রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

পেঁয়াজের ফলন ভালো হলেও দামে হতাশ চাষিরা


প্রকাশিত:
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১০:১৭

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:১৭

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় চলতি মৌসুমে কন্দ জাতের পেঁয়াজের (আগাম জাতের পেঁয়াজ) বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ চাষিরা। তবুও হাটে হাটে বেড়েছে পেঁয়াজের সরবরাহও। দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে বাগমারার পেঁয়াজ। কৃষকদের বলছেন, এভাবে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করলে তাদের লোকসান গুনতে হবে। ক্রয় বিক্রয় করে কোন মতে উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন। এর ফলে ভবিষ্যতে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ কমবে তাদের।

জেলার পেঁয়াজ উৎপাদনকারী উপজেলা হিসেবে খ্যাত বাগমারা। এ উপজেলার তাহেরপুরী পেঁয়াজের সমাদর বেশ আগে থেকেই। চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের ফলনও ভাল। তবে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা।

এদিকে ব্যাবসায়ীরাও উপজেলার তাহেরপুর, আলোকনগর, ভবানীগঞ্জ, শীকদারীসহ বিভিন্ন হাট থেকে পেঁয়াজ ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছেন এমনটি চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। তবে বেশি লাভবান হতে না পারলেও ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য পেঁয়াজ ক্রয় করছেন ব্যবসায়ীরা।

তারা জানান, পেঁয়াজ ক্রয় করে তা প্যাকেটিং করার জন্য বস্তার দাম, লেবার খরচ, আড়তদারী খরচ, পরিবহন খরচসহ যে পরিমাণ টাকা গুনতে হয় সে অনুযায়ী লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না। উৎপাদনও ভালো হয়েছে। তবে বাজারে দাম কম থাকায় তাদের লোকসান গুনতে হবে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ মৌসুমে বাগমারার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় ১ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে কন্দ জাতের পেয়াজের চাষাবাদ করা হয়েছে।

আলোকনগর গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম জানান, পেঁয়াজ চাষে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে বিক্রির পর তেমন লাভ হচ্ছে না। সেচ খরচ, সার ও শ্রমিকের খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভ একেবারেই কম।

আরেক কৃষক আব্দুল মান্নান জানান, এ জেলার পেঁয়াজের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যান। তবে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায় না বলে কৃষকরা মাঠ থেকে পেঁয়াজ তুলেই স্থানীয় বাজারে দ্রুত বিক্রি করে দিচ্ছেন।

আবুল হোসেন নামের আরেক কৃষক বলেন, গত বছর পেঁয়াজের দাম ভালো ছিল। এ আশায় এবারও পেঁয়াজ লাগিয়েছিলাম। হাটে পেঁয়াজ এনে এখন হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজারদর কমিয়ে পেঁয়াজ কিনে ঢাকায় নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করছেন।

হাটে আসা তাহেরপুরের ব্যবসায়ী ও আড়তদার আব্দুল মান্নান জানান, আলোকনগর হাট থেকে পেঁয়াজ ক্রয় করে ট্রাকযোগে রাজধানী ঢাকার কাওরান বাজার, যাত্রাবাড়ী, রায়ের বাজার, গাবতলীসহ বিভিন্ন আড়ত, নারায়নগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, সৈয়দপুর, ফুলবাড়িসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পেঁয়াজ সরবরাহ করা হচ্ছে।

আরেক ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হোসেন বলেন, বেশ কয়েকজন বাগমারার বিভিন্ন হাট-বাজারে বর্তমানে ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমিতে বীজ, শ্রমিক, ওষুধ ও সার খরচ বাবদ যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে, খেতে উৎপাদন ভাল হলেও বাজার দর কম হওয়ায় লাভ কম।

তাহেরপুরের কাঁচামাল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, ব্যাবসা চলমান রাখার জন্য পেঁয়াজ কিনে কম লাভেই পাঠানো হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহেই তিনি ট্রাকযোগে ময়মনসিংহে পেঁয়াজ সরবরাহ করছেন। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলাসহ রাজধানীর বিভিন্ন আড়তে পেঁয়াজ সরবরাহ করছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুর রাজ্জাক জানান, বাগমারা অঞ্চলে এবার পেঁয়াজের উৎপাদন ভাল হয়েছে। উৎপাদন বেশি হবার জন্য বাজার দর হয়তো ওঠানামা করতে পারে। এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে ফলন ভালো হওয়ায় দাম কম হলেও কৃষক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন না বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

 

আরপি/ এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top