রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১

রঙিন মাছ চাষে হেলালের বাজিমাত


প্রকাশিত:
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:২৭

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:৫০

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

ডোবা অথবা পুকুর নয়—কৃত্রিম হাউজের বদ্ধ পানিতে লাফালাফি করছে বাহারি রঙের রঙিন মাছ। রয়েছে লাল, নীল, হলুদ, কমলা, বাদামি, হলুদসহ বর্ণিল মাছের ছড়াছড়ি। গোল্ড ফিশ, কমেট, কৈ কার্ভ, ওরেন্টা গোল্ড, সিল্কি কই, মলি, গাপটি, অ্যাঞ্জেল প্রভৃতি বর্ণিল মাছে চোখ জুড়াবে যে কারোর।

বিভিন্ন প্রজাতির বাহারি রঙের বিদেশি রঙিন মাছের চাষাবাদে মাসে ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় করছেন রাজশাহীর রেজওয়ানুল হক হেলাল। শখের বশে শুরু করলেও তরুণ এ উদ্যোক্তা পেয়েছেন ব্যাপক সাফল্য। প্রায় পুরো বাংলাদেশ থেকেই সাড়া পাচ্ছেন তিনি। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ মাছের জন্য ফোন দিচ্ছেন তাকে। ছোট্ট পরিসরে অ্যাকুরিয়ামে প্রজেক্ট শুরু করলেও বর্তমানে কয়েকটি চৌবাচ্চাসহ এক বিঘা জমিতে করছেন এ চাষাবাদ। উদ্যোক্তার দাবি, সৌখিন এ মাছ চাষ ব্যাপক লাভজনক।

রাজশাহী নগরীর কয়েরদাঁড়া এলাকার বাসিন্দা রেজওয়ানুল হক হেলাল। শখের বসে গড়ে তুলেছেন ‘জলপরী’ রঙিন মাছের বিশাল প্রকল্প। পেশায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের কম্পিউটার অপারেশন সুপারভাইজার হলেও ব্যতিক্রমী এ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর কয়েরদাঁড়া এলাকায় এক বিঘা জায়গা জুড়ে গড়ে তুলেছেন এই মাছের খামার। উপরে ছাউনি আর নিচে ইট-বালু দিয়ে তৈরি করেছেন অসংখ্য চৌবাচ্চা। প্রতিটি চৌবাচ্চায় রাখা হয়েছে পৃথক পানি ও বিদ্যুতের লাইন। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য আছে কয়েকজন লোকও।

রেজওয়ানুল হক হেলাল বলেন, এক প্রকার শখের বসেই এই মাছ চাষ শুরু করা। একটা সময় দিনের কাজ শেষে অনেক অবসর সময় পেতাম, তখন মনে হতো সময়টা কিভাবে পার করি। মোবাইলে বিভিন্ন প্রতিবেদন দেখি, তখন এই রঙিন মাছ চাষটা ভালো লাগত। ছোটবেলায় শখ ছিল বাসায় অ্যাকুরিয়াম রাখবো, কিন্তু কেনা হয়নি। সেই চিন্তা থেকে প্রথমে কিছু অ্যাকুরিয়াম আর চাড়ি কিনে কাজ শুরু করা।

সেখান থেকে ধীরে ধীরে পরিসর বাড়িয়ে আজকের অবস্থানে আসা। এখন প্রায় পুরো বাংলাদেশ থেকেই সাড়া পাচ্ছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন মাছের জন্য ফোন দিচ্ছেন। প্রতি মাসে গড়ে ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।

শুরুর দিকের স্মৃতিচারণ করে এ তরুণ মৎস্য উদ্যোক্তা বলেন, মোটামুটি পাঁচ বছর আগে থেকে কাজ শুরু করেছি। শুরুর দিকে বিষয়গুলো ছিল অন্যরকম, সফলতার চাইতে ব্যর্থতাই বেশি ছিল। তখন মাছগুলো সেভাবে চিনতামও না, এতো নামও জানতাম না। কিভাবে চাষ করতে হয় সেই পদ্ধতিও জানা ছিল না। অনেক মাছ মারা যেতো, হতাশ হতাম আবার নতুন উদ্যমে শুরু করতাম। এভাবে অনেক টাকা নষ্ট হয়েছিল, যেটাকে আমার জন্য শিক্ষা বলা যায়।

