কবি জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
আজ ২২ অক্টোবর, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শীর্ষ কবি জীবনানন্দ দাশের ৬৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শক্তিশালী এই কবি একাধারে লেখক, অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, উপন্যাসিক, গীতিকার।
তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অগ্রগণ্য। তিনি শুদ্ধতম ও রূপসী বাংলার কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত।
তার কবিতা বাংলার রূপ, প্রকৃতি, মানুষের জীবনধারা, মাটি, তাদের কর্ম, দুঃখ-কষ্ট, ব্রিটিশ শাসনবিরোধী, স্বাধীনতার আকক্সক্ষা উঠে এসেছে। কবিতা নির্মিতিতে ভিন্ন আঙ্গিকে, ভাষাগতভাবে পুরাণকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন।
রবীন্দ্রত্তোর কবিতায় তার মতো ভিন্নভাবে সৃষ্টিশীলতা আর কারও মধ্যে কাজ করেনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কবি ততটা জনপ্রিয়তা না পেলেও মৃত্যুর পর তার সৃষ্টিশীলতাই তাকে শ্রেষ্ট কবির মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে।
বিশ্ব কাব্য সাহিত্যের এক অসাধারণ মেধাবী এই বাঙালি কবি কলকাতায় ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯৫৪ সালের এদিন মারা যান। ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তার জন্ম বাংলাদেশের বরিশালে। তাদের পূর্বপুরুষ বিক্রমপুরে বসবাস করতেন।
তার মা কবি কুসুম কুমারী দাশ ও পিতার নাম সত্যনানন্দ দাশ। তিনি ১৯৩০ সালের ৯ মে ঢাকার ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরে রোহিনীকুমার গুপ্তের মেয়ে লাবণ্য গুপ্তকে বিয়ে করেন। তার মেয়ে মঞ্জুশ্রী দাশ এবং ছেলে সমরানন্দ দাশ।
তিনি ব্রজমোহন স্কুল থেকে এসএসসি, ব্রজমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি, প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ও ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পেশাগত জীবনে কবি প্রথম অধ্যাপনা শুরু করেন ১৯২২ সালে কলকাতা সিটি কলেজে।
এরপর পর্যায়ক্রমে দিল্লির রামযশ কলেজ, ব্রজমোহন কলেজ, বাগেরহাট কলেজ, হাওড়া গার্লস কলেজ, খড়গপুর কলেজে অধ্যাপনা করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি বরিশাল ত্যাগ করেন।
পেশাগত জীবনে নানা কারণে কবিকে একটার পর একটা কলেজ থেকে বিদায় নিয়ে শিক্ষকতা করতে হয়। বোহেমিয়ান জীবন ছিল তার। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কবি কলকাতার হাওড়া কলেজে অধ্যাপনা করছিলেন।
স্কুল জীবনেই কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলা ও ইংরেজিতে লেখালেখি শুরু করেন। তার প্রথম কবিতা ‘বর্ষ ‘১৯১৯ সালে ‘ব্রাহ্মদী’ পত্রিকায় প্রকাশ পায়। জীবনানন্দ দাশের প্রথম কবিতার বই ‘ঝরা পালক’ প্রকাশ পায় ১৯২৭ সালে।
কলেজ জীবন থেকে তার লেখা নানা পত্রিকায় প্রকাশ পেতে থাকে। তার প্রকাশিত অন্য সব কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে, ধূসর পান্ডুলিপি(১৯২৭), বনলতা সেন (১৯৪২), মহাপৃথিবী (১৯৪৪), সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮), জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৫৪), রূপসী বাংলা (১৯৫৭), বেলা অবেলা কালবেলার কবিতা (১৯৬১), সুদর্শনা (১৯৭৬), আলো পৃথিবী (১৯৮১), মনোবিহঙ্গম, প্রেম তোমার কথা ভেবে (১৯৯২)। গল্পগ্রন্থ ‘ জীবনানন্দ দাশের গল্প (১৯৭২), চারজন (২০০৪), শ্রেষ্ঠ গল্প(১৯৭৩)।
এছাড়া কবির একটি প্রবন্ধ গ্রন্থ প্রকাশ পায়। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য কবি রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার (১৯৫২), সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারসহ (১৯৯৫) অন্য সব পুরস্কার লাভ করেন।
আরপি/ এমএএইচ-০৫
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: