রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


আত্রাই নদীতে ছিপ দিয়ে মাছ ধরার হিড়িক


প্রকাশিত:
২৬ আগস্ট ২০২২ ০১:০২

আপডেট:
২৬ আগস্ট ২০২২ ০১:০৪

ছবি: প্রতিনিধি

ছিপ মাছ ধরার সরঞ্জাম। ছিপ ফেলে মাছ ধরা পৃথিবীব্যাপী মানুষের অন্যতম একটি শখ। বাশেঁর শক্ত ও দৃঢ় কাঠিতে সূতা বেঁধে পানিতে ছেড়ে দেয়া হয়। সূতার অন্য প্রান্তে থাকে লোহার তৈরী বরশি। বরশিতে টোপ লাগিয়ে ছিপ ফেলা হয়। মাছ টোপ গিললে সূতায় টান পড়ে আর তখনই ছিপ দ্রুত টেনে তোলা হয়।

এভাবেই মানুষ নদীনালা, পুকুর, ডোবাসহ বিভিন্ন জায়গাতে মাছ শিকার করে থাকে। কেউ এই মাছ শিকার করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আবার কেউ শখের বসে বরশিযুক্ত শিপ বা হুইল দিয়ে মাছ শিকার করে থাকে। শিপ দিয়ে মাছ শিকারে ঘন্টার পর ঘন্টা ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হয়।

সম্প্রতি নওগাঁর মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীতে বুড়িদহ খেয়া ঘাটে বাহারি রকমের ছিপ দিয়ে মাছ শিকারের উৎসবে মেতেছেন শৌখিন মৎস্য শিকারিরা। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বুড়িদহ খেয়া ঘাটে মাছ শিকারের এই উৎসব চলে। ছোট,বড়,যুবক,বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ পাল্লা দিয়ে মাছ শিকার করে সেখানে।

গত বুধবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৮০ থেকে ১০০ জন শিকারি বিভিন্ন পজিশনে বসে নদীর পাড়ে বিভিন্ন জায়গাতে ছিপ,হুইল ও টানা বরশি দিয়ে মাছ শিকার করছে। অনেকে একের পর এক সারি বদ্ধ ভাবে বসে ব্যস্ত মাছ শিকারে।

পাশে কিছু উচ্ছুক জনতা মাছ শিকারের সেই দৃশ্য উপভোগ করছে। এর মাঝে ফ্লাস্কে করে চা, আর ব্যাগে পান সিকারেটসহ ভ্রম্যমাণ দোকান নিয়ে মাছ শিকারীদের কাছে তা সরবরাহ করেছে কয়েকজন বিক্রেতা। সব মিলিয়ে এসব দৃশ্য দেখে যেকারো মন ভাল হয়ে যাবে খুব সহজে।

জানা যায়, নদীতে পানি কমতে শুরু করলেই হুইল ও সিপ নিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে মানুষ মাছ শিকার করেন বুড়িদহ খেয়াঘাটে। এখানে অনেকে পেশা হিসেবে আর অনেকে শখের বসে মাছ শিকার করতে আসে। সকাল ৮ টা থেকে রোদে পুড়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ শিকারে ব্যস্ত সময় পার করেন তারা।

মজার ব্যাপার হলো মাছ শিকারের নেশাতে এই গরমে ছাতা ছাড়া রোদে বসে থাকেন চাতক পাখির মতন। আর ভাবে কখন বরশিতে একটা মাছ আটকাবে। তবে ছোট মাছের পাশাপাশি রুই,কাতলা,ম্যাল,আইড় ও বড় বোয়াল মাছ আটকা পড়ে শিকারির বরশিতে।

বুড়িদহ খেয়াঘাটের মাঝি গোপাল চৌধুরী বলেন, মাছ ধরা হলো অত্যন্ত ধৈর্যের একটা কাজ এবং এটা নেশার মতন। কয়েক বছর থেকে এই জায়গাটা বরশি দিয়ে মাছ ধরা খুব বেড়ে গেছে। বালি উত্তোলনের ফলে এই স্থান অনেক গভীর হয়ে গেছে তার পর থেকে বড় বড় পাওয়া যায় এখানে। অনেকে সারাদিনে একটা মাছও পায়না। আবার অনেকে দুইটা তিনটা বা তারও বেশি মাছ পায়। যার কৌশল বেশি সে বেশি মাছ পায়।

স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে মাছ ধরতে আসে এখানে। এছাড়া মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে ভ্রম্যমাণ চা বিক্রেতা বেড়েছে ফলে তাদের উপার্জন বেড়েছে। বাহারি রকমের হুইল, দামি মাছের চার্ট নিয়ে আসেন শিকারিরা। মাছ ধরার চার্ট তৈরিতে যে পরিমাণ খরচ সে টাকা দিয়ে অনেকের মাছ কেনা হবে। তবুও শখ মাছ ধরা বলে কথা। প্রতিদিন বিকেল হলে মানুষজন মাছ ধরা দেখতে ভিড় জমায় বুড়িদহ ঘাটে।

উপজেলার প্রসাদপুর বাজার থেকে আসা মাছ শিকারী তুষার জানান, মাছ ধরা তার শখ । আর এই শখ এখন তার নেশায় পরিনিত হয়েছে। মাছ ধরতে তার খুব ভাল লাগে। তাই প্রতিদিন বিকেল হলেই সে দুই থেকে তিনটা হুইল নিয়ে চলে আসে বুড়িদহ ঘাটে।

তিনি আরও জানান আমার মতন অনেকেই আছে যারা বিকেল হলে এখানে মাছ শিকার করতে আসেন। এদের মধ্যে অনেকে সরকারি চাকরি করেন। আমি কোনদিন মাছ পাই আবার কোনদিন পাইনা। এছাড়াও অনেক পেশাদার মাছ শিকারী আছে যারা বিক্রির জন্য মাছ শিকার করে থাকেন।

 

আরপি/এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top