জুনেই আলো পাবে পদ্মা সেতু

পদ্মার আকাশের মেঘ কেটেছে বহু আগেই। এখন স্রোতস্বিনী পদ্মার ওপর দিয়ে যান চলাচলের অপেক্ষা। অপেক্ষায় দেশের কোটি মানুষ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হতে বেশি দেরি নেই। আর মাত্র একটি মাস পরেই চালু হচ্ছে দেশের দীর্ঘতম এই সেতু। জুন মাসেই এই সেতু দিয়ে গাড়ি চলবে। এমন পরিকল্পনা নিয়ে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ।
পদ্মা প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখে গেছে, পদ্ম সেতুতে চলমান কাজের বড় একটি অংশ-সেতুর প্যারাপেট ওয়ালে বসানো ল্যাম্পপোস্টে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ। যা চলছে পুরোদমে। আশা করা যাচ্ছে মে মাসের মধ্যে এই কাজটি শেষ হবে। ১ জুন পরীক্ষামূলকভাবে সেতুর ল্যাম্পপোস্টে আলো জ্বালানো হবে।
এছাড়াও সেতুতে রোড সাইন ও মার্কিং দেওয়ার কাজ বাকি আছে। রোড মার্কিংয়ের আগে ট্রায়াল এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। ৩০ এপ্রিল পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের সারফেস রোডে ট্রায়াল হয় রোড মার্কিংয়ের।
প্রকৌশলীরা জানান, ট্রায়াল সফল হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে এই সপ্তাহেই মূল সেতুতে রোড মার্কিং করা হবে। এজন্য রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়ার প্রয়োজন। ইতোমধ্যে সেতুতে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ করা হয়েছে। তবে, সেতুতে ওঠানামার পথ বা ভায়াডাক্টের কিছু অংশে এখনও পিচ ঢালাই দেওয়া বাকি। ভায়াডাক্টের কিছু জায়গায় এখনো বসেনি প্যারাপেট ওয়াল এবং ল্যাম্পপোস্ট। সেজন্য সেখানে পিচ ঢালাই বাকি আছে।
পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের আগে থেকে পরিকল্পনা ছিল ২০২২ সালের জুন মাসেই পদ্মা সেতু চালু করার। সেটা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী।
তিনি জানান, সেতুতে রোড মার্কিং করতে ও রোড সাইন বসাতে খুব বেশি একটা সময় লাগার কথা না। মে মাসের মধ্যে এসব কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এসব কাজ ছাড়াও সেতুর ওপরে এক্সপানশন জয়েন্টের দুই পাশে বিশেষ ধরনের প্যারাপেট ওয়াল বসানোর কাজও চলমান আছে। প্যারাপেট ওয়ালের ওপরের অংশে অ্যালুমিনিয়ামের রেলিং বসানো হচ্ছে। সেতুতে ওঠানামার ভায়াডাক্টে পিচ ঢালাইয়ের কাজ চলছে।
নদীতে ৬.১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতু। আর দুই পাশের সড়ক মিলিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার লম্বা এই সেতু।
পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মূল সেতুর কাজ ৯৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়ার কাজ শেষ হয়েছে শতভাগ। সেতুর ওপর কার্পেটিং শেষ হয়েছে ৯৭ ভাগ। সব ল্যাম্পপোস্ট লাগানো শেষ। গ্যাস লাইন কাজ শেষ হয়েছে ৯৯ ভাগ। ৪০০ কিলো ভোল্টের বিদ্যুৎ লাইনের কাজ ৮৪ ভাগ শেষ হয়েছে।
সম্প্রতি সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আভাস দিয়েছেন, জুন মাসের শেষের দিকে যান চলাচলের জন্য সেতু উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
সেতু বিভাগের সূত্র জানায়, সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের জন্য ম্যুরাল ও ফলক নির্মাণের কাজ চলছে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মিত হচ্ছে। দুটি ম্যুরালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি থাকবে।
জুনে সেতুতে যান চলাচল উদ্বোধনের লক্ষ্য নিয়ে দিনরাত কাজ চলছে বলে প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, সেতুতে এখন যেসব টুকিটাকি কাজ আছে তা আগামী জুনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
আরপি/এসআর-০৩
বিষয়: পদ্মা সেতু ল্যাম্পপোস্ট
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: