রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১

এবার সিন্ডিকেটের কবলে রাজশাহীর আলুর বাজার


প্রকাশিত:
২০ অক্টোবর ২০২০ ০০:৩৩

আপডেট:
২০ অক্টোবর ২০২০ ০০:৩৮

ফাইল ছবি

পাইকারি বাজারে আলুর দাম কেজিপ্রতি ৩০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। কিন্তু তা তোয়াক্কা না করেই সিন্ডিকেটের ইশারায় পণ্যটির দাম উঠানামা করছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা বলা হলেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না রাজশাহীতে।

খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা নানা অজুহাতে খুচরায় এখনও ৪০-৪৫ টাকা কেজিদরে আলু বিক্রি করছেন। এদিকে সরকারের নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।

করোনা ও বন্যা উপলক্ষ্যে দেশজুড়ে অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সিন্ডিকেট মহল। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাজশাহীতেও সক্রিয় সিন্ডিকেট দলের সদস্যরা।

সূত্রে জানা গেছে, কোল্ড স্টোরের মালিকরা আলু বাজারে ছাড়ছেন না। যেসব পাইকাররা বাজারে আলু বিক্রি করছেন তারা গোপন রাখছেন আলু বিক্রির রশিদ। খুচরা পাইকারদের মাধ্যমে বেশি মুনাফা লুটছেন নেপথ্যে থাকা গোপন সিন্ডিকেট।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, রাজশাহীতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে আলুর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিকটন। জনপ্রতি ৬৪.৮৪ শতাংশ অনুযায়ী জেলায় আলুর চাহিদা ৭২ থেকে ৭৩ হাজার মেট্রিকটন। লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১৩ শতাংশ আলু বেশি উৎপাদন হলেও রাজশাহীর বাজারে কমছে না আলুর দাম ।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে এক কোটি টন আলু উৎপাদনের বিপরীতে বার্ষিক চাহিদা ৭০ লাখ টন। সেই হিসাবে ৩০ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত থাকলেও দাম বাড়ার জন্য সংকটের দোহাই দিচ্ছেন আড়তদাররা।

খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি কিনতেই আলুর দাম বেশি। বেশি দামে আলু কেনার কারণে কম দামে আলু বিক্রি করছেন না। সরকারের নির্ধারণ করা দামে আলু বিক্রি করলে তাদের লোকসানে পড়তে হবে। কম দামের আলু বাজারে এলে তখন তারা কম দামে আলু বিক্রি করবে।


পাইকারদের দাবি, তারা যে দামে কিনেন তার থেকে ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি করে দেন। দাম নিয়ন্ত্রণে বাজার তদারকি বাড়াতে হবে। অপরদিকে কোল্ড স্টোরেজে রাখা আলু বাজারে আনার ব্যবস্থাও করতে হবে। তাহলে আলুর দাম কমতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

রাজশাহী ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মাসুম আলী বলেন, আমরা বাজার মনিটর করছি। তবে সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করা বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে মিটিং হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে আলুর দাম কমে যাবে। কোল্ড স্টোর থেকে আলু বের হচ্ছে না। এক সপ্তাহের মধ্যেই বাজারে আলুর সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। যারা আলুর দাম বৃদ্ধির চেষ্টা করবে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

সরকারের নির্ধারিত দাম না মানার বিষয়ে রাজশাহীর সাহেব বাজারের বিক্রেতা সাইফুল জানান, আমার প্রতিকেজি আলু কেনা আছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকায়। এর মধ্যে অন্যান্য আরও খরচ আছে। তাহলে আমি কীভাবে ৩০ টাকায় আলু বিক্রি করবো। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেই তো হয়ে যায় না, কিনতেই যদি বেশি লাগে লোকসান দিয়ে বেঁচব কিভাবে?

গতকাল ১৮ অক্টোবর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে তিন স্তরে যে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, সেটা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। তারা কোল্ডস্টোরেজ পর্যায়ে ২৩ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ২৫ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে।’

সিন্ডিকেটের কবলে রাজশাহীর আলুর বাজার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারি উপ পরিচালক (শস্য) উম্মে ছালমা বলেন, রাজশাহীতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে আলুর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিকটন। লক্ষ্যমাত্রার অনেক বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরেও বেশি উৎপাদন হবে বলে আশা করছি।

এর আগে দাম আলুর দাম বাড়ার কারল হিসেবে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শামছুল হক বলেন, বন্যায় ত্রাণ হিসেবে আলু দেওয়া হয়েছে। বন্যার পানিতে বিভিন্ন সবজি ডুবে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মানুষ সবজি হিসেবে আলু বেশি খেয়েছে। পানি নেমে গেলে দাম কমে যাবে। আলুর দাম আর বাড়বে না।

 

আরপি/এসকে



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top