রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


আড়াই বছরে বাংলাদেশ বিমানেই ১৫০ কোটি টাকার স্বর্ণ জব্দ


প্রকাশিত:
২৬ এপ্রিল ২০২২ ২১:৪৭

আপডেট:
২৮ মার্চ ২০২৪ ১৮:০৭

ফাইল ছবি

গত আড়াই বছরে শুধু বাংলাদেশ বিমানেই প্রায় ১৫০ কোটি টাকা মূল্যের আড়াইশো কেজি স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় সাজা হয়েছে অর্ধশতাধিক ব্যক্তির। এখনও চলমান আছে অনেক মামলা।‌ শত চেষ্টা সত্ত্বেও বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় বিমান পরিবহন সংস্থাটিতে স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধ করা যাচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশ বিমানে যাত্রা করাকে এখন অনেকে অনিরাপদ মনে করছেন।

গত আড়াই বছরের পরিসংখ্যান বলছে, স্বর্ণ চোরাচালানের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকেই বেছে নিয়েছেন পাচারকারীরা। প্রতিষ্ঠানটির অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধেও স্বর্ণ চোরাচালানকারিদের সহায়তা ও স্বর্ণ ভাগ বাটোয়ারা করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, বিমানে যারা পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন তাদের অনেকে অল্পদিনেই কোটিপতি বনে গেছেন। ঢাকায় নামে-বেনামে ফ্ল্যাট কিনেছেন। কিনেছেন অনেক জমি ও গাড়ি। স্বর্ণ চোরাচালানে সহায়তা করে তারা এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন।

সূত্র জানায়, গত আড়াই বছরে বাংলাদেশ বিমানে করে স্বর্ণ চোরাকালানকালে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে হাতেনাতে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। ভ্রাম্যমাণ আদালত ছাড়াও উচ্চ আদালতে অনেকের সাজা হয়েছে। এরপরও বন্ধ করা যাচ্ছে না রাষ্ট্রীয় বিমানে স্বর্ণ চোরাচালান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমানের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী বিশেষ সুবিধা নিয়ে এসব কাজ করছেন। তারা স্বর্ণ চোরাচালানিদের টাকার বিনিময়ে স্বর্ণ আনতে সহায়তা করেন বলে অভিযোগ আছে। আর চোরাচালানের জন্য বিমানের নিম্নপদের কর্মকর্তারা বিমানের চাকা, টয়লেট, সিটের কাপড়ের নিচ ব্যবহার করেন।


‘আমাদের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলাগুলো কিছু আদালতে চলমান। কিছু মামলায় দায়ী ব্যক্তিরা সাজা পেয়েছেন। প্রতিনিয়ত আমাদের নজরদারি আছে। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতে এই ঘটনায় জড়িত না থাকতে পারে সেজন্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও কাজ করেন।’- আবু সালেহ মোস্তফা কামাল, এমডি, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি প্রায় তিন কোটি টাকার স্বর্ণের বার উদ্ধার হয় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের পরিত্যক্ত চাকার ভেতর থেকে।

ঘটনার দিন বিমানবন্দরে অবস্থানরত শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বশির আহমদ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, জব্দ করা ৪৬টি সোনার বারের ওজন পাঁচ কেজি ৩৩৬ গ্রাম। দাম তিন কোটি পাঁচ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। বারগুলোর কোনো দাবিদার পাওয়া যায়নি।

শাহ আমানতে স্বর্ণ জব্দের রেশ কাটতে না কাটতেই গতকাল ২৪ এপ্রিল ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শারজাহ থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট থেকে প্রায় সাড়ে ১০ কেজি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। উদ্ধার করা বারগুলোর বাজার মূল্য প্রায় সাত কোটি টাকা।

২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিযান চালিয়ে ২৮টি স্বর্ণবার জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কর্মকর্তারা। দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটের সিটের নিচ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় স্বর্ণবারগুলো পাওয়া যায়। সোয়া তিন কেজি ওজনের এসব স্বর্ণের বর্তমান বাজার মূল্য দুই কোটি ছয় লাখ ২৫ হাজার টাকা। পাচারের উদ্দেশে উড়োজাহাজের সিটের নিচে এসব স্বর্ণ লুকিয়ে রেখেছিলেন বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে আসা এক শ্রেণির যাত্রীবেশী চোরাকারবারি।

একই বছরের ৯ অক্টোবর শাহ আমানত বিমানবন্দরে বেলাল নামে এক নিরাপত্তাকর্মীর কাছ থেকে ৮০ পিস স্বর্ণের বার জব্দ করা হয়েছিল।

২৫ অক্টোবর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১০৪টি স্বর্ণের বার জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের একটি দল। বারগুলোর মোট ওজন ১২ কেজি। আনুমানিক বাজারদর প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা। দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট থেকে স্বর্ণের বারগুলো জব্দ করা হয়। স্বর্ণের বারগুলো পাচারের উদ্দেশে আনা হয়েছিল।

