রাজশাহী মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৪, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১

মেস মালিকদের কাছে জিম্মি ছাত্র ছাত্রীরা

আবাসন সংকটে শিক্ষানগরীর শিক্ষার্থীরা


প্রকাশিত:
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৯:২৫

আপডেট:
৩০ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:১২

ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষা নগরী হিসাবে পরিচিত রাজশাহীর বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই প্রয়োজনীয় আবাসন ব্যবস্থা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবাসন সংকটের কারণে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফায়দা লুটছে নগরীর মেস মালিকরা। বলা যায় মেস মালিকদের কাছে জিম্মি হয়েই লেখাপড়া করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

মুলত রাজশাহীতে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আবাসিক ব্যবস্থা না থাকার কারণেই এ দুরাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে উচ্চ শিক্ষা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটের মধ্যেই শিক্ষা জীবন শেষ করতে হচ্ছে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নামে মাত্র আবাসিক সুবিধা রয়েছে। আর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো আবাসিক সুবিধা নেই বললেই চলে। নিয়ম অনুযায়ী যে পরিমাণ আবাসিক সুবিধা থাকার কথা সরকারি বা বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তা নেই। আর আবাসিক সংকটের সুযোগ নিয়ে নগরীতে গড়ে ওঠা মেস বা ছাত্রাবাস মালিকরা রমরমা ব্যবসা করছেন। শিক্ষার্থীদের ভাড়াসহ অন্যান্য খরচাদি মেটাতে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ।

জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে শুরু করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রাজশাহী কলেজ, নিউ গভ: ডিগ্রি কলেজ, রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান সরকারি কলেজ ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা। এছাড়াও বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ বেঙ্গল বিশ্ববিদ্যালয়েও সংকট রয়েছে আবাসন ব্যবস্থার। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩ লাখের উপর। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে আসা। বিভিন্নস্থান থেকে উচ্চ শিক্ষা নিতে আসা প্রায় ছাত্র-ছাত্রীদের থাকতে হচ্ছে বেসরকারি ভাবে গড়ে ওঠা মেস ও ভাড়া বাসায়।

ঐতিহ্যবাহি রাজশাহী কলেজে ছাত্রদের জন্য রয়েছে মাত্র ২টি হল ও মেয়েদের জন্য রয়েছে ২টি। প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র ১৬শ জনের। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৩৭ হাজার। এরমধ্যে আবাসন রয়েছে মাত্র ৯ হাজার শিক্ষার্থীর। এরমধ্যে মেয়েদের জন্য রয়েছে ৬ টি হল ও ছেলেদের জন্য হল রয়েছে ১১ টি হল। আবাসন সংকটের সুযোগে রাজশাহী বিশ্বাবিদ্যালয়ের চারপশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছাত্রবাস ও ছাত্রীনিবাস। হলে জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে মেসে থাকতে হচ্ছে ছাত্র ছাত্রীদের।

এদিকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আবাসন সংকটকে পুঁিজ করে প্রতিবছরই বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছেন মালিকরা। ফলে বিপাকে পড়েছেন দুরদুরান্ত থেকে আসা মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে মেস ও বাড়ি মালিকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার।

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অনার্স ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সারমিন সুলতানা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো আবাসন সুবিধা না থাকায় তাকে মেসে থাকতে হচ্ছে। এ জন্য শুধু ভাড়াই গুনতে হচ্ছে মাসে ৩ হাজার টাকা। সাথে কয়েক মাস পরপর ভাড়া বাড়ানোর হুমকিত থাকেই। এছাড়াও মেসে ইচ্ছা মত কোন কিছু করা যায় না। মেসে কোন গেস্ট আসা যাবে না। আসলে রাত প্রতি ১০০ টাকা দিতে হবে। রাজশাহী কলেজের মেনেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী রেবেকা বালা জানান, কলেজে যে পরিমাণ ছাত্রীর আবাসন সুবিধা রয়েছে তাতে গাদাগাদি করে মোট শিক্ষার্থীর ৫ শতাংশ বেড সেয়ার করে হোস্টেলে থাকতে হয়। আবার অনেকে থাকেন মেঝেতে।

রাজশাহী নিউ গভ: ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমন জানান, মেসে থাকার কারণে প্রতিমাসে মেস ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবার। সচ্ছল পরিবারের ছেলেরা যোগান দিতে পারলেও দরিদ্র পরিবারের ছেলেদের পক্ষে কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নগরীর উপশহর এলাকায় মেসে থাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ ক’জন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে তারা জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্রমাগত শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। সে তুলনায় আবাসন ব্যবস্থা বাড়াচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি মেস ভাড়া দিয়ে থাকতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়ছে তাদের পরিবার। ফলে মানসম্পন্ন শিক্ষা অর্জনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তারা জানায়, ক্যাম্পাসে আরও অতন্ত ৬-৭টি হোস্টেল নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সে দিকে নজর দিচ্ছেন না। কবে নাগাদ তাদের এ সমস্যার সমাধান হবে তারা কেউই বলতে পারে না।

শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট প্রসঙ্গে রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. হবিবুর রহমান জানান, রাজশাহী নগরী হচ্ছে শিক্ষা নগরী। এখানে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণ আবাসন ব্যবস্থা থাকা উচিৎ। কিন্তু সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে তা হয়ে উঠে না। তার পরও প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন এবং উদ্যোগও নিয়েছেন প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণ আবাসন তৈরির জন্য। তিনি বলেন, বর্তমানে রাজশাহী কলেজে প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ করছে। তার মধ্যে ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। তবে রাজশাহী কলেজে আরো নতুন একটি হল তৈরি করা হচ্ছে। যা চালু হলে সেখানে শিক্ষার্থীরা থাকতে পারবেন বলে জানান তিনি।

রাজশাহী নিউ গভ: ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এসএম জার্জিস কাদির জানান, কলেজে অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কারো জন্য কোন সিট নেই। এখানে ৩টি হোস্টেল রয়েছে ছেলেদের দুটি মেয়েদের একটি। ছেলেদের দুটি হোস্টেল মিলে ৩০০ শিক্ষার্থী থাকেন এবং মেয়েদের হোস্টেলে ২০০ জন থাকেন। এছাড়া বাকি সকল শিক্ষার্থীই বাইরে মেসে থাকেন বলে জানান তিনি।

আরপি/ এআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top