রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০

একটা নিলে একটা ফ্রি


প্রকাশিত:
২৩ নভেম্বর ২০২০ ০১:২৭

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১২:৫৫

অল্পদামে শীতের কাপড় কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা

‘বাইছ্যা লন, দেইখ্যা লন, এক দাম এক রেট, দশ টাকা।’ ‘পঞ্চাশ টাকা, একশ টাকা’। একটা নিলে একটা ফ্রি।এক দাম ৫‘শ টাকা। এভাবেই নারী, পুরুষ, শিশু, তরুণ-তরুণীদের হাক-ডাক দিচ্ছেন রাজশাহীর ফুটপাতের শীতের পোষাক বিক্রেতারা।

শীতের আভাস ইতোমধ্যেই গায়ে টের পেতে শুরু করেছে। দিন শেষে সন্ধ্যা নামতেই কমছে তাপমাত্রা। তবে এখনো জেঁকে বসেনি শীত। শীত মোকাবিলায় ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে নানান প্রস্তুতি। বাজারে আসতে শুরু করেছে শীতের কাপড়। জমজমাট হয়ে উঠেছে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন স্থানের শীতবস্ত্রের বাজার।

নগরের নিউ মার্কেট, সাহেববাজার, গনকপাড়া, হকাস মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার বিপণিবিতানগুলোতে শীতের পোশাক কিনতে ভিড় করছেন হাজার হাজার ক্রেতা।

ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ সবাই নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য শীতের কিনছেন জামা-কাপড়। তাই সাপ্তাহিক ছুটির দিনেগুলোতে বেশি জমে উঠেছে ফুটপাতগুলো। জমে উঠেছে শীতের গরম কাপড়ের কেনাবেচা। এখানে পছন্দ মতো কম দামে ভালো দেশি-বিদেশি গরম কাপড় পাওয়া যায়।

এই মার্কেটগুলোতে মূলত সকল বয়সী মানুষের জন্য দেশি-বিদেশি ব্লেজার, সোয়েটার, মাফলার, হাত ও পা মোজা, মাথার টুপি, কানের ব্যান্ড জ্যাকেট, কোট, কম্বলসহ সকল প্রকারের গরম কাপড় সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। বেছে বেছে নিজেদের পছন্দ মতো কাপড় কেনার জন্য শীত মৌসুমে হাজার হাজার মানুষ এখানে গরম কাপড় কেনার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আসেন। গরম কাপড় কেনার জন্য সমাজের সকল প্রকারের মানুষ প্রতিদিন ভিড় করেন।

তবে বিগত মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে করোনাসহ শীত দেরিতে আসার কারণে এবছর কেনাকাটা তেমন ভালো হবেনা বলে মনে করছেন এই ব্যবসায়ীরা।

ক্রেতাদের অভিযোগ শীতের কাপড়ের দাম বেড়ে গেছে। আর বিক্রেতারা বলছেন, করোনাসহ নানান জটিলতার কারণে কাপড়-চোপড়ের দাম বেশি। এছাড়াও কাপড়ের ঘাটতি হওয়ায় বেশি দামে কিনে বেচাকেনা করতে হচ্ছে একটু বেশি দামে।

বিক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় প্রতিটি বেল্টে তথা কার্টুনে তাদের গুণতে হচ্ছে ডাবল টাকা। এই অতিরিক্ত টাকা দেয়ার পরও তাদের কিনতে হচ্ছে নিম্নমানের বেল্ট। যা বিক্রি করে মূলধন আর যাতায়াতের খরচই উঠানো কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। তারপরও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন অল্প টাকায় শীতের কাপড় কিনতে ভিড় করছেন বাজারে।

নগরীর গণকপাড়া এলাকার রোদেলা ফ্যাশনের দোকানদার আল আমিন বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যে আমাদের ব্যবসা অনেক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। নিয়ে আসতে খরচ বেশি লাগছে। তাই এবার সকল কাপড়ের দাম বেশি দিয়ে আমাদের বিক্রি করতে হবে। তাছাড়া আমাদের ব্যাপক ক্ষতি মধ্যে পড়তে হবে। গত বছরের তুলনায় প্রতিটি বেল্টে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। কেনা খরচও বেশি।’

তিনি আরো বলেন, ‘রাজশাহী শহর চলে শিক্ষার্থীদের দিয়ে। বর্তমানে কেউ নাই। দুই একজন থাকলেও করোনার ভয়ে কেউ আসেনা । বেচাকেনা আগের মত নাই। খুব খারাপ অবস্থা চলছে।’

সাহেব বাজারের আরডিএ মার্কেটের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেচাকেনা হচ্ছে। তবে আগের মত না। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার মত বিক্রি হয়। কিছুদিন পরে আর একটু শীত বাড়লে কেনাবেচা আরও বাড়বে। শহরে লোকজন থাকলেও কেনাকাটা করছেন না কেউ। দাম বেশি। মানুষ দেখছে, দাম শুনছে, আর চলে যাচ্ছে। গত বছরের এই সময়ে শীতের পোশাক বিক্রি জমজমাট থাকলেও এবার মন্দা। এছাড়া করোনার কারণে মানুষ আর্থিক সংকটে থাকায় এখনও গরম পোশাক কিনতে মার্কেটে আসছেন না।

ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শীতের কাপড়ের বেচাকেনা পুরোদমে শুরু না হলেও প্রতিদিন কিছু কিছু বিক্রি হচ্ছে। তুলনামূলক শিশুদের কাপড় বিক্রি হচ্ছে বেশি। তবে সোয়েটার, মাফলার, হাত-পা মোজা, মাথার টুপি, ফুলহাতা গেঞ্জি, কম্বলের দোকানের ভিড় চোখে পড়ার মতো। আগামী ১০-১৫ দিন পর থেকে পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে বলে জানান তারা।

গতবছর ফুটপাত থেকে একটি সোয়েটার ১০০-১৫০ পাওয়া যেত টাকায়। একই মানের সোয়েটার এবাার বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। আমরা যে মাল বিক্রি করি তা শো-রুম বা দোকানের চেয়ে তুলনামূলকভাবে খুব একটা খারাপ না। বেছে নিতে পারলে ভালো মাল পাওয়া যায়।

নিউমার্কেট, আরডিএ ও ফুটপাতগুলোতে শীতের পোশাকের মোটামটি বিক্রি দেখা যায়। এবারও অধিকাংশ দোকানে গরম পোশাক বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে গরম পোশাকের দোকানগুলোতে শীতের আমেজ এখনও পড়েনি। তাই সেভাবে তাদের ব্যবসাও জমতে শুরু করেনি।

আর ক’দিন গেলে শীত একটু বাড়বে। তখন বেঁচাকেনাও বাড়বে। প্রতিবছরের মতো এবারও ব্যবসা ভালো হবে বলে আশাবাদ ব্যবসায়ীদের।

 

আরপি/এমএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top