রাজশাহী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


মহাদেবপুরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ণাঢ্য কারাম উৎসব উদযাপন


প্রকাশিত:
৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১২:২২

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:৫২

নানা আয়োজন ও উৎসবমুখর পরিবেশে নওগাঁর মহাদেবপুরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব উদযাপন

নানা আয়োজন ও উৎসবমুখর পরিবেশে নওগাঁর মহাদেবপুরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব উদযাপিত হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সর্ববৃহৎ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবকে ঘিরে আদিবাসী পল্লীগুলোতে ছিল সাজসাজ রব। গত বুধবার বিকেলে উপজেলার নাটশাল ফুটবল মাঠে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ওঁরাও সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব কারাম। ওঁরাওদের গ্রামে গ্রামে কারাম বৃক্ষ’র (খিলকদম) ডাল পূজাকে কেন্দ্র করে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। বংশ পরম্পরায় যুগ যুগ ধরে প্রতি বছর ভাদ্র মাসে পূর্ণিমায় উত্তরের সমতল ভূমির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকেরা এই উৎসব পালন করে।

কারাম একটি গাছের নাম। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মানুষের কাছে এটি একটি পবিত্র গাছ। এই কারাম গাছকে তারা মঙ্গলের প্রতীক বলে মনে করেন। ওই গাছের ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে রেখে পূজা অর্চনা, নাচ গান ও কিচ্ছা বলার মধ্য দিয়ে প্রতি বছর কারাম উৎসব পালন করে থাকেন তারা।

পূজা শেষে ওই ডাল উঠিয়ে গ্রামের সব বয়সের নারী পুরুষ নেচে গেয়ে গ্রামের পুকুরে বিসর্জন দেয়। ওঁরাও, সাঁওতাল, মুন্ডা, পাহান, মালো, মাহাতোসহ প্রায় ৩৮টি জাতিসত্তার মানুষ কারাম উৎসব পালন করেন।
এ উৎসব উপলক্ষে আলোচনা সভা এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নৃত্যগীত পরিবেশিত হয়।

করোনা পরিস্থিতির কারনে এবার সীমিত পরিসরে উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এর আগের বছরগুলোতে ৩০ থেকে ৪০টি সাংস্কৃতিক দল একসঙ্গে নাটশাল মাঠে নাচ গান পরিবেশন করলেও এবার ২০টি সাংস্কৃতিক দল একসঙ্গে নাচ গান পরিবেশন করে। নাচে গানে ও ঢোল মাদলের আওয়াজে মাতোয়ারা হয় নাটশালে আসা নারী পুরুষ। সাংস্কৃতিক পর্ব শেষে আলোচনা সভা ও পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

আয়োজিত আলোচনা সভায় নাটশাল কারাম মন্দিরের পুরোহিত কার্তিক ওঁরাও এর সভাপতিত্বে এসময় বক্তব্য দেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা ময়নুল হক মুকুল, বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি শহীদ হাসান সিদ্দিকী স্বপন, বাসদ এর সমন্বয়ক জয়নায় আবেদীন মুকুল, জাতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সদস্য সাংবাদিক আজাদুল ইসলাম আজাদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সবিন মুন্ডা, রাইগাঁ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আরিফুর রহমান, আরকোর নির্বাহী পরিচালক সজল কুমার চৌধুরী প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, শুধু নিছক বিনোদনের জন্য নয়; আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার আন্দোলন হিসেবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বক্তারা আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের দাবি জানান। এছাড়াও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ওপর সকল অন্যায়-অত্যাচার-জুলুম বন্ধে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান বক্তারা। আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক দলগুলোকে পুরষ্কিত করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাতে নাটশাল ও বকাপুর আদিবাসী পল্লীতে কারাম (ডাল) পূজা অনুষ্ঠিত হয়। উৎসব কালে গাছ দেবতা যেন ভাল ফসল দেয়, সে প্রার্থনা করা হয়। এই গাছকে ঘিরে চলে আরাধনা। শিশু কিশোর থেকে সব বয়সের ওঁরাও গানের সুরে সুর মিলিয়ে গাছ দেবতার প্রার্থনায় মেতে উঠে। গাছ দেবতার আনুকুল্য পাওয়ার জন্য ধান, শর্ষেদানা, কলাই, গম প্রভৃতি ফসলের বীজ এই কারাম গাছের গোড়ায় রাখা হয়।

যেন গাছ দেবতা সামনের বছর ভাল ফলন দেয় ও জগতের সব বিপদ-আপদ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করেন। সে প্রার্থনা করে রাতভর চলে এই সম্প্রদায়ের নৃত্যগীত ও হাড়িয়া পান। কারাম উৎসবকে ঘিরে ওঁরাও গ্রামগুলোতে প্রস্তুতি চলে ১৫ থেকে ২০ দিন। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত নাচ গান চলে। ওঁরাওরা এ উৎসবের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকে।

 

আরপি/এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top