রাজশাহী মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১

‘যদি দ্যাশ বন্দো হয়, তাইলে না খ্যায়্যা মইর‌্যা যাব বাপ।’


প্রকাশিত:
২৪ মার্চ ২০২০ ১৬:১১

আপডেট:
৩০ মার্চ ২০২০ ০৪:৫১

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঘটছে। এতে আতঙ্কিত মানুষ। করোনা বিস্তার প্রতিরোধে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। সংক্রমণরোধে আগামী ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এ সময়ে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না এমন ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

সোমবার সচিবালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান। এই ঘোষণাকে আগামীতে সারাদেশ লক ডাউন করার পূর্বাভাস বলছেন জনসাধারণ। ফলে আসন্ন লক ডাউন নিয়ে বিভিন্ন সমীকরণ কষছেন তারা। লক ডাউন হলে কি ধরণের সমস্যায় পড়তে হবে এ নিয়ে চলছে আলোচনা, নানা দুশ্চিন্তায় মানুষ।

দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের চিন্তার অন্ত নেই। রাজশাহীর পবা উপজেলা থেকে শহরে আসা দিনমজুর মো. রেজাউল বলেন, ‘যদি দ্যাশ বন্দো হয়, তাইলে তো আমরা না খ্যায়্যা মইর‌্যা যাব বাপ।’ রেজাউলের মত নিম্নবিত্তরা ছাড়াও উচ্চ নিম্ববিত্ত, মধ্যবিত্তদের কপালেও ফুটে উঠেছে চিন্তার ভাঁজ। লক ডাউন হলে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কায় আঁতকে উঠছেন তারা।

আরোও পড়ুন: রাজশাহীতে এনজিওগুলোকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কিস্তি স্থগিতের নির্দেশ

সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী ২৬ মার্চের সরকারি ছুটি এবং ২৭ থেকে ২৮ মার্চের সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ৩ ও ৪ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন এ বন্ধের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল, জরুরি সেবার জন্য এ ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে না।

কিন্তু এ ঘোষণাতে নিশ্চিন্ত নন সাধারণ মানুষ। রাজশাহীর নগরীর উপশহর দড়িখরবোনা এলাকার শামীম রেজা বলেন, সরকার যতই বলুক কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরী সেবাদান বন্ধের আওতায় পড়বে না। কিন্তু সেটা কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন সেটা বড় চিন্তা। একটি স্বার্থান্বেষী মহল জাতির এই দুর্যোগের সময়ের সুযোগ নিতে তৎপর থাকবে। বিত্তশালীদের হয়তো খুব বেশি ভূগতে হবে না। কিন্তু এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে পারেন নিম্ন আয়ের মানুষরা।

রাজশাহীর বিভিন্ন দপ্তর করোনা প্রতিরোধে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। ইতোমধ্যে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, মহানগর আওয়ামী লীগ, রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড, রাজশাহী কলেজ, নিউ গভঃ ডিগ্রী কলেজসহ বিভিন্ন মহল করোনা প্রতিরোধে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, মাস্ক ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপকরণ বিতরণ করেছে।

এছাড়াও সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনায় সকল এনজিও ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কিস্তি আদায় স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক। এছাড়াও মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের পশুর হাটসহ অন্যান্য হাটসমূহ বন্ধ রাখার অনুরোধও জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে, বিভিন্ন অফিস-আদালতে প্রয়োজনীয় কার্যাবলী অনলাইনে সম্পাদন করতে হবে জানিয়ে সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি অফিসের মধ্যে যারা প্রয়োজন মনে করবেন তারা অফিস খোলা রাখবেন।’

আরোও পড়ুন: করোনায় মৃত ব্যক্তির জানাজা-দাফন যেভাবে করতে নির্দেশ

প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারি। এতে সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। এছাড়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন প্রায় ৯৯ হাজার মানুষ।

বাংলাদেশে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে গত ৮ মার্চ। এরপর দিন দিন এ ভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে। সর্বশেষ হিসাবে দেশে এখন পর্যন্ত ৩৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন তিনজন। সেলফ ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন প্রায় ১৮ হাজার মানুষ। তাদের অধিকাংশই বিদেশফেরত।

করোনার বিস্তাররোধে এরই মধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে সভা-সমাবেশ ও গণজমায়েতের ওপর। চারটি দেশ ও অঞ্চল ছাড়া সব দেশ থেকেই যাত্রী আসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দেশের সব বিপণিবিতান। এছাড়া মুলতবি করা হয়েছে জামিন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি ছাড়া নিম্ন আদালতের বিচারিক কাজ। এমনকি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলাকে লকডাউনও ঘোষণা করা হয়েছে।

 

 

আরপি/এমএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top