সফল উদ্যোক্তা হতে চান ফ্যাশন ডিজাইনার শারমিন
‘আপনার পোশাক আপনার রুচির পরিচয় বহন করে। মানানসই আরামদায়ক পোশাক আপনার ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলে। আর মানসম্মত রুচিশীল পোশাক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই তৈরি হয়েছে “কুঞ্জবুটিক” এ কথাগুলো বলছিলেন তরুণ নারী উদ্যোক্তা শারমিন সুলতানা।
শারমিন সুলতানা। রাজশাহী নগরীর হেতেমখাঁ এলাকার মো. জাহিদুলের স্ত্রী। তিনি একজন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা। পড়াশোনা করছেন রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের মার্স্টাসে। বর্তমানে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে কাজ করছেন। অনুকরণীয় ব্যক্তি হিসেবে বেছে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশি ফ্যাশন মডেল এবং নকশাকার বিবি রাসেলকে। শারমিন তার ফ্যাশন ডিজাইনের নাম দিয়েছেন কুঞ্জবুটিক। কুঞ্জবুটিক হলো একটি বাগানের মত। যেখানে অনেক রকমের ফুল হয় ফল হয়, ঠিক তেমনি আমার এখানে শুধু এক রকমের পোশাক পাওয়া যাবে তা নয়; এখানে সব ধরণের পোশাক পাওয়া যাবে।
দীর্ঘ ২ বছর ধরে মেয়েদের বিভিন্ন পোশাক নিয়ে কাজ করে আসছে। সফলতার দিকে এগিয়ে আছেন প্রায়। শুরুতে ৬জন কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করলেও বর্তমানে তার হয়ে কাজ করেন সাড়ে তিনশ জনেরও বেশি মেয়ে। নিজস্ব এলাকায় তিনি এখন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত ।
শারমিন সুলতানার সাথে আলাপচারিতায় ব্যবসায়ে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে নিজের ভালো লাগা থেকেই ব্যবসায়ে আসা। ব্যবসায়ের মাধ্যমে নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানো যায়। একজন ব্যবসায়ী সমাজে অনেক অবদান রাখতে পারেন। একজন ব্যবসায়ীই পারেন হাজার হাজার বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে। মূলত এসব কারণেই ব্যবসায়ের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করা।
ফ্যাশন ডিজাইনটা কেন বেছে নিলেন? এমন প্রশ্ন করলে জবাবে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছা ছিলো একজন উদ্দ্যোক্তা হওয়ার। সাজগোজের প্রতি আমার একটা দুর্বলতা ছিল। ছোটবেলায় মাকে দেখতাম নিজের ও আমাদের জন্য নিজ হাতে পোশাক কেটে ডিজাইন করতে। আমি অধিকাংশ মায়ের হাতের ডিজাইন করা পোশাক পরেছি। তো মাকে দেখে দেখে আমার ভেতর ইচ্ছা তৈরি হয়।
ব্যবসার পরিধি বর্তমানে কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসার পরিধি বর্তমানে অনেকটায় ভালো আমি প্রথমে ৬ জন নিয়ে কাজ শুরু করে আজ আমার এখানে সাড়ে তিনশ জনেরও বেশি কাজ করছে। দেশে-বিদেশে অনেক পোশাক ডেলিভেরি দিয়েছি। সামনে বড় একজন উদ্দ্যোক্তা হবো। একটা বড় দোকান দেবো । বিদেশে যাওয়ারও ইচ্ছে আছে। বর্তমানে আমার ব্যবসার পরিধি ব্যাপক বিস্তৃত হয়েছে। আমার ব্যবসার পরিধি যেমন বেড়েছে তেমন আমার আয়ের পরিমাণও বেড়েছে । এখনো আমার সন্তোষজনক পুঁজি রয়েছে। সাথে সকলকে একটা ভালো পুঁজিও দিতে পারি। তারা সেখান থেকে তাদের সংসার ভালোই চালাতে পারে।
নারী হিসেবে ব্যবসা করতে এসে কোন কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা এমন পশ্নে তিনি বলেন, অনেক প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়েছে। অনেকে অনেক কথা বলতো তারপরও আমি হতাশ হয়নি। কারণ আমি ভাবতাম, যে যা বলে বলুক আমি তো জানি আমি কি রকম। সফলতায় পৌঁছাতে বাধা আসবেই। অনেকে অনেক কিছু বলেছে, তারপরও আমি আমার স্বপ্ন থেকে একটুও পিছিয়ে যায়নি তাই আমি আজ সফল হতে চলেছ। তবে আমার স্বামী আমাকে যথেস্ট সাপোর্ট দিতো বা এখনো দিয়ে যাচ্ছে।
এতো সব নাম থাকতে কুঞ্জবুটিক নাম কেন দেয়া হয়? জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা বাগানে যেমন অনেক রকমের ফুল হয় ফল হয় তেমনি আমার এখানে শুধু এক রকমের পোশাক পাওয়া যাবে তা নয়; এখানে সব ধরণের পোশাক পাওয়া যাবে বলে এর নাম কুঞ্জবুটিক দেয়া হয়।
আপনি বিবি রাসেলকেই কেন পছন্দ করেন? তিনি বলেন, দেশের মধ্যে আমি বিবি রাসেলকে পছন্দ করি এই জন্য যে, তাঁর যে ব্যক্তিত্ব, তাঁর কাজ যেমন তিনি যেকোনো একটা বিষয় নিয়ে কাজ করেন এটাই আমার ভালো লাগে। শধু ডিজাইন নয় তার যে একটা লাইন রয়েছে যেটা নিয়ে তিনি কাজ করেন সেটাই আমার ভালো লাগে। মূলত তিনিও গ্রাম অঞ্চলের মানুষদের নিয়ে কাজ করেন তাই আমিও গ্রামের সাধারণ মানুষ নিয়েই কাজ করছি। দেশীয় পোশাক নিয়ে কাজ করার আরোও বেশি আগ্রহটা তার কাছ থেকেই এসেছে। আমারও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে যে আমি শুধু একটা বিষয় নিয়ে কাজ করবো না বরং এখানে অনেক ধরণের কাজের পোশাক পাওয়া যাবে ।
নতুন নার্রী উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার কী পরামর্শ আছে বলে মনে করেন ? তিনি বলেন, প্রথমেই আমি বলবো “পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর”। নারী ও পুরুষকে এভাবেই দেখেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
বর্তমানে নারীরা কোনো কাজেই পিছিয়ে নেই। তাদের নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর কয়েক দশক আগেও কর্মক্ষেত্রে নারীদের পদচারণা চোখে পড়ার মতো ছিলো না। কিন্তু এখন নারীরা ঘরে বাইরে সব পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছে।
সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। অনলাইন ব্যবসায়ের প্রবর্তনের ফলে নারীরা আরও বেশি পরিমাণে সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হচ্ছে। তাই নতুন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আমার পরামর্শ, নিজে স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকতে হবে। নিজে স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থকতাটাই আলাদা। আমার প্রতিটি নারীর জন্য একটাই কথা থাকবে, আমরা নারী হয়েছি বলে কি হয়েছে! আমরাও মানুষ। যাদের লক্ষ্য অটুট থাকে এবং যদি পরিশ্রম করতে পারে, আমার মনে হয় নারী বা পুরুষ নয়, প্রতিটি মানুষই সফল হবে।
আরপি/ এআর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: