রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা চরে পেঁয়াজের পাতায় সংসার চলে নারী শ্রমিকদের


প্রকাশিত:
২৮ জানুয়ারী ২০২৩ ০২:০০

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:১৫

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

সম্প্রতি রাজশাহীর পদ্মা চরে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে কৃষি ক্ষেত্রে। বিস্তির্ণ চরে একের পর এক নতুন আবাদে লাভবান হচ্ছেন অনেকেই। নিত্যনতুন চাষাবাদের ফলে অনেকেরই ভাগ্য বদলেছে সহজে। তাই তো চরে নিত্যনতুন আবাদে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি বেড়েছে নারী শ্রমিকের চাহিদাও।

বিশেষ করে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে নারী শ্রমিকরা বেড়িয়ে আসেন কৃষি কাজের সন্ধানে। পায়ে হেঁটেই পদ্মা নদী পেড়িয়ে পদ্মার চরে চকরাজাপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকায় কাজ করেন তারা। আবার দিনভর কাজ শেষে দুপুর পর পায়ে হেঁটেই বাড়ি ফিরেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) বাঘা উপজেলার নারায়ণপুর সড়কঘাট এলাকার পদ্মা নদীর ঘাট সরেজমিনে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

এসময় কথা হয় বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের জোতকাদিরপুর গ্রামের নারী শ্রমিক আনেরা বেগমের (৭৫) সাথে। জানা যায়, বয়সের ভারে নুয়ে পড়ে অসুস্থ স্বামী কাজ করতে পারেন না। ছেলেরা বিয়ের পর অন্যত্র সংসার শুরু করায় নিরুপায় বৃদ্ধ দম্পতি।

আনেরা বেগম বলেন, ‘পেট আছে খেতে হবে। প্রতিদিন সকালে পদ্মা নদী পায়ে হেঁটে পার হয়ে পেঁয়াজের পাতা কাটার (আগাছা পরিষ্কার) কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। প্রতিমণ পেঁয়াজের পাতা কাটার কাজের জন্য ৫০ টাকা দেন। সেখানে ৫ মণ পেঁয়াজের পাতা কেটেছি। তাই ২৫০ টাকা রোজগার হয়েছে।’

আরেক নারী শ্রমিক সোনাভান বেগম (৭৫) বলেন, ‘নিয়মিত যাতায়াত করি। কিছুদিন আগেও নৌকায় করে যাতায়াত করতে হতো। এখন নদীতে পানি নেই, তাই পায়ে হেঁটে কাজ করে বাড়ি আসছি।’

সোনাভান বেগম ও আনেরা বেগমের মতো আরও অনেককেই কাজ শেষে বাড়ি ফিরতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে জামেনা বেগম (৫৫), আনোয়ারা বেগম (৫০), রহিমা বেগমের সাথে কথা বলে জানা যায়, পদ্মার চরে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজের আবাদ হচ্ছে। সচরাচর এসব জমিতে পুরুষ শ্রমিকরা পেঁয়াজ তোলার কাজ করেন। আর নারী শ্রমিকরা সেই পেঁয়াজের পাতা কেটে পরিষ্কার করেন। পারিশ্রমিক হিসেবে প্রতি মণ পেঁয়াজের আগাছা পরিষ্কার করে পান ৫০ টাকা।

জানা যায়, বাঘা উপজেলার পদ্মার চরে অবস্থিত চকরাজাপুর ইউনিয়ন। ইউনিয়নের ৮টি চরে প্রায় ১৮ হাজার মানুষের বসবাস। নদীতে পানি থাকায় গত দুই মাস আগেও নৌকা দিয়ে পারাপারই একমাত্র ভরসা ছিল তাদের। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় নদীতে পানি নেই, ফলে পায়ে হেঁটেই পথ চলেন বেশিরভাগ মানুষ।

কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতায় বর্ষা মৌসুমে পানিবন্দী হয়ে যান তারা। একদিকের শত শত একর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া, অন্যদিকে অসময়ের তীব্র নদী ভাঙনে গৃহহীন হয়ে পড়ে অনেক পরিবার। নদী পারাপারে একমাত্র ভরসা নৌকায়ও থেকে যায় শঙ্কা, খরস্রোতা পদ্মা নদী পারাপারে নৌকা ডুবিতে একাধিক সলিল সমাধির ঘটনাও ঘটে প্রতি বছর। তবে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় মরা খালে পরিণত হয়েছে খরস্রোতা পদ্মা।

পদ্মার কালদাসখালী চরের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রতি বছর খরস্রোত পদ্মায় বেশ ক্ষতি করছে। বর্ষা মৌসুমে বন্যাসহ নদী ভাঙনে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আবার শুষ্ক মৌসুমে চরে উর্বর জমি পানির অভাবে চাষাবাদ ব্যাহত হয়। ফলে উভয় সংকটে রয়েছেন চাষীরা।

এ বিষয়ে বাঘার চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ডিএম মনোয়ার হোসেন বাবলু দেওয়ান বলেন, উপজেলার নারায়ণপুর সড়ক ঘাটের খেয়াঘাট থেকে চকরাজাপুরের দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। ২ মাস আগেও হাজার হাজার চরের মানুষ ব্যবসা বাণিজ্যসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে এ খেয়া ঘাট থেকে নৌকাযোগে পদ্মা নদী পার হয়ে যাতায়াত করতেন।

এক সময় প্রমত্ত পদ্মার গর্জনে মাঝি মাল্লারা সাহস পায়নি নৌকা চালাতে। এমনকি জেলেরাও সাহস পায়নি মাছ ধরা নৌকা চালাতে। পদ্মার বিশাল ঢেউ আর ভয়ঙ্কর গর্জনের মুখে নৌকা চলতে সাহস পায়নি। কিন্তু কালের আবর্তনে সেই প্রমত্ত পদ্মা এখন শুকিয়ে শীর্ণ একটি খালে পরিণত হয়েছে। মাত্র ২ মাসের ব্যবধানে পদ্মার বুক জুড়ে শুকিয়ে জেগে উঠেছে ধুধু বালুচর ও ফসলের মাঠ। ফলে এলাকাবাসী পদ্মার চর পায়ে হেঁটে পারাপার হচ্ছেন বলেও জানান এই জনপ্রতিনিধি।

 

 

আরপি/এসআর-০২


বিষয়: নারী কৃষি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top