রাজশাহী শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


কোয়ারেন্টাইনে নিম্নমানের খাবার, ভারত ফেরতদের বিক্ষোভ


প্রকাশিত:
২৭ মে ২০২১ ২০:৩৯

আপডেট:
২৭ মে ২০২১ ২১:২৯

ছবি: সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গার ভিরুল্লাহ এলাকায় অবস্থিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) ভারতফেরতদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে মানহীন খাবার সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (২৬ মে) দুপুরের খাবার কোনোমতে খাওয়া গেলেও রাতে ভাতের সঙ্গে যে মাছ দিয়েছে তাতে ছিল পচা গন্ধ। বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার মিলছে না। তাই রাতে মানহীন খাবার সরবরাহের অভিযোগে বিক্ষোভ করেছেন চুয়াডাঙ্গা টিটিসিতে ১৪ দিন নিজ খরচে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ভারতফেরত বাংলাদেশিরা।

করোনাভাইরাসের প্রকোপে বন্ধ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। এরমধ্যে জরুরি চিকিৎসা নিতে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে স্থলপথে হাজার দেড়েক বাংলাদেশি বিশেষ ব্যবস্থায় ভারতে গিয়ে পড়েন বিপাকে। কারণ, সেখানেও চলছে লকডাউন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ ব্যবস্থায় আটকে পড়া ওই বাংলাদেশি যাত্রীদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করে। গত ১৮ মে থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনাসহ দেশের তিনটি স্থলসীমান্ত ও চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরতে শুরু করে বাংলাদেশিরা। তবে শর্ত মোতাবেক দেশে ফেরা সবাইকে বিশেষ কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে ১৪ দিন।

সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন করছে গোটা বিষয়ের তত্ত্বাবধান। সেই অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরা প্রায় ৭০০ ভারত ফেরত মানুষ অবস্থান করছেন চুয়াডাঙ্গার দুটি সরকারি ভবন ও কয়েকটি আবাসিক হোটেলের অস্থায়ী কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে। এদের তিনবেলা খাবারের যোগান হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত তিনটি রেস্তোরাঁ থেকে।

সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী থাকা খাওয়ার সব খরচ বহন করেই থাকতে হচ্ছে কোয়ারেন্টাইনে। আবাসন নিয়ে তেমন কোনো অভিযোগ না পাওয়া গেলেও সরবরাহকৃত খাবারের মান নিয়ে প্রথম থেকেই অভিযোগ উঠতে থাকে। বুধবার টিটিসি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে ক্ষোভ রূপ নেয় বিক্ষোভে। অনেকে টিটিসি ভবনের জানালা দিয়ে ফেলে দেন খাবার।

ভারতফেরতদের অভিযোগ, রাতে যে মাছ খেতে দেয়া হয়েছে তা পচা দুর্গন্ধযুক্ত একদম খাওয়ার অনুপযোগী। হট্টগোলের খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুনিরা পারভীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। বুঝিয়ে শান্ত করা হয় সবাইকে। পরিস্থিতি আসে নিয়ন্ত্রণে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোয়ারেন্টাইনে থাকা বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, চুয়াডাঙ্গায় কোয়ারেন্টাইনে আসার প্রথম দুদিন আমরা ভালই ছিলাম। এরপর থেকে খাবার নিয়ে যা হচ্ছে তা রীতিমত অত্যাচার। তিনবেলা দেয়া হচ্ছে অখাদ্য ও পরিমাণে কম। বুধবার সকাল থেকে তিনবেলা ছাড়া বিগত দিন সরববরাহকৃত খাবারের প্যাকেটের গায়ে লেখা ছিল না কোন রেস্তোরাঁর নাম। বুধবার দুপুরে যে মুরগির মাংস খেতে দেয়া হয়েছিল তা খাওয়া যায়নি। রাতে তো পচা মাছ দেয়া হয়। খেতে না পেরে প্রতিবাদ করেছে সবাই।

তারা আরও বলেন, অনেকে খাবারের প্যাকেট ছুঁড়ে দিয়েছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকাদের দিকে। অনলাইনে পছন্দের খাবার নেয়ার ব্যবস্থা নেই। পছন্দমতো কিছু যে আনব, তাও নিষেধ। আমরা তো কোন অপরাধ করিনি। তাহলে কেন এই জেলখানার শাস্তি? অসংখ্যবার মৌখিক অভিযোগ, অনুরোধ করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে তাতে কোনো কাজ হয়নি। আমাদের টাকা খরচ করে কেন অখাদ্য কেনা হচ্ছে?

বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুরে কোয়ারেন্টাইনে খাবারসহ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এনডিসি) আমজাদ হোসেন বলেন, ‘মান যাচাই করে চুয়াডাঙ্গা শহরের তিনটি রেস্তোরাঁকে পর্যায়ক্রমে দেয়া হয়েছে সরবরাহের কাজ। তদারকিতে দুজন ম্যাজিস্ট্রেট থাকেন। বুধবার রাতে ১০-১২ জন কোয়ারেন্টাইনে থাকা মাছের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অন্যরা কোনো অভিযোগ করেননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাংলাদেশি যাত্রীদের কাছ থেকে থাকা খাওয়া বাবদ জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা জমা নেয়া হয়েছে। খাবার নিয়ে অভিযোগ ওঠায় এর আগে সরবরাহকারী হোটেল বদল করা হয়। থাকা খাওয়াসহ যাত্রীদের দেখভালের বিষয়টির সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের ভাবমূর্তি জড়িত। তাই রাতে খাবার সরবরাহকারী মেহমান হোটেলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্তের পর প্রয়োজনে সিলগালা করা হবে।’বৃহস্পতিবার থেকে রেডচিলি নামে একটি হোটেল খাবার সরবরাহ করবে বলেও জানান তিনি।

আরপি/ এসআই

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top