানি খাতে বৈচিত্র্য এসেছে। সদ্যস্বাধীন দেশে আমদানি-রপ্তানিতে বার্টার প্রথা চালু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বেসরকারি খাতে এ পদ্ধতিতে ৪০ শতাংশ অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানি করার শর্ত দিয়েছিলেন তিনি। ওই সিদ্ধান্তের কারণেই রপ্তানি খাতে চিংড়ি ও চা যুক্ত হয়েছিল।

তিনি বলেন, পরিত্যক্ত শিল্প রাষ্ট্রীয়করণ না করলে স্থিতিশীলতা আসতো না। রাষ্ট্রীয়করণ করলেও, প্রশাসনিক দায়িত্ব ছিল ব্যক্তি খাতে। ১৯৭৫ সালে বিরাষ্ট্রীকরণের নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তা বাস্তবায়নের আগেই তাকে হত্যা করা হয়।

স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, কৃষি উন্নয়ন, শিল্প ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ, সংস্কৃতি, নারী জাগরণ, গ্রামীণ প্রান্তিক মানুষের উন্নয়নসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর দর্শনকে ধারণ করে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়তে বাণিজ্য খাতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তারই অংশ হিসেবে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কারিগরি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলেন।

সভাপতি বলেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি খাতেরও ব্যাপক অবদান রয়েছে। করোনা মহামারি ও ইউক্রেন সংকটের কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের জন্য সবসময়ের মতো অনুকূল পরিবেশ তৈরি ও সহযোগিতা দিলে এ সংকট শিগগিরই কাটিয়ে ওঠা যাবে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। যুদ্ধোত্তর বাস্তবতার নিরিখে সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে আপসহীন অভিযাত্রা, রাষ্ট্র নির্ভরতা থেকে ব্যক্তি খাতের বিকাশসহ বিভিন্ন দিকে বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ ও স্বাধীনতার আগে বাঙালিদের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরেন সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আবারও সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে। মহাকাশে স্যাটেলাইট, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ হয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। চলমান সাময়িক ইউক্রেন সংকটে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর রক্তের মধ্যেই ছিল মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির চেতনা। বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা অনুযায়ী তার সুযোগ্য কন্যার হাত ধরে দেশে অর্থনৈতিক মুক্তি ও সাম্য এসেছে। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে শিল্প ও সেবা খাত নির্ভর দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।

এর আগে, প্যানেল আলোচনায় এফবিসিসিআইয়ের প্যানেল উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ট্রেড ও ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী বৈষম্য কমাতে রাষ্ট্রীয়করণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর আমলে এলডিসিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণেই বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য আজকের পর্যায়ে এসেছে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেন, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা দেশে ব্যক্তি খাতের বিকাশের ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বার্টার পদ্ধতির কারণেই অনেক প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়েছিল। অর্থনৈতিক কূটনীতিতেও বিশাল ভূমিকা রেখেছেন বঙ্গবন্ধু।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এম মাহফুজুর রহমান জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু্। দেশে ফেরার ৫৪ দিন পর নতুন নোট বাজারে ছেড়েছিলেন। দেশে অবৈধ অর্থ শনাক্ত ও বিনাশ করতে ১৯৭৫ সালে ১০০ টাকার নোট বাতিলের মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী, সালাউদ্দিন আলমগীর, মো. হাবীব উল্লাহ ডন, পরিচালকবৃন্দ, বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান, মহাসচিব মাহফুজুল হকসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা।

আরপি/ এসএইচ-০৯



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top