রাজশাহী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী নগরীর একই পরিবারের তিনজনের করোনা জয়


প্রকাশিত:
৮ জুন ২০২০ ০৩:১৫

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১১:৪০

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী নগরীর একই পরিবারের তিনজন করোনাকে জয় করেছেন। তৃতীয়বারের মতো নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে তাদের। পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারটির লকডাউন তুলে নেয়া হয়েছে।


নগরীর উপর ভদ্রা এলাকার এই পরিবারটির প্রথম এক নারীর করোনা শনাক্ত হয় গত ১৫ মে। রাজশাহী নগরীতে শনাক্ত হওয়া প্রথম করোনা রোগী তিনি। তার নাম উম্মে কুলসুম (৫০)। কয়েকদিন পর তার স্বামী খাদেমুল ইসলাম (৬১) এবং মেয়ে রুকাইয়া ইসলামেরও (১৯) করোনা শনাক্ত হয়।

খাদেমুল ইসলাম বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। রুকাইয়া ইসলাম ঢাকা সিটি কলেজের মার্কেটিং বিভাগের প্রথমবর্ষের ছাত্রী। তার মা উম্মে কুলসুম একজন গৃহিণী। তার ছোট ভাই কাওসার ইসলাম কমল নরসিংদীর আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজের এইচএসসির ছাত্র।

উম্মে কুলসুম কাওসারের কাছেই গিয়েছিলেন মাস দুয়েক আগে। তারপর ফেরেন ১০ মে। সঙ্গে তার বড় ছেলে শিবলী ইসলাম কাননের স্ত্রী ফাহমিমা সাইফ রুমকিও ছিলেন। সেদিন ফেরার পথে লকডাউনের কারণে তারা পথে পথে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। তবে উম্মে কুলসুম কথা দিয়েছিলেন, বাসায় ফিরে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। তিনি কথা রাখেন। বাসায় ঢুকেই তিনি বোয়ালিয়া থানায় ফোন করেন। এরপর পুলিশ তাদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করে।

এরপর বাইরে থেকে ফিরেছেন বলে উম্মে কুলসুম, তার ছোট ছেলে এবং পুত্রবধূর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ১৫ মে পরীক্ষায় দুইজনের রিপোর্ট নেগেটিভ হলেও উম্মে কুলসুমের করোনা শনাক্ত হয়। কয়েকদিন পর তার স্বামী এবং মেয়েরও করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে।

রুকাইয়া ইসলাম কয়েকদিন শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ ছিলেন। তবে তার বাবা-মায়ের তেমন উপসর্গ দেখা দেয়নি। এরই মধ্যে তাদের আবারও নমুনা সংগ্রহ করা হয়। দ্বিতীয় দফা এ পরীক্ষায় কয়েকদিন আগে সবার রিপোর্ট আসে নেগেটিভ।

শুক্রবার তৃতীয় দফা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা শেষে শনিবার রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস উম্মে কুলসুমকে ফোন করে জানিয়েছেন, তৃতীয় পরীক্ষাতেও তাদের তিনজনের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তারা এখন করোনামুক্ত।

বিষয়টি স্বীকার করে নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মণ বলেন, পরিবারটি খুবই সচেতন। কীভাবে করোনা জয় করতে হয় তা তারা দেখিয়ে দিলেন। আমরা তাদের ফুলের শুভেচ্ছা জানাব। এভাবে সব মানুষ যদি সচেতন থাকতেন তাহলে করোনা মোকাবিলা সহজ হয়ে যেত- যোগ করেন ওসি।

করোনাজয়ী খাদেমুল ইসলামের বড় ছেলে শিবলী ইসলাম কানন বলেন, আমার আম্মু রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে প্রথম আক্রান্ত রোগী। তখন খুব খারাপ অনুভূতি ছিল। সেটা এ রকম যে, আমি আমার নিজের শহরটাকে বিপদে ফেলে দিলাম! আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে আমাদের নিজেদের বেশি অপরাধী মনে হয়েছে। সেই টেনশন থেকেই আমরা সিরিয়াস হয়েছি। একজন থেকে বাড়িতে রোগী তিনজন হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা ঘরে রেখে সবকিছু সামলেছে আমার স্ত্রী। কিন্তু আমরা এটা বলতে পারি যে, আমাদের পরিবার থেকে কোথাও করোনা ছড়ায়নি।

প্রসঙ্গত, দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। আর রাজশাহী জেলায় প্রথম শনাক্ত হয় ১২ এপ্রিল পুঠিয়া উপজেলায়। এরপর ১৫ মে রাজশাহী শহরে প্রথম শনাক্ত হন উম্মে কুলসুম। রাজশাহীতে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৭৬ জন। এর মধ্যে ২১ জন রাজশাহী মহানগরীর বাসিন্দা। মোট আক্রান্ত ৭৬ জনের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। আর একই পরিবারের এই তিনজনকে ধরলে এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১৬ জন।

 

 

আরপি/এমএইচ-৯



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top