রাজশাহী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


ভোজ্য তেলের যোগান দিতে আসছে ‘সাউ পেরিলা-১’


প্রকাশিত:
২৮ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:৪৭

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:৩৫

নতুন ফসল ‘সাউ পেরিলা-১’

দেশে ভোজ্য তেলের যোগান দিতে নতুন ফসল ‘সাউ পেরিলা-১’ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এইচ এম এম তারিক হোসেন ২০০৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে চাষের উৎসাহ দেখিয়েছে বেসরকারি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান।

দেশে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডসমৃদ্ধ তেলটি দেশের তেলের ঘাটতি কমিয়ে আনার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে যথেষ্ট অবদান রাখতে সক্ষম বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। চলতি বছর ১২ জানুয়ারি ফসলটি সাউ পেরিলা-১ (গোল্ডেন পেরিলা বিডি) জাত হিসেবে নামকরণ করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে অবমুক্ত করা হয়েছে।

বীজে ২৫ শতাংশের ওপরে আমিষ থাকায় তেল আহরণের পরে তা থেকে প্রাপ্ত খৈল গবাদিপশুর জন্য পুষ্টিকর খাবারসহ জৈব সার হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। ৭০-৭৫ দিনের এই ফসল থেকে হেক্টর প্রতি সর্বোচ্চ ১.৫ টন পরিমান বীজ সংগ্রহ করা যাবে। বিজ্ঞানিরা আশা করছেন বাণিজ্যিকভাবে চাষে যেমন তেলের আমদানির পরিমান কমে যাবে, তেমনি সাউ পেরিলা-১ দেশের অর্থনীতিতেও আনতে পারে আমূল পরিবর্তন।

খরিপ-২ মৌসুমে অভিযোজিত এই ফসল সম্পর্কে অধ্যাপক ড. এইচ এম এম তারিক হোসেন বলেন, ‘ ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ১৩টি অঞ্চলে চাষ করেছি। ফসলটি থেকে আমরা লিনোলিনিক এসিড সমৃদ্ধ তেল আহরণ করতে পারব। যা সাধারণ তেলের চেয়ে বেশি উপকারি এবং বাজার মূল্যও বেশি। কৃষক নিজেই বীজ উৎপাদন করে সংরক্ষণ ও পরবর্তীতে চাষ করতে পারবেন। এছাড়াও তেল আহরণও করতে পারবেন স্বাভাবিকভাবে। এতে কৃষকরা বেশি উপকৃত হবেন।’

বাংলাদেশের আবহাওয়ায় চাষযোগ্য কি না জানতে চাইলে এই গবেষক বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এই ফসল চাষ করা সম্ভব। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বীজ বিতরণ করছে। আমাদের কছে বীজের কোন ঘাটতি নেই। এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সম্ভব।

চাষ সম্প্রসারণের জন্য ইতোমধ্যে এক সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম, কৃষি সংগঠক রেজাউল করিম সিদ্দিকের উপস্থিতিতে দেশের বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লাল তীরকে সাউ পেরিলা-১ এর বীজ বিতরণ করা হয়েছে।

প্রতি বছরই প্রায় ৪৬ কোটি ২১ লাখ মেট্রিক টন তেল আমদানি করা হয়ে থাকে। বিপুল পরিমাণ এই তেলের জায়গা দখল করতে পারে এই নতুন ভোজ্য তেল ফসলের চাষের মাধ্যমে। উল্লেখযোগ্যহারে চাষ করা গেলে দেশের অর্থনীতিতে অভাবনীয় পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা সম্পৃক্ত বিজ্ঞানিদের।

সাউ পেরিলা নতুন কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনা আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘সাধারণত ভোজ্য তেল ফসল রবি মৌসুমে চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু সাউ পেরিলা খরিপ-২ এ হওয়া চাষে প্রতিযোগিতা কম থাকায় ভোজ্য তেলজাত দ্রব্যের চাহিদা মেটানো অপেক্ষাকৃত সুবিধা হবে। সম্প্রতি লাল তীরকে বীজ বিতরণ করা হয়েছে। আকিজ গ্রুপও এ নিয়ে উৎসাহ প্রকাশ করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে। আশা করছি দ্রুতই দেশে বাণিজ্যিকভাবে সাউ পেরিলা-১ এর চাষাবাদ শুরু হতে যাচ্ছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেলার ‘আকাবা নার্সারি’র পরিচালক ডা. রুহুল আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পুরোপুরি জৈব উপায়ে সাউ পেরিলা-১ চাষে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়েনি। বিঘা প্রতি ৬০০০ চারা চাষ করা গেলেও এর অর্ধেক চাষে আমি প্রায় ২০০ কেজির মত বীজ পেয়েছি। উৎপাদন খরচ অন্য সব তেলবীজের মতই, তবে রোগবালাই না হওয়াই কীটনাশক খরচ নেই বললেই চলে।’

পিএইচডি ফেলো মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম মজুমদার ২০১৮ সাল থকে অধ্যাপক ড. এইচ এম এম তারিক হোসেনের অধীনে সাউ পেরিলা-১ নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, দেহের জন্য উপকারী এ তেলে নেই কোনো ক্ষতিকারক ইউরিক এসিড। তাছাড়াও দেশীয় পদ্ধতিতেও আহরণ করা যাবে তেল। মানের দিক থেকে উচ্চতর হওয়াই আমদানিকৃত বিভিন্ন উচ্চমূল্যের তেলের বিপরীতে দেশে উৎপাদিত তেলটির প্রাধান্যই বেশি থাকবে বলে ধারণা তাদের।

 

আরপি/এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top