রাজশাহী মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১


নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায়

মুজিব শতবর্ষের ঘরে বসবাস করলেও নাম নেই রেজিস্ট্রিতে


প্রকাশিত:
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৪:১৯

আপডেট:
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৪:২২

ছবি: মুজিব শতবর্ষের ঘর

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মিঠাপুর ইউনয়নের মিঠাপুর পুরতান বাজারের পাশে খাস জমিতে ১৫টি আধাপাকা ঘর তৈরী করা হয়েছে। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়া এবং দূরবর্তী হওয়ায় চারটি পরিবার এসব ঘরে বসবাস করছে না। তবে ওইসব ঘরে নতুন চারটি পরিবার বসবাস করছে। এজন্য ঘরগুলো রেজিস্ট্রি একজনের নামে, বসবাস করছে অন্যজন। এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ঘরগুলোর সুবিধাভূগিদের তালিকা তৈরীর সঙ্গে সংম্পৃক্তদের দায়িত্বহীনতা ও অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার কারনে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। বর্তমান বসবাসকারী চার পরিবার ঘরগুলো তাদের নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার দাবী জানিয়েছে ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভূমিহীন, গৃহহীন ও অসহায়দের বসবাসের জন্য ২০২০-২১ অর্থ বছরে মিঠাপুর পুরাতন বাজারের পাশে ১৫টি আধাপাকা ঘর তৈরী করা হয়। শুরুতে এসব ঘর ১৫টি পরিবারের কাছে রেজিস্ট্রি ও খারিজসহ মালিকানা করে হস্তান্তর করা হয়। কিছুদিন বসবাস করলেও ৪, ৯, ১১ ও ১২ নম্বর ঘরে চারটি পরিবার বসবাস করছেন না। তারা হলেন- গন্ধবপুরের মাজেদা খাতুন ও আব্দুল কুদ্দুস মন্ডলের ছেলে রাশিদুল, খাদাইল নগরের মোহাতাব হোসেনের স্ত্রী রাফিয়া এবং বেলায়েত হোসেনের স্ত্রী রেজিয়া। তাদের জমি আছে কিন্তু সামর্থ না থাকায় ঘর করতে পারেনি। আবার তারা তাদের স্বজনদের রেখে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাননা। ঘরগুলো ফাঁকা থাকায় ইউএনও নতুন চারটি পরিবার তুলে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বসবাসকারীরা। কিন্তু তারা দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করলেও ঘর তাদের নামে দেওয়া হয়নি। আধাপাকা ঘরে শান্তিতে বসবাস করতে পারলেও নিজেদের নামে রেজিস্ট্রি না হওয়ায় দুশ্চিন্তা যেন তাদের পিছু ছাড়ছে না।

আবার একই পরিবারের মৃত আবুল হোসেনের স্ত্রী বেলি ৩ নম্বর ঘর এবং তার ছেলে হেলাল হোসেন ৬ নম্বর ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বেলি মিঠাপুর পুরাতন বাজারের গত ২০-২৫ বছর থেকে সরকারী জায়গার উপর দোকান করে জীবিকা চালান। দোকানের সাথে লাগানো ঘরে তিনি থাকেন। মাঝেমধ্যে সরকার থেকে দেওয়া ঘরে রাতে গিয়ে থাকেন। ছেলে হেলাল হোসেন উজালপুর গ্রামে টিন দিয়ে তৈরী ঘরে বসবাস করেন। জমির কেনার জন্য টাকা পরিশোধ করলেও মালিকদের জটিলতায় এখনো তার নিজস্ব বাড়ির জমি রেজিস্ট্রি হয়নি। মা ও ছেলেকে ঘর দেওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। আর এরকম ভাবে সুবিধাভূগিদের তালিকা করা হয়েছে এর সঙ্গে সংম্পৃক্তদের দায়িত্বহীনতা ও অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার কারনে বলে মনে করছেন অনেকে।

১২ নম্বর ঘরে স্ত্রী, সন্তান ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে নতুন ভাবে বসবাস করছেন সাজেদুর ইসলাম। তিনি বলেন, ভ্যান চালিয়ে ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত পাঁচমাস থেকে এ ঘরে বসবাস করছেন। ঘরটি অন্য একজনের নামে থাকলেও বসবাস করছিল না। ইউএনও স্যার একদিন এসে ঘরের তালা ভেঙে আমাদের তুলে দিয়েছেন। ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি নিয়ে গেছেন তিনি। তবে পাশের গ্রামেই সাজেদুরের নিজস্ব বাড়ি আছে, কিন্তু সে জমির মালিক তার মা।

৯নম্বর ঘরে স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছেন ফাতেমা। তিনি বলেন, স্বামী রাজু আহমেদকে নিয়ে ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করতাম। গ্রামে আসলে আত্মীয়দের বাড়িতে থাকতে হতো। আমাদের বসবাস করার মতো কোন জায়গা নাই। দুরাবস্থা দেখে ইউএনও স্যার এ ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। স্বামী-সন্তানকে নিয়ে পাকা ঘরে শান্তিতে থাকতে পারছি। এ ঘরে আগে রেজিয়া নামে একজন থাকত। তার নামেই ঘরটি আছে। ঘরটি আমাদের নামে কাগজপত্র করে দিলে দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতাম। তা না হলে হঠাৎ করে একজন এসে তার বলে দাবী করতে পারে।

খাদাইল নগর গ্রামের গৃহবধু রাফিয়া বলেন, একদিন স্যারেরা গ্রামে এসে আমার টিনের ঘর দেখে ছবি ও ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়ে যান। তারা বলেছিলেন এখানেই ঘর তৈরী করে দেওয়া হবে। আমাদের একদিন ডেকে নিয়ে মিঠাপুর পুরাতন বাজারের পাশে তৈরী করা সরকারি ঘরে বসবাসের জন্য কাগজপত্র দেয়। কয়েকদিন সেখানে ছিলাম। কিন্তু বাড়ি থেকে দুরে হওয়ায় সেখানে থাকার আগ্রহ আর হলোনা। আমার বাড়ি করার জায়গা আছে। সেই জায়গায় ঘর তৈরী করে দেওয়ার কথা ছিল। পরিবারের সাত সদস্য রেখে ওই ঘরে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। ওই ঘরে এখন অন্যজন বসবাস করছে।

বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন বলেন, যে চার পরিবার চলে গেছে তাদের নামে জমির কাগজপত্র হয়ে আছে। তবে নতুন যারা ওই ঘরগুলোতে বসবাস শুরু করেছে তাদের নামে জমি ও ঘরগুলো বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একই পরিবারের দুই সদস্য ঘর পেতে পারে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়টি জানা নেই। আমি উপজেলায় যোগদানের আগে ঘরগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে। যদি দুইজনই ভূমিহীন এবং আলাদা সংসার হয়ে তাহলে তারা ঘর পাওয়ার যোগ্য। তবে খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখা হবে।

 

 

আরপি/এসআর-১৭



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top