রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


কারিগরিতে অভিন্ন প্রশ্নে ভর্তি পরীক্ষা!


প্রকাশিত:
৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৩৯

আপডেট:
১৮ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৪২

ছবি: সংগৃহীত

কারিগরিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে বিভাগভিত্তিক অভিন্ন প্রশ্নে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালায় যে পরিবর্তন আনা হয়েছে সেভাবে ভর্তি করলে কারিগরি থেকে অনেক শিক্ষার্থী মুখ ফিরিয়ে নেবে বলে মনে করেন প্রাইভেট পলিটেকনিক উদ্যোক্তা সমিতি।

শনিবার (৪ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এমন দাবি জানানো হয়।

লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. শামসুর রহমান বলেন, চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।

নীতিমালায় বিজ্ঞান ছাড়া অন্য বিভাগে ভর্তির জন্য তিন সপ্তাহ ক্লাস করে যোগ্যতা অর্জন করতে বলা হয়েছে।

এটি বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়বে। একই নীতিতে সব বিভাগের শিক্ষার্থী ভর্তি না করালে অনেকে জটিলতার কারণে কারিগরিতে ভর্তি হওয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

তিনি বলেন, দেশের ৪১টি সরকারি পলিটেকনিক ও পাঁচ শতাধিক বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে কারিগরি শিক্ষা অ্যাক্ট অনুযায়ী এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তি সুযোগের বিধান আছে।

১৯৫৫ সাল থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের এসএসসি বিজ্ঞান, বাণিজ্যিক, মানবিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়ে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী হচ্ছেন।

তারা দেশ-বিদেশে যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্বপালন করে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে বিজ্ঞান বিভাগ ছাড়া অন্যান্য বিভাগ যেমন মানবিক, বাণিজ্য ও মাদরাসা বিভাগের এসএসসি উত্তীর্ণদের অযৌক্তিকভাবে তিন সপ্তাহের মেকআপ (অগ্রিম) কোর্স করে যোগ্যতার পরীক্ষায় পাস করলে ভর্তির জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়, নতুন ভর্তি নীতিমালায় বৈষম্যমূলক, অযৌক্তিক ও এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করবে। বিপুল-সংখ্যক শিক্ষার্থীকে পলিটেকনিকে পড়তে নিরুৎসাহিত হবে। সরকারের কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হবে।

সমিতির অন্যান্য নেতারা বলেন, গ্রাম অঞ্চলের উচ্চবিদ্যালয়ে অনেকগুলোর মধ্যে বিজ্ঞান গ্রুপ নেই। যেসব বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান গ্রুপ আছে সেখানেও খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থী বিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করে।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এ শিক্ষায় ড্রপ আউটের ব্যাপারে মানবিক, বাণিজ্য ও মাদরাসা থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের দায়ী করছে। তাদের ধারণা সঠিক নয়। অথচ এসব স্তরের শিক্ষার্থীরাই ভালো ফলাফল করছে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে আরও জানানো হয়, দেশে কারিগরি-বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা আশানুরূপ আগ্রহী হয়ে ওঠে না। সেক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতি যদি চালু হয় তাহলে ভর্তিতে বিপর্যয় নেমে আসবে।

সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিকে বিপুল পরিমাণ আসন শূন্য থাকবে, সরকারের এ শিক্ষায় এনরোলমেন্ট বাড়ানোর পরিকল্পনা ব্যর্থ হবে।

বিপুল-সংখ্যক শিক্ষার্থী এ ধরনের বিড়ম্বনামূলক ব্যবস্থার কারণে কারিগরি শিক্ষার পরিবর্তে সাধারণ শিক্ষায় চলে যাবে।

ফলে দেশে শিক্ষিত বেকার তৈরি হবে, সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টির কারণে দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং কর্মক্ষেত্রে দক্ষ জনবলের অভাব দেখা দেবে, আরও বেশি করে বিদেশ থেকে দক্ষ জনবল এসে দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে যাবে।

চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশ সংকটে পড়বে, অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা সরকারের কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হবে।

নতুন ভর্তি নীতিমালা বাতিল করে কারিগরি শিক্ষার ধারা অব্যাহত রাখতে তারা তিন দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো-

মান যাচাই করে সব বিভাগের জন্য অভিন্ন প্রশ্নে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া; মানবিক, বাণিজ্য ও মাদরাসা বিভাগের এসএসসি কোর্সে যদি কোনো ঘাটতি থাকে তা পূরণে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের সিলেবাসে প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করে পাঠদান করা; এবং মেকআপ কোর্সের প্রয়োজন থাকলে ভর্তির পর ক্লাস শুরুর আগে তিন সপ্তাহ ক্লাস নেওয়া।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি আহসান হাবীব, সাধারণ সম্পাদক সোহেলী ইয়াসমিন প্রমুখ।

 

আরপি/ এমএএইচ-১৮



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top