৫ নভেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের চার কেজি স্বর্ণের পেস্টসহ দুই যাত্রীকে আটক করেছিল শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। তারা দুবাই-সিলেট-ঢাকাগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-০২৪৮ নং ফ্লাইটে ঢাকায় নেমেছিলেন। জব্দ করা স্বর্ণগুলোর বাজারমূল্য প্রায় দুই কোটি ৯০ হাজার ৮৫ হাজার টাকা।

২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট থেকে এসব স্বর্ণ জব্দ করা হয়।

১১ নভেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সৌদি আরবের দাম্মাম থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৪০৫০ ফ্লাইটে আসা আকতার হোসেন নামে এক যাত্রী ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এক কর্মীকে গ্রেফতার করেছিল ঢাকা কাস্টমস হাউস। এ সময় চারটি স্বর্ণবার উদ্ধার করা হয় তাদের কাছ থেকে। পরে তাদের নামে মামলা হয় এবং পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

১৮ নভেম্বর দুবাই থেকে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-০১৪৮ বিমানযোগে বাংলাদেশে আসা যাত্রী রাকিবুল হাসানের দেহ তল্লাশি করে প্যান্টের ভেতর থেকে ৫২৫ গ্রাম পেস্ট সদৃশ স্বর্ণ এবং ২৩২ গ্রামের দুটি স্বর্ণবার ও ৯৮ গ্রামের বিভিন্ন স্বর্ণালঙ্কারসহ মোট ৮৫৫ গ্রাম স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছিল। যেগুলোর বাজারমূল্য ৫৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

পরদিন ১৯ নভেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুই কোটি টাকার স্বর্ণসহ দুইজনকে আটক করেছিল শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।

শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছিল, দুবাই থেকে সিলেট হয়ে ঢাকায় আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের (বিজি-০২৪৮) ফ্লাইটটিতে ঢাকায় আসা যাত্রী এম এইচ শিবলীর কাছ থেকে দুই কেজি ৯৭ গ্রাম স্বর্ণ পাওয়া যায়। যেগুলোর আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি ৪৬ লাখ ৭৯ হাজার।

২৩ নভেম্বর চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুবাইফেরত এক যাত্রীর কাছ থেকে ২৬টি বার ও ছয়টি গলানো পাতসহ প্রায় চার কেজি ওজনের স্বর্ণবার পায় বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এসব স্বর্ণ পরিবহন করায় মো. সোহেল নামে এক যাত্রীকে আটক করা হয়।

একই বছরের ২৭ ডিসেম্বর সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় সাত কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণের বড় একটি চালান ধরা পড়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের হাতে। দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে (বিজি-২৪৮) আসা চার যাত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণের চালানটি জব্দ করা হয়। জব্দ করা চালানে হোয়াইট গোল্ড (সাদা স্বর্ণ) ছিল বলেও জানা যায়।

২০২০ সালের ৩ মার্চ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক কেজি ৬৫০ গ্রাম স্বর্ণের বারসহ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এক কর্মী আটক হন। বিমানবন্দরের এভিয়েশন সিকিউরিটির (এভসেক) সদস্যরা তাকে স্বর্ণসহ বিমানবন্দরের আট নম্বর হ্যাঙ্গার গেট থেকে আটক করেন। আটক ব্যক্তির নাম মুসা মিয়া। তিনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সুইপার ছিলেন। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

ওই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুবাইফেরত এক যাত্রীর কাছ থেকে দুটি স্বর্ণের বার এবং ১৯ কার্টন বিদেশি সিগারেট জব্দ করে জাতীয় গোয়েন্দা নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসআই) ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। দুবাই থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে (বিজি-১৪৮) ফ্লাইটে চট্টগ্রামে এসেছিলেন মোহাম্মদ সায়েম চৌধুরী নামে ওই যাত্রী।

২২ সেপ্টেম্বর ভিন্ন কায়দায় স্বর্ণপাচার করে দেশে আনার খবর পাওয়া যায়। ঘটনার দিন শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের যাত্রী জাফর আলমের ব্যাগ তল্লাশি চালিয়ে ‘অভিনব’ কায়দায় স্বর্ণ আনার বিষয়টি জানতে পারেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।

জাফর আলম নামের এই ব্যক্তি দুটি স্বর্ণবার গলিয়ে ব্যাগের ক্যাবলের মতো করে সেলাই করে দিয়েছিলেন। যাতে প্রথম দেখাতেই যে কেউ তারগুলোকে ব্যাগের অংশ মনে করে’। প্রাথমিক তল্লাশিতে ব্যাগে কিছু পাওয়া না গেলেও খালি ব্যাগটি স্ক্যানিং মেশিনে ঢোকানো হলে ধাতব পদার্থ থাকার সংকেত আসতে থাকে। পরে ব্যাগ কেটে চিকন সুতার মতো করে গলানো স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। তার হিসেবে আনা ওই স্বর্ণ বারের ওজন ২৩৪ গ্রাম।

