রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


সিন্ডিকেটের থাবায় এবারো চামড়ার এ দশা!


প্রকাশিত:
২২ জুলাই ২০২১ ২১:৪৫

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৩৪

চামড়া শিল্প নিয়ে নানারকম পরিকল্পনা করছে সরকার। ঈদুল আজহার পর দাম নিম্নমুখী যাতে না থাকে সেদিকেও নজর রাখার দাবি ছিল মানুষের। তবে এবারো চামড়ার দাম হতাশ হতে হয়েছে। ক্ষুব্ধ অনেকেই। গত বছরের চেয়ে এবার কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার দাম অতি সামান্য বাড়লেও এই চামড়ার বাজার একাধিক চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। এই চক্রগুলো সিন্ডিকেট করে অল্প দামে কাঁচা চামড়ার বাজার তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।

দেখা যাচ্ছে, কয়েক বছর আগেও যে চামড়া বিক্রি হতো ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়। এবার সেই একই ধরনের চামড়ার দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এর ফলে গত দুই-তিন বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর চামড়ায় যাদের হক রয়েছে, সেই এতিম ও দুস্থরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া সাধারণ ব্যবসায়ীরাও পড়ছেন আর্থিক ক্ষতির মুখে।

বুধবার (২১ জুলাই) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজারীবাগে রাস্তার পাশে পড়ে ছিল শত শত পিস অবিক্রিত কোরবানির পশুর চামড়া। অবশ্য শুরুর দিকে গরুর চামড়া ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ এবং ছাগলের চামড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে চামড়ার দাম ততই নিম্নমুখী হয়েছে।

হাজারীবাগ থানা থেকে কিছুটা দূরে রাস্তায় একপাশে চামড়া সংগ্রহ করছিলেন কয়েকজন। তাদের একজন বলছিলেন, দিনের বেলায় চামড়ার রেট কিছুটা ভালো ছিল। তবে রাত যত গভীর হবে ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে যত চামড়া ঢোকা শুরু করবে, এতে চামড়ার রেট কমতে থাকবে। ঢাকা শহরের চামড়ার একটু কদর বেশি থাকে। কারণ, চামড়ার পুরত্ব বেশি হয়।

মৌসুমী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার চামড়ার দাম বাড়ালেও আড়তদাররা কৌশলে দাম দিচ্ছেন না তাদের। বুধবার সকালে যে দাম ছিল, দিনের শেষে সেই দাম আরও কমতে শুরু করে।

মূলত কোরবানির পশুর চামড়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করেন মৌসুমি ব্যবসায়ী আর ফঁড়িয়ারা। তারা সেই চামড়া বিক্রি করে আড়তদারদের কাছে। সেখান থেকে চামড়া যায় ট্যানারিতে। ট্যানারি মালিকরা কত দামে আড়তদারদের কাছ থেকে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করবে, সে দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

গত বছরের চেয়ে এ বছর সেই দাম বাড়ানো হয়েছে। প্রতি বর্গফুট গরু-মহিষের চামড়া ঢাকার ট্যানারি মালিকরা এবার কিনবেন ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়; গত বছর এই দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়ার দাম হবে ৩৩ টাকা থেকে ৩৭ টাকা, গত বছর যা ২৮ থেকে ৩২ টাকা ছিল। সারাদেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা, আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সিন্ডিকেটের চামড়া সংগ্রহের কৌশল
ঈদের দিন সিন্ডিকেটের কৌশল দেখা যায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। প্রথমত, তারা দুপুর পর্যন্ত চামড়ার কাছে যায়নি। এর ফলে চামড়ার কদর নেই মনে করে লাখ লাখ কোরবানিদাতা বাধ্য হয়ে চামড়া কোনও এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দিয়ে দিয়েছেন। আবার অনেকেই দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে ক্রেতা না পেয়ে নামমাত্র দামে বিক্রি করেছেন। সিন্ডিকেট চক্রটি জানে ফঁড়িয়া বা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া নেওয়ার চেয়ে মাদ্রাসা ও এতিমখানার কাছ থেকে সস্তায় চামড়া কেনা যায়।

এ প্রসঙ্গে রাজধানীর মানিকনগর এলাকার বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া বলছেন, সকালে কোরবানি দেওয়ার পর দুপুর ১টা পর্যন্ত চামড়া কিনতে কেউ আসেননি। আমরা জানি ৪ ঘণ্টার মধ্যে চামড়ায় লবণ না লাগালে চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। সে কারণে বাধ্য হয়ে চামড়া মাদ্রাসায় দান করে দিয়েছি।

শুধু মানিকনগর নয়, রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় একই চিত্র, তা হলো চামড়া কেনার জন্য লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানা ছাড়াও অনেক স্থান থেকে আড়তদার ও ট্যানারির প্রতিনিধি এবং মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফঁড়িয়ারা কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে ঠিকই মাঠে তৎপর ছিলেন।

অবশ্য দাম নিয়ে এবার ততটা অভিযোগ ছিল না কোরবানি দাতাদের; এর বড় কারণ, বেশিরভাগ কোরবানিদাতা পশুর চামড়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় প্রায় বিনামূল্যে দিয়ে দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে শাজাহানপুর এলাকার মকবুল হোসেন জানালেন, তিন চার বছর আগেও এক চামড়া কেনার জন্য তিন চার গ্রুপ আসতো। তখন তিন হাজার টাকা পর্যন্ত একটা চামড়া বিক্রি করা গেছে। কিন্তু এবার একজন মৌসুমি ব্যবসায়ী ৩০০ টাকা বলে চলে যান, আর কেউ চামড়া কিনতে আসেন না। এভাবে সিন্ডিকেট করে নামমাত্র মূল্যে চামড়া কিনে লাভে বিক্রি করছেন।

এদিকে, মৌসুমি ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, গত বছরও চামড়ার ভালো দাম পাননি তারা। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বাজার কিছুটা ভালো হলেও তা আশাব্যঞ্জক নয়। অন্যদিকে করোনার কারণে এবার মাদ্রাসা থেকেও সেভাবে শিক্ষার্থীদের কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য পাড়া-মহল্লায় দেখা যায়নি।

এদিকে আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা বলছেন, গতবারের চেয়ে এবার তারা অন্তত দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা বেশি দিয়ে প্রতি পিস চামড়া কিনছেন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সরকারের পাশাপাশি সবার প্রচেষ্টায় এবার চামড়ার বাজারের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গত বছরের চেয়ে প্রতি পিস চামড়া দেড় থেকে ২০০ টাকা বেশি দিয়ে আমরা কিনছি।’

বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, ‘এবার প্রতি পিস অন্তত ২০০ টাকা বেশি দিয়ে আমরা কাঁচা চামড়া কিনছি।’

 

আরপি/আআ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top