হেলাল বলেন, ইউটিউব দেখে যেটুকু হয় কাজ করতাম। কিন্তু ইউটিউব দেখে তো বেশি কিছু সম্ভব হয়নি, যারা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ আছেন তাদের থেকে অনেক কিছু শিখেছি। নিজে নিজে কিছু চেষ্টা করে সেখান থেকেও কিছু সুফল পেয়েছি। এখন খামারে মোটামুটি ২০-২৫ প্রজাতির মাছ আছে। আস্তে আস্তে আজকে একটা জায়গায় অবস্থান করছি। 

শীতের সময় মাছের জন্য খুব খারাপ সময়। বিভিন্ন ফাঙ্গাস বা ইনফেকশন বেশি দেখা যায়। শুরু আর বর্তমান অবস্থায় অনেক পার্থক্য। তখন হতাশ হয়ে থেমে গেলে হয়তো আর এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। সফলতার মুখ দেখতে হলে ধৈর্য্য ধরতে হয়। ধৈর্য্য ধরতে পারলে একদিন না একদিন সফলতা আসবেই বলে মনে করেন তিনি।

খামারের পরিচর্যাকারী নাজিম শেখ বলেন, এই মাছের খামারের শুরু থেকেই কাজ করছি। মাছ চাষের ক্ষেত্রে পানিটা সব সময় পরিষ্কার রাখতে হয়। এছাড়াও দৈনিক দুই বেলা (সকাল ও বিকাল) মাছকে খাবার দিতে হয়। এদের মধ্যে বেবি মাছকে তিন বেলা পাউডার জাতীয় খাবার দিতে হয়। তবে বড় মাছকে শীতের দিন এক বেলা, গরমের দিন দুই বেলা ভাসমান খাবারটা দিতে হয়। আর যখন দেখা যায় মাছ দেখা যাচ্ছে না, পানি খারাপ হয়ে গেছে তখন পানি বদলাতে হয়।

মাছের দাম প্রসঙ্গে নাজিম শেখ জানান, গ্লু টেট্রা, জেব্রা, এ্যাঞ্জেল, বেলুন মলি, কৈ কার্ভ মাছের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এসে মাছ কিনে নিয়ে যায়। অনেকে খামার করে আবার কেউ কেউ শখের বসে অ্যাকুরিয়ামে রাখে। গ্লু টেট্রা পাইকারি ১১০ টাকা পেয়ার বিক্রি করা হয়। এছাড়াও অ্যাঞ্জেল ৬০ টাকা পেয়ার, কমেট আকারভেদে ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পিস, গাপ্পি প্রতিটি ১০ টাকা, জেব্রা প্রতি পিস ১০ টাকায় বিক্রি হয়। আর কৈ কার্ভ আকার অনুযায়ী প্রতি পিস ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ কিংবা ১০০ টাকাতেও বিক্রি হয়।

পোনা তৈরির ব্যাপারে তিনি বলেন, ডিম নেওয়ার ৭২ ঘণ্টা পরে পোনার রেনু দেখা যায়। এরপর খাবার দিতে হয়, তারপর পোনাগুলো আলাদা করে বড় জায়গায় রাখতে হয়।

এ ব্যাপারে রাজশাহী বিভাগীয় মৎস্য দফতরের উপ-পরিচালক আব্দুর রউফের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, তার এই রঙিন মাছের খামারের বিষয়টি অবগত আছি। এটি অনেক সুন্দর আয়োজন। লোকজন শখের বসে এসব মাছ অ্যাকুরিয়ামে রাখে। যদি ভালোভাবে মার্কেটিং করতে পারে তবে এই খাতের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে সচেতন করাসহ যে কোনো প্রয়োজনে সার্বিক পরামর্শ দেওয়ার আশ্বাস দেন মৎস্য কর্মকর্তা।

 

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top