ফুল চাষ ছেড়ে আউষ চাষে ঝুঁকছেন ফুলচাষীরা
বাংলাদেশের যশোর জেলার ঝিকরগাছার একটি এলাকা ফুল চাষের কারণে বিখ্যাত। গদখালী নামের ওই গ্রাম ও আশপাশের হাজার হাজার একর জমিতে বছর জুড়ে উৎপাদন হয় দেশী বিদেশী নানা জাতের ফুল। যার বার্ষিক বাজার মূল্য প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এই গ্রামের ফুল সারাদেশ তো বটেই, যায় বিদেশেও। কিন্তু করোনার ভয়াল থাবায় থমকে আছে এই কোটি টাকা মূল্যের শিল্প। ফুল বাগান ধ্বংশ করে আউশ ধান চাষ করছেন ফুলচাষীরা।
ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি-পানিসারার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষ ফুল চাষের সাথে জড়িত। করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ প্রণোদনা হিসেবে সাড়ে ৫ হাজার কৃষককে দেওয়া হয়েছে আউষ ধানের বীজ। স্বল্পমেয়াদী গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদা- ফুলের বাগান ধ্বংশ করে অনেকেই সরকারী প্রণোদনার এ ধানের বীজ সংগ্রহ করছেন। করোনায় নাজেহাল কৃষকের অনেকেই আউষ ধানের চাষ করতে এগিয়ে আসছেন বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
দেশে লকডাউনের কারণে ফুল বাজারজাতকরণ বন্ধ হওয়ায় ফুল খাচ্ছে গরু- ছাগলে। করোনায় দিশেহারা দেশের সবচেয়ে বেশি ফুল উৎপাদনকারী এ অঞ্চলের ফুলচাষিরা। ১৭ মার্চ, ২৬ মার্চ ও পহেলা বৈশাখে বিপুলপরিমাণ ফুল বেচাকেনা হয় এ অঞ্চলে। করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারণে এবারের পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে কোনো ফুল কেনা-বেচা হয়নি। এছাড়াও পর পর কয়েকটি ফুল বিক্রির মৌসুমে ফুল বিক্রি করতে পারেননি তারা।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয় এখানে উৎপাদিত ফুল। করোনার প্রভাবে নেই কোনো বেচাকেনা। সে কারণে ক্ষেতের ফুল ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে। অনেকে ফুল কাটলেও বিক্রি করতে না পেরে গরু-ছাগল দিয়ে খাইয়ে দিচ্ছেন এখানকার কৃষকরা।
গদখালি ফ্লাওয়ার সোসাইটি সূত্র মতে, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি-পানিসারার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কৃষক ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করছেন। ফুল চাষে আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদনও হয়েছিল। দেশের সবচেয়ে বড় ফুলের বাজার গদখালি বাজারে প্রায় ১২ রকমের ফুল বেচাকেনা হয়।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইট দাবি করেছে, করোনার কারণে যশোর জেলার ফুলচাষি ও বিক্রেতা পর্যায়ে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকার। এবং সারা দেশে এ ক্ষতি ২৫০ কোটি টাকার। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আশা করছে, ফুলচাষিরা ঘুরে দাঁড়াতে সরকারি অনুদান সহায়তা পাবেন।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আকতারুজ্জামান বলেন,‘করোনায় ফুলচাষীদের অবস্থা খুবই খারাপ। দীর্ঘমেয়াদী বাগান, গোলাপ এবং জারবেরা চাষিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া যারা স্বল্পমেয়াদী মৌসুমি ফুল চাষ করেন যেমন, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদা- তাদেরকে আমরা বলেছি আউশ ধান চাষ করতে। তাহলে তাদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে যাবে।’
তিনি আরোও বলেন, ‘আমাদের এখানকার অনেক ফুলচাষী চলতি মওসুমের বোরো ধান কাটবেন কারণ তাদের সংসার চালানোই কষ্টকর হয়ে গেছে। একইসাথে তারা অর্থসংগ্রহ করতে পারবে এবং ধান কাটা শ্রমিক সংকট দূর হবে।’
আরপি/এমএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: