রাজশাহী বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


৯৫ শতাংশ শিশু বাসা-বাড়িতেই নির্যাতনের শিকার


প্রকাশিত:
৮ জুন ২০২২ ২০:৩৫

আপডেট:
২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৫৯

প্রতীকী ছবি

নানা সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশুদের নির্যাতন ও নিপীড়নের খবর পাওয়া যায়। বাস্তবে সেই সংখ্যা অনেক। বেসরকারি একটি সংস্থার জরিপের তথ্য বলছে, নিজেদের বাসা-বাড়িতে নানাভাবে নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয় ৯৫ শতাংশ শিশু। জরিপে উঠে এসেছে, ছেলেদের চেয়ে মেয়ে শিশুরা বেশি নির্যাতনের শিকার হন।

মঙ্গলবার (৭ জুন) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশে শিশুর প্রতি সহিংসতা পরিস্থিতি’ শীর্ষক জরিপের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

জরিপে তথ্যানুযায়ী, শতকরা ৯৫ দশমিক ৮ জন শিশু নানাভাবে ঘরেই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হয় বাবা-মা ও অভিভাবকদের দ্বারা। আর এসব নিপীড়ন চালানো হয় শান্তি ও নিয়মানুবর্তিতার ‘অজুহাতে’।

প্রায় শতকরা ৮১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বলেছেন— সন্তান যদি বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়, তাহলে তারা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে শিশুকে শারীরিক শাস্তি দেওয়ার পক্ষে। এক্ষেত্রে ছেলেশিশুরা মেয়েশিশুদের চেয়ে শারীরিক শাস্তি বেশি ভোগ করে।

বেসরকারি সংস্থা ইনসিডিন বাংলাদেশ জুন ২০২০ থেকে মে ২০২১ পর্যন্ত মোট ১১টি জেলা ৫ হাজার ৭৪ জন শিশুর ওপর এই জরিপ পরিচালনা করে। এদের মধ্যে শহরের ৩ হাজার ১৩৪ জন শিশু এবং গ্রামের ১ হাজার ৯৪০ জন। জেলাগুলো হচ্ছে— ঢাকা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা ও রাঙামাটি।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে গবেষণার মূল বিষয় উপস্থাপন করা হয়।

সভায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য স্থানীয় সরকার পর্যায়ে শিশু বাজেটে ১০ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানান। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শিশুর ব্যবহার বন্ধের ওপরও জোর দেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

৯৬% পযরফজরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী— শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘরের বাইরে, কাজের জায়গা বা অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানে শিশু যতটা নির্যাতিত হচ্ছে, এর চেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছে নিজ গৃহে। প্রতিবন্ধী শিশুরাও শুধু প্রতিবন্ধীতার কারণে পরিবারে ও সমাজে নিগৃহীত হচ্ছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারী শতকরা ৯৫ দশমিক ৩ জন শিশু জানিয়েছে যে— তারা জীবনের কোনো না কোনো সময় ঘরে, বাইরে, স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে শতকরা ৯৬ দশমিক ২ জন মেয়েশিশু এবং শতকরা ৯৪ দশমিক ৫ জন ছেলেশিশু।

জরিপে অংশ নেওয়া শতকরা ৮৬ দশমিক ৯ জন শিশু জানায়— তারা গৃহে শারীরিকভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। বাসায় থাকা শিশুরা জানিয়েছে— ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থার’ নামে তাদের ওপর অত্যাচার করা হয়। অন্যদিকে প্রায় শতকরা ৮১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বলেছেন— সন্তান যদি বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়, তাহলে তারা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে শিশুকে শারীরিক শাস্তি দেওয়ার পক্ষে। এক্ষেত্রে ছেলেশিশুরা মেয়েশিশুদের চেয়ে শারীরিক শাস্তি বেশি ভোগ করে। ছেলেশিশু শতকরা ৮৮ দশমিক ৪ আর মেয়েশিশু ৮৪ দশমিক ১।

শতকরা ৫৫ জন শিশু জানিয়েছে— তারা পরিবারের ভেতরেই যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। গৃহে মেয়েশিশুর (৫০%) চেয়ে ছেলেশিশুই (৬০%) বেশি যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।

শিশুকে শারীরিকভাবে অত্যাচার করার মধ্যে পড়ে— হাত, জুতা, বেল্ট, বোতল দিয়ে মারা, লাথি মারা, টানাহেঁচড়া করা, চুল টানা, দাঁড় করিয়ে রাখা, হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা, শরীর পুড়িয়ে দেওয়া, অতিরিক্ত শ্রম করানো এবং ঝাঁকি দেওয়া, ছুড়ে ফেলা, চিমটি দেখানো ইত্যাদি।

শিশুর প্রতি যেকোনো ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হবে। শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য তার জন্য কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে অনিরাপদ পারিবারিক অভিবাসন থামাতে হবে।

এদিকে পর্নোগ্রাফিতে শিশুর প্রবেশাধিকার কেমন বা কতটা, জরিপে সেটিও তুলে আনা হয়েছে। তাতে দেখা যায়— শতকরা ৩৪ জন শিশু বলেছে যে, তারা পর্নোগ্রাফি দেখে। এর চেয়েও ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে— শতকরা ৭৫ দশমিক ১ জন শিশু, যাদের মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট কানেকশন আছে, তারাও পর্নোগ্রাফি দেখছে।

শতকরা ২৬ জন মেয়েশিশু বলেছে যে— তারা আত্মীয়দের সঙ্গে পর্নোগ্রাফি দেখছে। শতকরা ১৪ দশমিক ৪ জন মেয়েশিশু দেখেছে অনাত্মীয়দের সঙ্গে। শিশুদের এভাবে পর্নোগ্রাফি দেখার মাধ্যমে তাদের যৌন হয়রানির আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।

জরিপ প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বলা হয়েছে, নীরবতার সংস্কৃতি ভাঙতে হবে। শিশুর প্রতি যেকোনো ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হবে। শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য তার জন্য কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে অনিরাপদ পারিবারিক অভিবাসন থামাতে হবে। শিশুর প্রতি যে অপরাধ করবে, শিশুকে নির্যাতন করবে তাকে ভালোভাবে বোঝাতে হবে এবং প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কমিউনিটিভিত্তিক শিশু সুরক্ষা পলিসি গ্রহণ করতে হবে।

 

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top