রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

এক গাছেই মিলছে আলু-টমেটো


প্রকাশিত:
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১০:৪৫

আপডেট:
২৮ মার্চ ২০২৪ ১৬:১২

ছবি: সংগৃহীত

একই গাছে মাটির নিচে ফলবে গোল আলু আর মাটির ওপরে লতানো গাছের ডালে ঝুলবে লাল সবুজ টমেটো। বাংলাদেশে জোড়কলম বা গ্রাফটিং পদ্ধতি অনুসরণ করে এমন আবাদে সফলতা এসেছে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করে রীতিমত এলাকায় আলোঢ়ন সৃষ্টি করেছে রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুর গ্রামের কৃষক মনির হোসেন।

কৃষক মনিরের বাড়ি রাজশাহী শহরে হলেও গোদাগাড়ীর কৃষক হিসাবে তাকে সবাই চিনে। গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুর গ্রামে তার কৃষি খামার।

জানা যায়, তিনি খামারে নতুন নতুন পদ্ধতির ব্যাবহার ও নতুন নতুন ফসল চাষবাদ করে। তার চাষবাদ দেখে নতুন নতুন চাষবাদে আগ্রহী হয়ে উঠে এ অঞ্চলের কৃষকরা। এবার সে খামারে জোড় কলম পদ্ধতি ব্যাবহার করে ৪০ টি আলু গাছে তেরী করেছে টমেটোর গাছ। আলুর গাছে টমেটোর গাছ তৈরী করে রিতীমতো আলোঢ়ন সৃষ্টি করেছে কৃষক মনির।

দুরদুরান্ত থেকে তার এই জোড় কলম পদ্ধতির টমেটোর গাছ দেখতে আসছে কৃষকরা। শুধু তাই নয়; বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা আসছে তার কৃষি খামারে আলু গাছে তৈরি করা টমেটোর গাছ দেখতে ও শিখতে।

কৃষক মনির হোসেনের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, টমেটো এবং আলু উভয়ই একই গোত্রের। দীর্ঘ রাত্রির উদ্ভিদ। এ কারনে এদের মধ্যে জোড় কলম পদ্ধতি বেশ কার্যকর। উভয় গাছেই থাকে আল্কালয়েড নামক একপ্রকার উপাদান যা তাদের পোকামাকড় থেকে রক্ষা করে। জোড় কলমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটা সময় এবং স্থান সাশ্রয়ী । একই গাছে আলু এবং টমেটো উৎপাদনের ফলে অর্থনৈতিকভাবে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব।

মনির হোসেন বলেন, টিভিতে আলু গাছে জোড় কলম পদ্ধতিতে টমেটোর গাছ তৈরি করা দেখে পরীক্ষা মুলকভাবে ৪০ টি আলু গাছে জোড়কলম পদ্ধতিতে টমেটো গাছ তৈরি করা হয়েছে। এতে সফলতাও দেখা গেছে।

তিনি বলেন, টমেটোর জন্য বাংলাদেশের কাছে বিখ্যাত গোদাগাড়ী উপজেলা। দেশের সিংগভাগ টমেটো উৎপাদন হয় এ উপজেলায়। কিন্তু ডিসেম্বর মাসে কৃষকেরা টমেটোর তেমন দাম পায় না। তাই এ উপজেলার কৃষকরা টমেটোর ক্ষেত থেকে ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত টমেটো সংগ্রহ করে। তারপর টমেটোর গাছ কেটে বোরো ধানের আবাদ করে। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে এ উপজেলায় আর টমেটো পাওয়া যায় না। এপ্রিল মে মাসে টমেটোর আবার বাজার মূল্য বৃদ্ধি পাই। তাই এপ্রিল মে মাসে টমেটোর বাজার ধরার জন্য অল্প পরিসারে হলেও এ পদ্ধতিকে কাজে লাগানো যায়।

