রাজশাহী বুধবার, ১৭ই এপ্রিল ২০২৪, ৪ঠা বৈশাখ ১৪৩১


প্রকৃতি তার অপার সৌন্দর্যে নববধূর সাজে সেজেছে বর্ষা


প্রকাশিত:
১৫ জুন ২০২০ ২৩:০২

আপডেট:
১৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:৩৯

ছবি: প্রকৃতি তার অপার সৌন্দর্যময় ফুল

প্রকৃতি তার অপার সৌন্দর্য বিলিয়ে দিতে নববধূর সাজে সেজেছে। প্রকৃতিতে আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন। বর্ষার সতেজ বাতাসে মিশেছে কৃষ্ণচূড়া, জুঁই, কামিনী, কদম, জারুল আর শালুক ফুল, বেলিসহ অজানা-অচেনা অজস্র ফুলের সুবাস।

পুষ্প-বৃক্ষে, পত্রপল্লবে, নতুন প্রাণের সঞ্চার করে নতুন সুরের বার্তা আর সবুজের সমারোহ নিয়ে এসেছে বর্ষা। "পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে/পাগল আমার মন জেগে ওঠে"। স্রষ্ঠার ভুবনে এমন মনমুগ্ধকর গান বাংলার ষড়ঋতুতেই ভূমিষ্ঠ হতে দেখা যায়।

"আষাঢ়ে বাদল নামে নদী ভর ভর/মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর"। ঋতুচক্রের আবর্তে রবীন্দ্রনাথের সেই কাব্যিক প্রকাশেই প্রকৃতিতে এসে গেছে বর্ষা। বর্ষার আগমনী বৃষ্টিতে অবিরাম মেতেছে প্রকৃতি। এই করোনাকালে গ্রীষ্মের দাবদাহ-ধুলোমলিনতা আর সকল জীর্ণতা ধুয়ে প্রকৃতির আকাশে আজ গাইছে যেন সবুজের জয়গান।

বর্ষার সতেজ বাতাসে মিশেছে জুঁই, কামিনী, কদম, শালুক ফুল, বেলিসহ অজানা-অচেনা ফুলের সুবাস। নতুন সুরের বার্তা নিয়ে সবুজের সমারোহ নিয়ে এসেছে বর্ষা। তরুণী, নববধূর খোঁপায় কদম ফুল সেজেছে আপন সাজে। "পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে পাগল আমার মন জেগে জেগে ওঠে"।

ষড়ঋতুতে একেক ঋতু প্রকৃতিতে একেক রকমের বার্তা নিয়ে আসে। প্রতি দুই মাস অন্তর ঋতু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রকৃতিতে চলতে থাকে রূপের পালাবদল। আমাদের দেশে ঋতু গণনার দিক থেকে প্রথম ঋতু গ্রীষ্ম। সাধারণত কাঠফাটা রোদ আর গরমের জন্য গ্রীষ্ম ঋতুর

খ্যাতি থাকলেও দৃষ্টিনন্দন ফুলে ফুলে প্রকৃতি সাজাতেও গ্রীষ্ম ঋতুর জুড়ি নেই। গ্রীষ্মের পর প্রকৃতিতে এখন বর্ষা। এসময় মেঘের আকাশে উঁকি মারে কাঠফাটা রোদ্দুর আর অসহ্য গরম আবার অন্যদিকে মেঘে মেঘে ঘর্ষণে নেমে পড়ে অঝোরে বৃষ্টি। বর্ষার জলে গাছের ডালে বসে থেকে পাখপাখালিরা কিছু সময় স্নান সেরে নিতে দেখা যায়। এ সময় ধুলোবালি মাখা গাছের পাতাগুলো লকলকে সবুজে ফুটে ওঠে।

কৃষ্ণচূড়া আমাদের দেশের অতিপরিচিত দৃষ্টিনন্দন গাঢ় লাল ফুল। কৃষ্ণচূড়া ফুলের ভেতরের অংশ হালকা হলুদ ও রক্তিম হয়ে থাকে। দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলসহ শহরের গাছে গাছে লালে লাল হয়ে ফুটতে দেখা যায় দৃষ্টিনন্দন অগ্নিরাঙা কৃষ্ণচূড়া ফুল। জানা যায়, কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কারে এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম  delonix regia। কৃষ্ণচূড়াগাছের উচ্চতা সর্বোচ্চ (১১-১২) মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে এই ফুলের থোকা অনেক দূর পর্যন্ত ছড়ানো থাকে। বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। কুঁড়ি আসার কিছুদিনের মধ্যে পুরো গাছ ভরে যায় ফুলে ফুলে। আমাদের দেশে উজ্জ্বল লাল ও লাল হলদেটে—এই দুই ধরনের কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটতে দেখা যায়। তবে লাল কৃষ্ণচূড়াই সচরাচর আমাদের চোখে পড়ে। আমাদের দেশে প্রায় হারিয়ে যাওয়া লাল হলদেটে কৃষ্ণচূড়াকে অনেকে রাধাচূড়াও বলে।

সোনালু আমাদের দেশে অতিপরিচিত দৃষ্টিনন্দন পাঁচ পাপড়ির থোকাযুক্ত হলুদ রঙের ফুল। সোনালু ফুলের আদি নিবাস হিমালয় অঞ্চল ধরা হলেও বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমার অঞ্চলজুড়ে রয়েছে এর বিস্তৃতি। অস্ট্রেলিয়ায় নিউ সাউথ ওয়েলস ও কুইন্সল্যান্ডের উষ্ণ অঞ্চলে এদের প্রচুর দেখা যায়।

সোনালু ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম  cassia fistula এবং  albizia inundata। ইংরেজি ভাষায় সোনালু গাছকে বলা হয় গোল্ডেন শাওয়ার ট্রি বা সোনালি ঝরনার বৃক্ষ। সোনালু গাছ সাধারণত (১৫-২০) মিটার উঁচু হয়ে থাকে। উঁচু থেকে মাঝারি উঁচু ভূমি সোনালু গাছ উৎপাদনের জন্য উপযোগী স্থান।

এ গাছের বাকল এবং পাতার antibacterial, antioxidant, hepatoprotective, hypoglycemic, hepatoprotective ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। এটি ডায়রিয়া ও বহুমূত্র রোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। সোনালুর ফুল-ফল সবই বানরের প্রিয় খাবার। তাই কোনো কোনো এলাকায় সোনালু ফলকে বানরের লাঠিও বলা হয়।

জারুল আমাদের দেশের অতিপরিচিত দৃষ্টিনন্দন গোলাপি রঙের ফুল। পাতাঝরা জারুল বৃক্ষে শীতকালে পত্রশূন্য থাকলেও বসন্তে গাঢ় নতুন সবুজ পাতা গজায় এবং ফুল ফোটে গ্রীষ্মে।

যতটুকু জানা যায়, জারুল ফুলের আদি নিবাস শ্রীলঙ্কায় হলেও জারুল ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব বৃক্ষ। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও চীন, মালয়েশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে জারুল গাছের দেখা মেলে। জারুল ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম  lagerstroemia speciosa এবং ইংরেজি নাম giant crape-myrtle। জারুল গাছ সাধারণত (১০-১৫) মিটার উঁচু হয়ে থাকে। নিম্নাঞ্চলের জলাভূমিতেও জারুল ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে এবং শুকনো এলাকাতেও এদের মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় না। গ্রীষ্মের শুরুতেই এর ফুল ফোটে এবং শরৎ পর্যন্ত দেখা যায়।

 

আরপি/আআ-০৮

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top