রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তুরিনকে অপসারণ: আইনমন্ত্রী


প্রকাশিত:
১২ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:১৫

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:১১

ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে অভিযোগ তথ্য-প্রমাণের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আইনমন্ত্রী বলেন, অপরাধীর সঙ্গে তিনি যে কথা বলেছেন তার রেকর্ড আমাদের কাছে আছে। সেখানে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তার (তুরিন আফরোজ) গলা প্রমাণিত হওয়ায় আমরা তাকে অপসারণ করেছি।

সোমবার (১১ নভেম্বর) সচিবালয়ে আইনমন্ত্রীর দফতরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা এটা জানেন যে, তার (তুরিন আফরোজ) বিরুদ্ধে অভিযোগের নিউজ অনেক হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে, তিনি একজন আসামির সঙ্গে (যেই মামলা তিনি নিজেই করছিলেন) আলাপ-আলোচনা করতে গিয়েছিলেন। একই সঙ্গে আলাপ-আলোচনার সময় তিনি এও বলেছিলেন যে, এ মামলার কোনো সারবর্তা (ম্যারিট) নেই।’

তিনি বলেন, ‘সেই কথোপকথনের টেপ রেকর্ড করা হয়। কথোপকথনের টেপ রেকর্ড এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউশন আমাদের নিটক পাঠান। আমরা এটা নিয়ে সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলেছি। একই সঙ্গে উনার (তুরিন আফরোজ) যতটুকু কথা বলা প্রয়োজন মনে করেছি, কথা হয়েছিল। কিন্তু যেই সাক্ষ্য-প্রমাণ আছে সেগুলো অল আর ডকুমেন্ট্রি।’

‘সে জন্য আমরা এ সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে অব্যাহতি দিয়েছি। তবে তিনি আগে যে মামলা পরিচালনা করেছেন, তাতে আমরা যথেষ্ট সন্তুষ্ট। যে কারণে তাকে আজ অব্যাহতি দেয়া হলো, তার আগ পর্যন্ত তিনি কিন্তু নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি জানি না তার সেন্স অব জাজমেন্ট কেন কাজ করেনি!’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘রেকর্ডকৃত কথোপকথনে তার (তুরিন আফরোজ) দিক থেকে যেসব কথা বলা হয়েছে এবং যেটা তার গলা বলে প্রমাণিত হয়েছে, এটা উনি কেন করলেন সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। তবে এটুকু বলবো এটা দুঃখজনক। কাজেই আমি যে খুব খুশি হয়ে করেছি (অপসারণ) তা না।’


তিনি আরও বলেন, ‘তাকে অব্যাহতি দেওয়াটা আরও জরুরি হয়ে পড়ে, কারণ যে মামলাটা নিয়ে কথা হয়েছে, সেই মামলায় কিন্তু এখন চার্জ গঠন হয়ে গেছে। সে জন্যই এ ব্যাপারটার একটা নিষ্পত্তি দরকার ছিল। সেজন্যই তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।’

আরেক প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম বলেছেন, তার (তুরিনের) কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রবিরোধী, ফৌজদারি অপরাধ এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এটা উনি (জিয়াদ আল মলুম) বলতে পারেন। আমি তো এ রকম কথা বলতে পারবো না। আমার এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য নেই।’

তুরিন আফরোজকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তার সাথে কথা হয়েছে। এবং যে প্রমাণাদি রয়েছে, সেটাকে যদি তিনি চ্যালেঞ্জ করতে চান করতে পারবেন, ওপেন রয়েছে। কিন্তু টেপ করা কথাবার্তা আমরা পেয়েছি এবং তার বিরুদ্ধে নালিশ পেয়েছি। এসব বিষয়ে সার্বিকভাবে আলোচনার পরই তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি যে আইনজীবীরা এ কাজে নিয়োজিত আছেন, তারা তাদের দায়িত্ব সম্বন্ধে অত্যন্ত সচেতন। তাদের কোনো নতুন মেসেজ দিতে হবে এটা আমি মনে করি না। তারা যথেষ্ঠ নিষ্ঠার সাথে কাজ করছেন বলে আমার বিশ্বাস। এখানে যদি শৃঙ্খলার বাইরে কোনো কাজ করা হয়, যেটা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে বা তার মান ক্ষুণ্ন করতে পারে, তাহলে আমরা তো ব্যবস্থা নেবই।’

এর আগে পেশাগত অসদাচরণ, শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত প্রসিকিউশন টিমের মামলা ও অন্যান্য কাজ থেকে অপসারণ করে সরকার।

আজ সোমবার (১১ নভেম্বর) এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগ। তাতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদ থেকে তুরিন আফরোজকে অপসারণ করা হয়েছে।

উপ-সলিসিটর এস এম নাহিদা নাজমীন স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে শৃঙ্খলা ও পেশাগত আচরণ ভঙ্গ এবং গুরুতর অসদাচরণের দায়ে ২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপনে প্রদত্ত নিয়োগ বাতিলক্রমে প্রসিকিউটর পদ থেকে অপসারণ করা হলো।’

এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং পাসপোর্ট অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয়। পরদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান।

তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, ‘প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ ওই আসামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ রয়েছে জানিয়ে তাকে পালিয়ে যেতে বলেন। এ বিষয়ে ওয়াহিদুল হকের কাছে প্রসিকিউটর তুরিন মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করেন।’

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সিনিয়র সমন্বয়ক এম. সানাউল হক বলেন, ‘টেলিফোন রেকর্ডে তুরিন আফরোজ জানিয়েছেন যে, তিনি বোরকা পরে ওই হোটেলে যাবেন। তার সঙ্গে থাকবে সহকারী ফারাবি, যাকে তিনি নিজের স্বামী পরিচয়ে সেখানে নিয়ে যাবেন।’

 

আরপি/ এএস



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top