রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


ভুয়া জন্মসনদ দিয়ে দলিল লেখকের লাইসেন্স!


প্রকাশিত:
২৬ নভেম্বর ২০২০ ২২:৩৬

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৫২

সুকুমল কুমার প্রামাণিক

নওগাঁর রাণীনগরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ভুয়া জন্মসনদ দিয়ে লাইসেন্স বাগিয়ে নিয়েছিলেন ৬ বছর আগে। তখন থেকেই অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। ৬ বছর পর গোমর ফাঁস হয়ে পড়লে পরিস্থিতি সামাল দিতে নিজেই লাইসেন্স স্যারেন্ডার করতে গিয়ে সাব-রেজিস্টারের জালে ধরা পড়েছেন সেই দলিল লেখক। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বেশ দাপটের সাথে প্রভাব খাটিয়ে জমি রেজিস্ট্রি কাজ করার চেষ্টা করলেও স্থানীয় দলিল লেখকদের তোপের মুখে টিকতে না পেরে নিজেই জালিয়াতির কথা প্রকাশ করে তার নামীয় লাইসেন্সটি সাব-রেজিস্ট্রি জমা দেন তিনি। পরে সেটি প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহা-পরির্দশক বরাবরে পাঠানো হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার কাটরাশাইন গ্রামের অজিত কুমারের ছেলে সুকুমল প্রামানিক তার জন্ম তারিখ জালিয়াতি করে ২০১৪ সালে দলিল লেখকের লাইসেন্স বাগিয়ে নিয়ে ঘাপটি মেরে রাখেন। সম্প্রতি ভূমি রেজিস্ট্রি কাজে তাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে এমন ধোঁয়া তুলে সাবরেজিস্ট্রি অফিস রাণীনগরে বিভিন্ন ভাবে হট্টগোল করেন তিনি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় তদন্ত শুরু করলে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কাজ করা তো দূরের কথা আইনের বেড়াজাল থেকে নিজেকে বাঁচতে তার লাইসেন্সসহ নিজেই রেজিস্ট্রি অফিসে আত্নসমর্পণ করেন।

দলিল লেখক লাইসেন্স পেতে হলে সর্বশেষ আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহা-পরির্দশক মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত সর্বশেষ গত ২০০৩ সালের ৩১ মে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাশ এবং বয়স নুন্যতম ২১ বছর বয়স হতে হবে। কিন্তু সুকুমল কুমার প্রামানিক উপজেলার মধুপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এসএসসি মানবিক বিভাগ থেকে ২.৬৩ জিপিএ পেয়ে পাশ করে। পাশের সনদ অনুযায়ী জন্ম তারিখ ৭ অক্টোবর ১৯৯৭। পরবর্তীতে জালিয়াতি করে দলিল লেখকের লাইসেন্স বাগিয়ে নেওয়ার নামে জন্ম তারিখ ৭ অক্টেবর ১৯৯১ দেখানো হয়। এরকম জালিয়াতি করে গত ০৮/০৪/২০১৪ ইং তারিখের স্মারক নং নিপ/৩০২৩ মূলে নওগাঁ জেলা রেজিস্ট্রার ২৪/০৪/২০১৪ইং তারিখে সুকুমল কুমার প্রামানিকের নামে (সনদ নং- ১১৫) দলিল লেখকের লাইসেন্স বাগিয়ে নেয়। এই জালিয়াতির ঘটনায় রাণীনগর সাব রেজিস্ট্রি অফিসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে। স্থানীয়দের দাবি এই সমস্ত ভুয়া লাইসেন্স ধারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

এ ব্যাপারে সুকুমল কুমার প্রামানিক জানান, সেই সময় লাইনঘাট করে আমিও সনদপত্র নিয়েছিলাম। তবে দলিল লেখকের সনদপত্র নেওয়ার জন্য কত বয়স লাগে তা আমার জানা ছিলো না। পরবর্তীতে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও যখন আমাকে দলিল লেখক হিসেবে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কাজ করার সুযোগ না দেওয়ার কারণে আমি চলতি বছরে দলিল লেখকের সনদপত্রটি কর্তৃপক্ষের কাছে সমর্পন করেছি।

রাণীনগর উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ জানান, সুকুমলের এই ভূয়া লাইসেন্সের সত্যতা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দলিল লেখক সমিতির পক্ষ থেকে চলতি মাসের ১৫ তারিখে কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত আবেদন দেওয়া হয়েছে। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ তার লাইসেন্স বাতিল মর্মে আদেশ জারি করেছে।

জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম জানান, প্রজ্ঞাপন অনুসারে একুশ বছরের নিচে কেউ দলিল লেখকের সদনপত্র পেতে পারে না। তবে যদি কেউ পেয়ে থাকে সেটা কিভাবে সম্ভব তা আমার জানার বাহিরে। তবে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে সুকুমলের লাইসেন্স বাতিল করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

 

আরপি/এসকে

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top