রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


কারবালার স্মরণে তাজিয়া মিছিলে শোকের মাতম


প্রকাশিত:
৯ আগস্ট ২০২২ ২২:১৭

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:০২

ছবি: সংগৃহিত

হিজরি সাল অনুসারে ১০ মহরম তথা আশুরা মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের দিন। ঘটনাবহুল এ দিনে বর্তমান ইরাকের অন্তর্গত কারবালা প্রান্তরে মুয়াবিয়ার হাতে শহীদ হন হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন। মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে আশুরা।

প্রায় সবার গায়ে শোকের প্রতীক কালো পোশাক। নারী-পুরুষ, ছোটবড় সবাই বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ মাতম ধ্বনি করছেন। আবার কেউ কেউ কারবালার বিষাদময় কাহিনী অবলম্বনে জারিগানের করুণ সুরে আহাজারি করছেন। কারবালার শোকের মাতম যেন পুরান ঢাকার হোসেনি দালানের তাজিয়া মিছিলে উঠেছে।

সকাল ১০টায় হোসেনি দালানের ইমাম বাড়া থেকে তাজিয়া মিছিলটি শুরু হয়। তাজিয়া মিছিল অংশগ্রহণ করার জন্য ভোরের সূর্য ওঠার আগেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে শুরু করেন শিয়া অনুসারী ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

এতে কালো-লাল-সবুজের নিশান উড়িয়ে কারবালার শোকের মাতম তুলে খালি পায়ে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন এই মিছিলে। বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ কান্নার মাতম ধ্বনি তুলে বকশিবাজার, উর্দুরোড, লালবাগ চৌরাস্তা, ঘোড়া শহীদের মাজার, আজিমপুর, নিউমার্কেট হয়ে ধানমণ্ডির ২নং রোডের লেকপাড়ে অবস্থিত কারবালার প্রান্থের এগিয়ে যচ্ছে মিছিলটি। মিছিলে কেউবা এগোচ্ছেন নওহা (শোকগীতি) পড়তে পড়তে কেউবা বাদ্য বাজাতে বাজাতে। সবমিলিয়ে শোকের আবহ ছড়িয়ে পড়ে রাজপথে।

বাদ্য যন্ত্র বাজিয়ে, চিৎকার করে মিছিল যাওয়ার সময় পথের দু’পাশে ছিল উৎসুক জনতা ভিড়। মানুষ ছাদে দাঁড়িয়ে, জানালা দিয়ে, বাড়ির বারান্দা ও করিডোরে দাঁড়িয়ে মিছিল উপভোগ করে। পুরো মিছিল ঘিরে ছিল পুলিশ, র‌্যাবসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল।

মিছিলের প্রথম অংশে দুটি কালো গম্বুজ বহন করা হয়েছে বিবি ফাতেমাকে স্মরণ করে। মিছিলে কালো কাপড় দিয়ে প্রতীকী হোসেন (রা.) এর মরদেহ বহন করছে।

দুপুর ১টার দিকে মিছিলটি শেষ হবে বলে জানিয়েছেন হোসেনী দালান মিছিল পরিচালনা কমিটির একজন কর্মকর্তা।

হোসেনি দালান ছাড়াও মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বকশিবাজার, লালবাগ, ফরাশগঞ্জ, পল্টন, মগবাজার থেকেও তাজিয়া মিছিল বের হয়।

অন্যদিকে, সুষ্ঠুভাবে তাজিয়া মিছিল সম্পন্ন করতে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি বহন নিষিদ্ধ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একই সঙ্গে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

চকবাজার থানার এসআই উদয়ন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, ৫০০ এর বেশি পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বিভিন্ন স্তরে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করছেন।

হোসাইনী দালান ইমামবাড়া এর যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ বাকের রেজা মাজলুম বলেন, আশুরার তাৎপর্য মেনে প্রতিবছর আমরা দিনটি উদযাপন করি। কারবালার সেই বিয়োগান্তক ঘটনাকে স্মরণ করি।

মিছিল পরিচালনা কমিটির সুপারিন্ডেন্ট এম এম ফিরোজ হোসেন বলেন, পুলিশের নির্দেশটা মেনে আমরা দিনটি পালন আসছি। ২০১৫ সালে হামলা হয়েছিল। আমরা আশা করছিলাম সেই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। কিন্তু নিম্ন আদালতে আশানুরূপ বিচার হয়নি। আশা করছি উচ্চ আদালতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে পবিত্র আশুরার তাজিয়া মিছিল প্রস্তুতির সময় বোমা হামলায় দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়। ওই ঘটনায় ঢাকার চকবাজার থানায় একটি মামলা হয়। উপপরিদর্শক (এসআই) জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ওই হামলার পর থেকে প্রতিবছর আশুরার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এবারও আশুরাকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

 

আরপি/ এমএএইচ

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top