রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


দানের ক্ষেত্রে কে বেশি অগ্রাধিকার পাবে?


প্রকাশিত:
২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৩৬

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ০০:৫৪

ছবি: সংগৃহীত

ইসলামের অন্যতম বিধান হচ্ছে অসহায়, নিঃস্ব ও দরিদ্র মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। তাদের অভাব পূরণ করা, তাদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।বিশেষ করে ইয়াতিম শিশুর দায়িত্ব গ্রহণ ও প্রতিপালন করা এবং তাদের প্রতি দয়া করা মানবিক দৃষ্টি থেকে যেমন খুবই গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কাজ।


দানের মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা, ক্ষমা এবং সওয়াব অর্জিত হয়; যা আখিরাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম মাধ্যম। সুতরাং আল্লাহ যাদের সম্পদ দান করেছেন তাদের উচিত, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এ জাতীয় মানবিক ও জনকল্যাণমূলক কাজে অর্থ খরচ করা। তাদের সম্পদের জাকাত দেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ দান সদকা করা।

মহান আল্লাহ কুরআনের বহু জায়গায় অর্থ সম্পদ ব্যয় করার মর্যাদার কথা উল্লেখ করেছেন এবং তার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন- আল্লাহ বলেন-
ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ ثُمَّ لَا يُتۡبِعُونَ مَآ أَنفَقُواْ مَنّٗا وَلَآ أَذٗى لَّهُمۡ أَجۡرُهُمۡ عِندَ رَبِّهِمۡ وَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ
‘যারা আল্লাহ্‌র পথে ধন-সম্পদ ব্যয় করে তারপর যা ব্যয় করে তা বলে বেড়ায় না এবং কোনো প্রকার কষ্টও দেয় না, তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের রব-এর কাছে। আর তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।' (সুরা বাকারা : আয়াত ২৬২)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
وَٱلَّذِينَ صَبَرُواْ ٱبۡتِغَآءَ وَجۡهِ رَبِّهِمۡ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنفَقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ وَيَدۡرَءُونَ بِٱلۡحَسَنَةِ ٱلسَّيِّئَةَ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عُقۡبَى ٱلدَّارِ
‘আর যারা তাদের রবের সন্তুষ্টি লাভের জন্য ধৈর্য ধারণ করে এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, আর আমরা তাদের যে জীবনোপকরণ দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং ভালো কাজের দ্বারা মন্দ কাজকে প্রতিহত করে, তাদের জন্যই রয়েছে আখেরাতের শুভ পরিণাম।’ (সুরা রাদ : আয়াত ২২)


হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি ও ইয়াতিম প্রতিপালনকারীর অবস্থান জান্নাতে এই দুই আঙুরের মতো পাশাপাশি হবে। চাই সেই ইয়াতিম তার নিজের হোক অথবা অন্যের (বর্ণনাকারী) মালেক বিন আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল দ্বারা ইশারা করলেন।’ (মুসলিম)

আল্লাহ তাআলা তার পথে খরচ, গরিবদের অভাব মোচন, ইয়াতিম অসহায় শিশুদের প্রতিপালন ও দান করার ফজিলত বর্ণনায় অনেক আয়াত ও হাদিস রয়েছে।

সুতরাং সম্পদশালী মুমিন মুসলমানের উচিত, গরিব অসহায়দের পেছনে খরচ করা। ইয়াতিম শিশু, অসহায় গরিব, ইসলামের বিভিন্ন প্রয়োজনে আল্লাহর দেয়া সম্পদ থেকে যথাসাধ্য খরচ করা। বিশেষ করে আল্লাহর নির্দেশিত পথে দান করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

তবে কারো যদি সীমিত অর্থ থাকে আর অসহায় মানুষের সংখ্যা বেশি হয় তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যার বেশি প্রয়োজন তাকে দান করাই হচ্ছে সর্বোচ্চ পন্থা। যেমন-
অসহায় ব্যক্তি এমন অসুস্থ যে, জরুরি চিকিৎসা না করালে জীবননাশ তথা মারা যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ওই ব্যক্তিকে সহযোগিতা করা। যদি সে সময় চরম অসহায় অবস্থায় কোনো ইয়াতিম শিশু থাকে কিন্তু তার জীবন ধারণের ব্যবস্থা আছে; তখনও জীবন সঙ্কটাপন্ন ব্যক্তিকে সহযোগিতা করাই উত্তম।
পক্ষান্তরে যদি অসহায় ব্যক্তির চিকিৎসা চলছে কিন্তু জীবনহানির সম্ভাবনা নেই তবে সে সময় অভাবি ইয়াতিম শিশুই দান-সহযোগিতা পাওয়ার হক বেশি রাখে।

মূল কথা হলো- অবস্থার আলোকে যার প্রয়োজন বেশি, তাকেই আগে দান করা উচিত। তাতে উপকার ও সাওয়াব বেশি হয়। সব সময় অভাবির সংখ্যা বেশি হলে আর প্রয়োজনের তুলনায় অর্থ কম হলে যার বেশি প্রয়োজন তাকেই দান সহযোগিতা করা।

আল্লাহ তাআলা বিশ্ববাসীকে গরিব, অসহায় মানুষের প্রতিদানের হাত বাড়িয়ে দেয়ার তাওফিক দান করুন (আমিন)।

আরপি / এমবি-১৮



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top