রাজশাহী সোমবার, ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ই আশ্বিন ১৪৩১


রমনায় হামলা মামলা: হাইকোর্টে ঝুলে ৮ বছর


প্রকাশিত:
১৫ এপ্রিল ২০২২ ০১:০৮

আপডেট:
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:২৩

বহুল আলোচিত রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা মামলার আপিল শুনানি হাইকোর্টে ঝুলে আছে আট বছর ধরে। কবে নাগাদ এ মামলা হাইকোর্টের গণ্ডি পেরোবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। মামলাটির আপিল শুনানির জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক তৈরি হলেও এখনও সেখানেই থেমে আছে। একবার শুনানি শেষে মামলাটি যুক্তিতর্কের পর্যায়ে গেলেও ওই পর্যন্তই। ফলে মামলাটি এখনও হাইকোর্টে শুনানির পর্যায়ে রয়ে গেছে।
বারবার আদালত পরিবর্তন এবং রাষ্ট্রপক্ষ বারবার সময় চাওয়ায় এই দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলছেন, বারবার হাইকোর্টের বেঞ্চ পরিবর্তন হওয়ায় মামলাটি শেষ হতে বিলম্ব হচ্ছে।
মামলাটির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েক দফা আদালত পরিবর্তন হয়েছে। এরপর আবার নতুন করে আদালত নির্ধারণ, আইনজীবীদের প্রস্তুতির জন্য সময় লাগছে। কেননা আদালতে বিচারক পরিবর্তন হলে বা বেঞ্চ ভেঙে গেলে মামলাটি আবার প্রথম পর্যায় থেকে শুরু হয়। মামলাটি যে বেঞ্চে ছিল সেই বেঞ্চের একজন বিচারক আপিল বিভাগে চলে গেছেন। সে কারণে বর্তমানে মামলাটি কোনো বেঞ্চে নেই। এখন প্রধান বিচারপতি নতুন করে যে বেঞ্চে মামলাটি দেবেন সেখানেই শুনানি হবে।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘মামলাটি ৩৭৫ বারের বেশি কার্যতালিকায় এলেও শুনানি সম্পন্ন হয়নি। এখন পর্যন্ত মামলাটি নতুন কোর্টের শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়নি।
‘আমি মনে করি, সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধিকার খর্ব হচ্ছে। এই অনুচ্ছেদে বলা আছে- দ্রুত বিচার, এখানে আসামির ক্ষেত্রেও এবং যে ভিকটিম তারও অধিকার। এই দীর্ঘসূত্রতার ফলে উভয় পক্ষের অধিকার খর্ব হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলা করতে চায় না। তার কারণ এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ তেমন কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। এ জন্য তারা বারবার সময় নিচ্ছে। এভাবে বারবার সময় নেয়া সঠিক নয়, আইনসম্মত নয়।
সর্বশেষ মামলাটি বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য ছিল। পরে বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হলে নতুন করে হাইকোর্টের বেঞ্চ গঠন করা। ফলে মামলাটি এখন কোনো বেঞ্চে নেই।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়। এরপর ওই বছরের ১৪ মার্চ চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ঠিক করা হয়। কিন্তু তারপর আর এগোয়নি। পরে আদালত মামলাটি কার্য তালিকা থেকে বাদ দেন।
দীর্ঘ সময় পর প্রধান বিচারপতির নির্দেশে মামলাটি আরেকটি বেঞ্চে দেয়া হয়। ওই বেঞ্চের বিচারক পরিবর্তন হওয়ায় সেখানেও শুনানি হয়নি। এভাবে কয়েক দফা আদালতের বেঞ্চ ও বিচারক পরিবর্তন হয়ে অবশেষে বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের হাইকোর্ট বেঞ্চে যায়।
২০১৪ সালের ২৩ জুন বহুল আলোচিত রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমিন। রায়ে নিষিদ্ধঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ৮ জনের ফাঁসি ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়। অনাদায়ে আরো এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেয় আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামিরা।
মুফতি হান্নান ছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন মাওলানা তাজউদ্দিন, মওলানা আকবর হোসেন, মুফতি আব্দুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মাওলানা আরিফ হাসান সুমন। এর মধ্যে পৃথক একটি মামলায় মুফতি আবদুল হান্নানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন হাফেজ মওলানা আবু তাহের, মওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, হাফেজ মওলানা ইয়াহিয়া, মওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মওলানা আব্দুর রউফ ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হন ও অনেকে আহত হন। এ ঘটনায় থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে সিআইডি হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করে। দীর্ঘ শুনানি নিয়ে হত্যা মামলাটি বিচারিক আদালতে শেষ হয়।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top