তিনি আরও বলেন, আলু গাছ ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি লম্বা হলেই আলু গাছে টমেটোর জোড় কলম ভাল হচ্ছে। আলু গাছ বেশি বড় হলে জোড় কলম ভালো হচ্ছে না। জোড় কলম করার ৪ থেকে ৫ দিনের মাথায় টমেটোর কান্ড থেকে কুশি ছাড়তে শুরু করে। পতা সজিব ও সতেজ হলে পলিথিনের ব্যাগ খুলে ফেলতে হয়। পলেথিন ব্যাগ খুলতে সময় লাগে ৭ থেকে ১০ দিন। জোড় কলম করার ১৫ দিনের মাথায় টমেটোর ফুল আসতে শুরু করে। ১ থেকে দেড় মাসের মাথায় ফল টমেটোর গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা যায়।

একই গেছে দুই রকম সবজি হবে মন্তব্য কৃষক মনির করে বলেন, এ পদ্ধতি ব্যাবহার করে মাটির নিচে আলু এবং মাটির উপরে টমেটো। একই গাছ থেকে দুই রকম সবজি পাওয়া যাবে। এমনকি ৩ থেকে সাড়ে ৩ মাস টমেটো পাওয়া যাবে। কারন আলু লাগানোর পর ক্ষেত থেকে আলু তুলতে সময় লাগে ৩ থেকে সাড়ে ৩ মাস। এবার পরীক্ষা মুলক ৪০ টি আলু গাছে টমেটোর জোড় কলম করেছি। আর বৃদ্ধি করার ইচ্ছে নেই। এর আগে তীত বেগুন গাছে টমেটোর জোড় কলম করে সফল হয়েছি। এবার মার্চ মাসে প্রায় ৪০০টি তীত বেগুন গাছের সাথে টমেটোর জোড় কলম পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে টমেটোর আবাদ করবো। এতে করে অসময়ে টমেটো পাওয়া যাবে এবং দামও ভালো পাবো।

উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের তথ্য মতে, আলু এবং টমেটো একই গাছে উৎপাদন করার ধারনা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৭ সালে ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্টে। যুক্তরাজ্যের গবেষকরা সম্প্রতি এই ধারণার সফল বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন। তারা একই গাছে উপরে টমেটো আর নিচে আলু ফলাতে সক্ষম হয়েছেন যাতে আলু ও টমেটোর স্বাদ অক্ষুন্ন থাকে। এই কাজের জন্য তারা জিন প্রকৌশল নয়, গ্রাফটিং বা জোড় কলমের আশ্রয় নিয়েছেন। টমেটোর সঙ্গে আলুর জোড় কলম পদ্ধতিতে আলু ও টমেটো একই গাছে উৎপাদন করা সম্ভব।

তারা বলেন, একটি প্রাপ্তবয়স্ক আলু গাছকে (যাকে স্টক বলা হয়) মাটি থেকে প্রায় ১ ইঞ্চি উপরে ভি শেপ করে কেটে নিয়ে উপরের অংশটি ফেলে দিতে হবে। অন্যদিকে একটি টমেটো গাছকে (যাকে সায়ান বলা হয়) মাটি থেকে ৬ থেকে ৭ ইঞ্চি কেটে আগাসহ উপরের অংশটি কেটে নিতে হবে। এ কাজের জন্য আলু গাছের সমান ব্যাস বিশিষ্ট টমেটো গাছ নিলে গ্রাফটিং বা জোড় কলম করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হয়। তারপর টমেটো গাছের কাটা অংশটি আলু গাছের কাটা অংশটির উপর প্রতিস্থাপন কড়তে হবে। একে বলা হয় গ্রাফটিং বা জোড় কলম। গ্রাফটিং করা অংশটি গ্রাফটিং রেপিং টেপ দিয়ে ভালোভাবে পেঁচিয়ে দিতে হবে। প্রতিস্থাপিত অংশ থেকে নতুন পাতা গজানোর আগপর্যন্ত রেপিং টেপ খোলা যাবেনা।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহম্মেদ বলেন, আলু গাছে টমেটোর জোড় কলম করার মতো বিষয় জানতে পেরেছি। আমাদের কৃষক মনির এটি করে দেখিয়েছেন। এখনও এটি কমার্শিয়াল হয়নি তিনি শুধু একা করেছেন। আমরা বিস্তারিত গবেষণা, যাচাই বাছাই করে তবেই কৃষককে সে বিষয়ে জানাব।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top