১ অক্টোবর চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক যাত্রীর কাছ থেকে ৮২টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। আটক করা হয় এনামুল হক নামে দুবাই ফেরত এক যাত্রীকে। ২৪ ক্যারেটের ৯ কেজি ৫৯ গ্রাম ওজনের এসব স্বর্ণের দাম প্রায় পাঁচ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বলে জানিয়েছিল কাস্টমস কর্মকর্তারা।

ওই বছরের ২৩ অক্টোবর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার আট কেজি স্বর্ণ জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। ওইদিন সকাল ১০টা ২০ মিনিটে আবুধাবি থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের বিজি-০২৮ ফ্লাইটে তল্লাশি চালিয়ে চারটি সিটের নিচ থেকে অভিনব কায়দায় লুকানো ৬৮টি স্বর্ণবার পাওয়া যায়। সাত কেজি ৮৮৮ গ্রাম ওজনের স্বর্ণগুলোর আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় চার কোটি ৭৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা।

স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত বিমানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী

বিভিন্ন সময়ে জব্দ করা স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে বিমানের অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য পায় সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আব্দুর রউফের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, স্বর্ণ চোরাচালানে বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত কি না। ‌তিনি বলেছিলেন, বেশিরভাগ ঘটনায় আমরা তাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। ‌ আমরা শুধু আটক করতে পারি। পুলিশে সোপর্দ করতে পারি। ‌ কিন্তু শাস্তি দিতে পারি না।‌ বিমানের বিভিন্ন সময় যেসব কর্মকর্তা কর্মচারী স্বর্ণ চোরাচালানে আটক হয়েছেন তাদের মামলাগুলো চলমান রয়েছে। ‌ আদালত সেগুলো রায় দেবে।

৬২ কেজি স্বর্ণ চোরাচালানে বিমানের তিন কর্মকর্তার সাজা

২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৬২ কেজি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। সেই ঘটনায় মামলা হলে বিমানের তিন কর্মকর্তাকে ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করে আদালত।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাংলাদেশ বিমানের এয়ারক্রাফট মেকানিক আনোয়ারুল হাসান, আবু সালেহ এবং আক্তারুজ্জামান। দণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাভোগের আদেশ দেওয়া হয়।

১০৮ কেজি সোনা উদ্ধারের ঘটনায় আত্মসমপর্ণের নির্দেশ

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমানের টয়লেট থেকে ১০৮ কেজি স্বর্ণ জব্দের ঘটনায় স্বর্ণ চোরাচালান দলের সদস্য ইকরামুল হককে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ইকরামুল হকের জামিন বাতিল করে এ আদেশ দেন আদালত। গত বছরের ২৭ মে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

স্বর্ণ চোরাচালানে বিমানের দুই কর্মীর কারাদণ্ড

বিভিন্ন সময়ে স্বর্ণ চোরাচালানে বিমানের অনেক কর্মচারী জড়িত তা প্রমাণ হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ হজরত শাহজালাল রহ. আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিমানের টয়লেট থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৯ কেজি ২৮০ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করে ঢাকা কাস্টমস হাউস। তখন এসব স্বর্ণের বাজারমূল্য ছিল প্রায় চার কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ওই ঘটনায় মামলা হলে বিমানের দুই কর্মচারীসহ চারজনকে ১২ বছর করে কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল।

গত বছরের ১২ জানুয়ারি ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক বিলকিছ আক্তার আসামিদের উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ৪০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাদের আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাভোগের আদেশ দেওয়া হয়।

সাজাপ্রাপ্তরা আসামিরা হলেন- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ক্যাটরিং সেন্টারের (বিএফসিসি) পেন্ট্রি ম্যান খন্দকার রুহুল আমিন ও শাহিনুর ইসলাম এবং স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সদস্য ইফতারুল আলম সরকার ও রিয়াজ ওরফে আমজাদ।

অভিযোগ বলা হয়, রুহুল আমিন ও শাহিনুর ইসলাম ডিউটিরত অবস্থায় বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের জেদ্দা-সিলেট হয়ে ঢাকাগামী বিজি-২৩৬ এ ক্যাটরিংয়ের কাজের উদ্দেশে বিমানের ভেতরে প্রবেশ করে। টয়লেটের মধ্যে টিস্যু বক্সে রাখা কালো স্কচটেপ মোড়ানো চারটি রোল থেকে তারা দুটি করে জামার মধ্যে লুকিয়ে বিমান থেকে বের হয়ে খাবারের ট্রেতে লুকিয়ে রাখেন। পরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ স্বর্ণগুলো উদ্ধার করেন।

এ ঘটনায় কাস্টমস বিমানবন্দর থানায় মামলা করে। ২০১৯ সালের ৮ জুলাই মামলাটি তদন্ত করে চারজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি। ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর চার আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু সালেহ মোস্তফা কামাল ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলাগুলো কিছু আদালতে চলমান। কিছু মামলায় দায়ী ব্যক্তিরা সাজা পেয়েছেন। প্রতিনিয়ত আমাদের নজরদারি আছে। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতে এই ঘটনায় জড়িত না থাকতে পারে সেজন্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও কাজ করেন।’ সূত্র: ঢাকা মেইল

 

 

 

আরপি/এসআর-০২



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top