রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


যে কারণে পদ্মা সেতু ‘এস’ আকৃতির


প্রকাশিত:
৯ জুন ২০২২ ১৯:৫৯

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:২৮

ফাইল ছবি

অপেক্ষা আর ১৬ দিনের। এরপরই বাঙালির গর্ব পদ্মা সেতুতে সাঁই সাঁই করে ছুটবে যান। ২১টি জেলাকে এক সুতোয় গেঁথেছে এই সেতু। আর তাই পদ্মা সেতুকে ঘিরে মানুষের মনে জাগছে নানা প্রশ্ন। অনেকেই জানতে চাচ্ছেন, পদ্মা সেতু কেন পুরোপুরি সোজা বানানো হয়নি? এর আকৃতি কেন কিছুটা বাঁকানো বা ইংরেজি এস (S) আকৃতির করা হলো? এটি কি কেবল সৌন্দর্যের জন্য নাকি এর পেছনে রয়েছে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা?

সৌন্দর্যের বিষয়টি যে গুরুত্ব পাচ্ছে না তা কিন্তু নয়। এস আকৃতির হওয়ার কারণে সেতুটি দেখতে সুন্দর হবে। দূর থেকেও এটি দেখতে আকর্ষণীয় লাগবে। সেতু পার হওয়ার সময় যাত্রীরা মুগ্ধতার মধ্যে থাকবেন।

কেবল পদ্মা সেতু নয়, পৃথিবীর প্রায় সব দীর্ঘ সেতুই কিছুটা বাঁকানো আকৃতিতে তৈরি করা হয়েছে। সৌন্দর্য ছাড়াও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই বিশেষ আকৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে।

একঘেয়েমি দূর করা

সোজা সেতুতে দীর্ঘ সময় গাড়ি চালালে চালকদের একঘেয়েমি লাগতে পারে। রাতের বেলা ঝিমুনি আসতে পারে। তারা যেন চলাচলে সতর্ক থাকেন তার জন্যই কিছুটা বাঁক দেওয়া হয়েছে।

সেতু যেন না ভাঙে

যানবাহন পার হওয়ার সময় ব্রিজে কম্পন সৃষ্টি হয়। ফলে সেতুতে কম্পনজনিত চাপ পড়ে। এটি যদি সোজা হতো তাহলে এক জায়গায় চাপ পড়তো। ফলে সেতু ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতো। পদ্মা সেতু এস আকৃতির হওয়ায় এই চাপ সর্বত্র সমানভাবে ছড়িয়ে পড়বে। তাই ব্রিজ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকবে না।

মাটির চাপ বিবেচনা

পানির নিচে সব জায়গায় মাটির চাপ সমান থাকে না। সেদিক বিবেচনায় সেতু হালকা বাঁকা করা হয়।

দুর্ঘটনা কমাতে

পদ্মা সেতু যদি সোজা হতো তাহলে এর কোনো অংশ ভেঙে গেলে তা দূর থেকে দেখা যেত না। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকত। এই সেতু বাঁকানো হওয়ায় কোথাও ভেঙে গেলে তা অনেক দূর থেকেই দেখা যাবে। বড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।

ভূমিকম্প থেকে রক্ষা

ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি থেকে সেতুকে রক্ষা করতে এটি বাঁকিয়ে তৈরি করা হয়। বাঁকা হলে ভূমিকম্পের সময় ব্রিজের সর্বত্র চাপ সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে, সেতু ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

এছাড়া যেকোনো সেতুর মাঝের অংশ কিছুটা উঁচু করে দেওয়া হয়। বড় ধরনের নৌযান চলাচলে যেন বাঁধার সম্মুখীন না হয়, সেজন্য এটি করা হয়।

সবমিলিয়ে বলা যায় কেবল সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য পদ্মা সেতু বাঁকা তৈরি করা হয়নি। এর স্থায়িত্ব বাড়াতেই এমনটা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। তবে ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় নয় কিলোমিটার। দ্বিতল পদ্মা সেতুর এক অংশ থাকবে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায়, আরেক অংশ শরীয়তপুরের জাজিরায়।

মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)। নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুইটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হয়েছে এ সেতুর কাঠামো।

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top